সুদিন ফিরলে নতুন করে শিল্পীদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবব

অনলাইন লাইভে করোনাকালের বিপর্যয়ে কেমন আছেন টেলিভিশন নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলীরা শীর্ষক এক আলোচনা করেন টেলিভিশনের ছয় সংগঠনের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন লাইভে করোনাকালের বিপর্যয়ে কেমন আছেন টেলিভিশন নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলীরা শীর্ষক এক আলোচনা করেন টেলিভিশনের ছয় সংগঠনের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

করোনায় সবকিছু যখন স্তবির, তখন রপ্তানিমুখী শিল্পকে ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। অভিনয়শিল্পীরাও কি ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ শুরু করতে পারে? এ রকম প্রস্তাবে নিজেদের সমালোচনা করে 'স্বার্থপর' আখ্যায়িত করেছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি, অভিনেতা ও নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু। কিন্তু অভিনয়শিল্পীরা সত্যিই স্বার্থপর?

মামুনুর রশীদ
মামুনুর রশীদ

গতকাল শুক্রবার রাতে অনলাইন লাইভে 'করোনাকালের বিপর্যয়ে কেমন আছেন টেলিভিশন নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলীরা' শীর্ষক এক আলোচনা করেন টেলিভিশনের ছয় সংগঠনের সভাপতি। সেখানে সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, 'দর্শকদের কাছে আমাদের যে সম্মান ছিল, সেটা কমতে কমতে আমরা প্রায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছি।'


সামনে ঈদ। টেলিভিশনের জন্য স্বল্প পরিসরে শুটিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকেই। এমন প্রস্তাবের বাস্তবতা প্রসঙ্গে লাভলু বলেন, 'আমরা স্বার্থপর মানুষ। দেশের স্বার্থে সব যখন লকডাউন করতে হয়েছে, তখন আমরা স্বার্থপরের মতো শুটিং করার কথা ভাবছি।' সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা যখন চুক্তি সই, শুটিংয়ের সময় নির্ধারণসহ নানা প্রস্তাব করেছিলাম, বহু শিল্পী আমাদের সেসব প্রস্তাব মানেনি। এটা আমাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। আমাদের মধ্যে এখনও অনেক বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এই ব্যর্থতা ও বিচ্ছিন্নতার জন্য আমাদের ভুগতে হবে। সরকার নির্ধারিত বন্ধের সময় শুটিং বন্ধ রাখতে হবে। কেউ শুটিং করলেও সাংগঠনিকভাবে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। কারণ কোনো অঘটন ঘটলে সেই দায় আমাদের ওপর এসে পড়বে।'

শহীদুজ্জামান সেলিম
শহীদুজ্জামান সেলিম

প্রথমবারের মতো অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠান করল অভিনয়শিল্পী সংঘ। অ্যাক্টরস ইকুইটির ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েব সাইটে 'করোনাকালের বিপর্যয়ে কেমন আছেন টেলিভিশন নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলীরা' বিষয়টি নিয়ে করা হয়। আলোচনা করেন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অরগানাইজেশনের (এফটিপিও) চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ, অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু, প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (টেলিপ্যাব) সভাপতি ইরেশ যাকের ও টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা। লাইভ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম।

সালাহউদ্দিন লাভলু
সালাহউদ্দিন লাভলু

মাসুম রেজা বলেন, 'আমাদের সংকট এই করোনাকালে নয়, শুরু হয়েছে আরও আগে। এখন আমাদের হাতে একদম কাজ নেই। যাদের দৈনিক আয়ের ওপর সংসার চলত, আমরাও বেশিরভাগ সে রকম অবস্থায় চলে গেছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, আমরা যে কাজটি করি একে আমরা বলি শিল্প। কিন্তু এটি বাণিজ্যিক শিল্পের অংশ নয়। ফলে সরকার যে ছয়টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেগুলোর মধ্যে আমরা নেই। অথচ সংকট আমাদেরও আছে। অন্য পেশাজীবীদের মতো আমরাও বড় সংকটে পড়েছি। যদি আমাদের সুযোগ দেওয়া হতো যে, বাড়িতে কিছু প্রযোজনা নির্মাণে আমরা কাজ করতে পারতাম। কেননা আমরা সবাই ঈদের অনুষ্ঠানের দিকেই তাকিয়ে থাকি। আমরা কেউ এই ঈদে কিছু করতে পারব না। টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে গেলে তবু কিছু সম্মানী পেতাম। এখন বাড়িতে লাইভ করায় সেটাও পাই না।'

ইরেশ যাকের
ইরেশ যাকের

এই সংকটে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন কী ভূমিকা রাখতে পারে? এ প্রসঙ্গে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, 'সুদিন যদি ফেরে, সেদিন থেকে আমরা নতুন করে শিল্পীদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবব। অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করব। তাঁদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করব। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করব, যাতে আমাদের আয়কর মওকুফ করা হয়। আমরা টেলিভিশকে বলতে পারি যাতে কম সুদে সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা অনুষ্ঠান তৈরি করে, তাতে অভিনয়শিল্পীরা বাঁচবে।'

মাসুম রেজা
মাসুম রেজা

মামুনুর রশীদ বলেন, 'যখন সামনে কোনো সংকট আসে, আমরা সক্রিয় হই। সংকট চলে গেলে আমরা আবারও নিস্ক্রিয় হয়ে যাই। আমরা বহু বছর ধরে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিনয়শিল্পীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করার কথা বলে আসছি। সেটা এখনও করা যায়নি।'

আহসান হাবীব নাসিম
আহসান হাবীব নাসিম

সালাহউদ্দিন লাভলু প্রস্তাব করেন, উদ্দীপনামূলক কিছু ভিডিও আমরা ঘরে বসেই নির্মাণ করতে পারি। তার এ প্রস্তাবের সমর্থন করে ইরেশ যাকের বলেন, 'ঘরে বসে যদি কনটেন্ট তৈরি করা যায়, সেটাও বিক্রি করা সম্ভব। আমরা সৃজনশীল মানুষ। আমাদের ঘরে বসে তৈরি করা যায় এ রকম কিছু কনটেন্টের কথা ভাবতে হবে। ভালো চিত্রনাট্য হলে সেলিম ভাই বা মামুন ভাইয়ের কণ্ঠ ও অ্যানিমেশন দিয়েও আমরা ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে পারি।'


অভিনয়শিল্পীদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল ও কল্যাণের ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল অভিনয়শিল্পী সংঘ ও টেলিভিশনের জন্য কাজ করা শিল্পী-কলাকুশলীদের এ সংগঠনগুলো। ফলে তাদের কেবল স্বার্থপর মনে করলেই চলবে না। দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সময় নানা অবদান রেখে আসছেন তারাও। এখন এ শিল্পীদের নিয়ে সরকারের ভাবনার সময় এসেছে।