আমরা স্বার্থপরের মতো নিজেকেই ভালোবাসি

গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে
গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে

গাছে পানি দিচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, অনেকটা সময় তো ঘরে ছিলাম। এভাবে আর কত দিন যে কাটাতে হবে! পরিস্থিতি সামনে কী আকার ধারণ করবে, ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছি না।

এত দিন করোনা নিয়ে সবকিছু ভুলে ছিলাম। যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হলো, সেদিন থেকে বাড়ি পরিষ্কার করা শুরু করলাম। পুরো বাসা একদম ঝকঝকে–তকতকে করে ফেলেছি। করোনাকে ভুলে থাকতে নিজের কাজে ব্যস্ত রেখেছি। ভয়াবহ পরিস্থিতি মনে করতে চাইনি। ঘরবাড়িও এত দিনে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে ফেলেছি। বাসা গোছানোর সব কাজও শেষ। কিছুদিন ধরে করোনা মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে। ভাবার সময় পাচ্ছি।

চারদিকের খবর শুনে মন খারাপ হয়। ভাবি, এটার শেষ কোথায়। যদি বুঝতাম ৩-৬ মাস এভাবে থাকতে হবে, তাহলেও আশ্বস্ত হতাম। এটাও ভাবি, আমি হয়তো অনেক ভালো আছি। আমরা ভালো আছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ কি ভালো আছে? দিন আনে দিন খাওয়া মানুষের কথা ভেবে কষ্টটা পাই বেশি। অনেকেরই আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ভাবলেই মাথাটা নষ্ট হয়ে যায়।

করোনা নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলছেন। বলছেন ভাইরাসের যুদ্ধ। যেটাই হোক, যেভাবেই হোক—প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আমরা মানুষেরা প্রকৃতিকে নষ্ট করে ফেলেছি। সারা পৃথিবীতে দূষণ করেছি—দায়ী আমরা মানুষেরা। আমরা স্বার্থপরের মতো নিজেকেই ভালোবাসি। ফুল, পাখি, গাছপালা, প্রকৃতি, পশুসহ অন্যদের কথা ভাবতে চাই না। শুধু মানুষের কারণে অনেক প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বায়ুবাহিত অনেক রোগ বাড়ছে।

গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে
গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে

অথচ পৃথিবী লকডাউন পরিস্থিতিতে চলে যাওয়ার পর বাতাসে কার্বন নিঃসরণ কমে গেছে। পশুপাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি হাসছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হচ্ছে, এত বেশি পাপ করেছি, তাই পৃথিবী নিজের মতো রিসেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীটা ভার হয়ে গেছে। আমরা গভীরভাবে তা ভাবিনি।

প্রভাব, প্রতিপত্তি, দাপট এগুলো আসলে কিছু না—করোনা তা ভাবতে শেখাচ্ছে। এটা চোখে আঙুল দিয়ে শেখাচ্ছে, মানুষের যত প্রয়োজন বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে—মানুষ তত বেশি অসচেতন হচ্ছে, সবকিছুর সঙ্গে আপস করছে। করোনায় জীবনকে যেভাবে দেখছি, অন্য সময় এভাবে কখনো দেখিনি, ভাবিনি, হয়তো ভাবতামও না। শুধু জীবন না, জীবনে জড়িয়ে অনেক ক্ষুদ্র বিষয়কেও বড় করে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাঁচার জন্য আমরা সবাই দৌড়াতাম, সেই দৌড় এখন অনেকটাই থেমে গেছে।

বোন সুচন্দা, ববিতার সঙ্গে গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে
বোন সুচন্দা, ববিতার সঙ্গে গুলশান আরা চম্পা। ছবি: ফেসবুক থেকে

একটা কথা বলতে চাই, এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিজেদেরই নিজেদের সহযোগিতা করতে হবে। করোনা আক্রান্ত হলে কেউ কাউকে বাঁচাতে পারবে না। আমাদের নিজেদেরই সচেতনতা বাড়াতে হবে। নতুন রোগী যাতে না বাড়ে, এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বেশি বেশি পরীক্ষা করতে হবে। কোথায়, কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, সেটাও চিহ্নিত করতে হবে। ওসব এলাকায় সচেতনতার জন্য বেশি বেশি প্রচারণা চালাতে হবে।

এই সংকটের সময়ে যার যতটা সামর্থ্য আছে, সেভাবে সহযোগিতা করতে হবে। সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। ঘরে থেকে এই ভাইরাস থেকে নিজেকে দূরে রাখো। এর বিকল্প তো আমরা কিছুই জানি না। সচেতন মানুষ হিসেবে যেটা বুঝতে পারছি, নিয়ম যাঁরা মানছেন, তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন না। ভাবতে পারিনি, জীবিত অবস্থায় এমন কিছু দেখব। আরও ভাবতে ভয় লাগছে, আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কী অপেক্ষা করছে। আমরা তো পৃথিবীতে অনেক ভালোভাবে ছিলাম। কল্পনাও করতে পারিনি এমন দিন দেখতে হবে! এটা যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো বটেই। মানুষের সঙ্গে এটা অদৃশ্য শক্তির যুদ্ধ, যা খালি চোখে কেউ দেখতে পারছি না। মানবিকতার শিক্ষাও দিয়ে যাচ্ছে।