এই সময়ে সিগারেটের অভ্যাসটা ত্যাগ করেছি

শুটিং নেই বলে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত
শুটিং নেই বলে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত
>করোনাভাইরাসের কারণে মাসখানেক ঘরবন্দী অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো। অথচ গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত ছিল তাঁর শুটিং শিডিউল। এমন ব্যস্ত তারকার জীবনেও করোনা এনে দিয়েছে স্থবিরতা। কীভাবে কাটছে তাঁর সময়? তা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

গত কয়েক বছর শুটিংয়ের জন্য ছোটাছুটি করেছেন। এখন ঘরে থাকতে কেমন লাগছে?
কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরব জানি না। তবে এই করোনা পরিস্থিতি আমাকে পরিবারের মানুষ বানিয়ে দিয়েছে। কত ব্যস্ত ছিলাম। কেবল নিজেকে নিয়েই ছুটেছি। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কারও খোঁজ নেওয়ার সময় পাইনি। এখন সবই হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। অনেক কিছুই করছি, যা জীবনে কখনো করা হয়নি। 


করোনাভাইরাসের এ মহামারি নিয়ে আপনার কী মনে হচ্ছে?
মানুষ আতঙ্কিত হয়ে অনেক কথা বলছে। কেউ বলছে বয়োলজিক্যাল অস্ত্র। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, মানুষ যদি এই ভাইরাস বানাত, তাহলে অ্যান্টিভাইরাসও বানিয়ে রাখত। মানুষ যখন কিছু তৈরি করবে, সেটার প্রতিকারও থাকবে। ভাইরাস মানুষ বানালে, তা মানুষের কথার বাইরে যাবে না বলেও আমার বিশ্বাস। বিশ্বের অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস থেকে মুক্তির কোনো উপায় বের করতে পারেননি। এই ভাইরাস একেক সময় একেক রূপ নিচ্ছে। একেকভাবে আক্রমণ করছে। তাই আমি মনে করি, এটা মানুষের তৈরি হতেই পারে না। তা–ই যদি হতো, তাহলে এত দিনে এর ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যেত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ যেমন খুব অসহায়, এই ভাইরাসের সংক্রমণেও তেমন অবস্থা হয়েছে। আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অনেক কিছুই তো করেছি, এটা হয়তো তার একটা প্রতিশোধ।

অভিনেতা আফরান নিশো। ছবি:সংগৃহীত
অভিনেতা আফরান নিশো। ছবি:সংগৃহীত

আমাদের তাহলে কী করা উচিত?
আমি তো মনে করছি, করোনাভাইরাস মানুষের মধ্যে বোধ জাগ্রত করেছে। এখন সবার উপলব্ধি হচ্ছে, আমাদের সবকিছুই আছে, আবার কিছুই নেই। দিন শেষে আসলে আমাদের হাতে কিছুই নেই। মানুষ নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবলেও সে যে আসলে তা না, করোনাভাইরাস নতুন করে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, প্রকৃতির অন্য সন্তানদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এ রকম আরও নানা বার্তা দিচ্ছে এ করোনাভাইরাস।

সেই বার্তাগুলো কী?
আমরা হিপোক্রেট, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, এটাও করোনা দেখিয়ে দিয়েছে। করোনার আগে আমাদের হাতে যে তথ্য ছিল, তাতে বাংলাদেশে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যেত। কেউ না খেয়ে, কেউ ধর্ষিত হয়ে, কেউ সড়ক দুর্ঘটনায়। কিন্তু আমরা কি কখনো এসব মৃত্যু নিয়ে ভেবেছিলাম? কিন্তু আজ করোনায় ১০ জন মারা গেলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। হাহাকার করতে থাকি। আগে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পথে পড়ে থাকলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম! কারও খোঁজ নিতাম না। এখন পরিবারের পাশাপাশি ড্রাইভার, দারোয়ানসহ সব পরিচিত, শুভাকাঙ্ক্ষীর খোঁজও নিচ্ছি। আমরা নিজেরা এতটা আত্মকেন্দ্রিক, এই সময়টায়ও তাই অনুভব করছি।

মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিছেন নিশো। ছবি: সংগৃহীত
মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিছেন নিশো। ছবি: সংগৃহীত

করোনার কারণে তৈরি হওয়া এই মানবিক শিক্ষাটা কি থাকবে?
নতুন পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকলে একে অপরকে ভালোবাসতে শিখবে। নতুনভাবে ভাববে সবাই। হয়তো রাস্তায় ময়লা ফেলব না, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলবে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। হয়তোবা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ অন্যদের ওপর ঝুলুমও কম করবে। প্রকৃতিকে তার মতো করে চলতে দেবে মানুষ। গলা টিপে মেরে ফেলার যে প্রবণতা ছিল, সেটা থাকবে না। একটু হলেও বদলাবে।

এই যে মাসখানেকের বেশি বাড়িতে আছেন, নিজের কোন অভ্যাসটা বদলাতে পেরেছেন?
আমি অনেকবার সিগারেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। এই সময়টায় এসে সেটা পেরেছি। এক মাসের বেশি সময়ে একটা সিগারেটও ধরিনি। এই অভ্যাসটা ত্যাগ করেছি।