এত খাবার যে আশপাশের অভাবিদের বিলাচ্ছেন আকবর

গায়ক আকবর। ছবি: সংগৃহীত
গায়ক আকবর। ছবি: সংগৃহীত

‘চুলা জ্বলছে না গায়ক আকবরের বাড়িতে’। প্রথম আলো অনলাইনে এ খবর প্রকাশের পর অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কেউ দিয়েছেন টাকা, কেউ দিয়েছেন খাবার। এত খাবার যে রীতিমতো ভরে গেছে গায়ক আকবরের বাসা। এত খাবার এসেছে যে দুই মাসের খাবার রেখে বাকিটা আশপাশের অভাবি মানুষকে দিয়ে দিচ্ছেন আকবর।

গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় গায়ক আকবরের। করোনায় সবকিছু স্থবির হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। আজ প্রথম আলোর খবর পড়ে ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বিকাশে তাঁকে ১০ হাজার টাকা পাঠান। এ ছাড়া মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মোরাদ আলী ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল পৌঁছে দিয়েছেন।

আকবর আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ যে আমাকে এত ভালোবাসে, এটা দেখে আমি ধন্য। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’ গায়ক আকবর জানান, বহু মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। মানুষ তাঁর বাড়িতে এত খাবার দিয়ে গেছে, যা আগামী ছয় মাসেও শেষ হবে না। তিনি মাত্র দুই মাসের খাবার রেখে বাকিটা আশপাশের অভাবি মানুষকে দিয়ে দিচ্ছেন। আকবর বলেন, ‘আশা করি দুই মাস পর আমি আবার কাজ পাব। শুধু শুধু এত খাবার ঘরে রাখতে চাই না। কারণ, আমার আশপাশেও অনেক অভাবি মানুষ আছে।’ প্রথম আলোর খবরের প্রতিক্রিয়ায় ভীষণ আনন্দিত আকবর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রথম আলো আগেও খবর প্রকাশ করে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের জন্য আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি এ সংবাদপত্রের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

পরিবার নিয়ে আকবর থাকেন ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বরে। লকডাউনের পর থেকে বাসার কাছের দোকান থেকে বাকি-বকেয়া করে সংসার চলছিল গায়ক আকবরের। বাকি বেশি হয়ে যাওয়ায় দোকানদারও জিনিসপত্র দিচ্ছিলেন না। পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় মাঝেমধ্যে চুলাও জ্বলে না বাড়িতে। শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে কথাগুলো বলেছিলেন কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ গানটি কাভার করে আলোচনায় আসা গায়ক আকবর।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আকবরের বাসায় মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মোরাদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আকবরের বাসায় মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মোরাদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের শুরুর দিকে অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হয় আকবরকে। তাঁর অসুস্থতার খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁর পরিবারকে ডেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন। সেই টাকার মুনাফা হিসেবে তিন মাস পরপর ৪৯ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন আকবর। সেই টাকার একটি অংশে (প্রতি মাসে ১৬ হাজার ৩০০ টাকায়) প্রতি মাসের খরচ চলত।

কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ নতুন করে গেয়েছিলেন আকবর আলী গাজী। সবার কাছে তিনি আকবর নামে পরিচিত। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে এই গান তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এরপর ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটি দেশ-বিদেশের দর্শক-শ্রোতার কাছে তাঁকে পরিচিত করে তোলে।

গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে। গান শেখা হয়নি। তবে আকবরের ভরাট কণ্ঠের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন তিনি। ২০০৩ সালে যশোর এমএম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। বাগেরহাটের এক ব্যক্তি আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছর ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান।