সব সময় একটা গ্রুপ থাকে, যারা সবকিছুতেই খারাপ বলে

নিজের প্রিয় দুটি জিনিস নিলামে তুলছেন তাহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
নিজের প্রিয় দুটি জিনিস নিলামে তুলছেন তাহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
>করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত, অসহায় ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের সাহায্যের তাগিদে তহবিল সংগ্রহের জন্য নিলামে তোলা হচ্ছে সংগীতশিল্পী তাহসানের মূল্যবান দুটি জিনিস। আজ সোমবার সেগুলো নিলামে ওঠার কথা রয়েছে। নিলাম থেকে পাওয়া টাকা সরাসরি চলে যাবে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ফাউন্ডেশনে। গতকাল রোববার বিকেলে কথা হয় তাহসানের সঙ্গে।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তহবিল সংগ্রহে কী কী জিনিস নিলামে তুলছেন?

ভাবলাম, আমার কাছে এমন কী জিনিস আছে, যা আমি হারাতে চাই না। হারালে মনে হবে কিছু সেক্রিফাইস করছি। দেখলাম, গিটার বা টি-শার্টের চেয়ে আমার প্রথম অ্যালবাম ‘কথোপকথন’–এর ডেট টেপ ও প্রথম অ্যালবামের গান লেখার খাতাটা নিলামে তোলা যেতে পারে। প্রথম অ্যালবামের এসব স্মৃতি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। শুধু দেশের মানুষের কথা ভেবে আজ সেসব নিলামে তুলছি। এই অ্যালবামের কারণে মানুষ আমাকে চিনেছে, ভালোবাসা দিয়েছে। এখনো অ্যালবামের ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’ গানটি যখন গাই, মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’ গানটি কোন স্টুডিওতে গেয়েছিলেন আর লিখেছিলেন?

সেগুনবাগিচার মিউজিকম্যান স্টুডিওতে লিখেছি। ওখানেই কণ্ঠ দিয়েছি। বেশ কাটাছেঁড়া আছে গানটির লেখার খাতায়।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন তাহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন তাহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে

যিনি নিলাম জিতবেন, তিনি আর কী পাবেন?

করোনার পর আমার বাড়িতে দাওয়াত পাবেন। নিলামে বিজয়ী ব্যক্তি তাঁর তিন বন্ধুকে নিয়ে আমার বাসায় একবেলা রাতের খাবার খাবেন। নিজে পিয়ানো বাজিয়ে প্রাইভেট কনসার্টে গান শোনাব তাঁদের। মনে হচ্ছিল, আমরা যেহেতু ভালো কিছু করতে চাই, এমন কিছু অফার করা উচিত, যেটা কারও কাছে স্মরণীয় হবে। আমার যেহেতু নিজস্ব কোনো সংস্থা নেই, তাই ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। নিলাম থেকে পাওয়া টাকা সরাসরি তাদের তহবিলে যাবে।

করোনাভাইরাস নিয়ে অনেকের অনেক রকম উপলব্ধি। আপনার এ নিয়ে কী উপলব্ধি?

আমাদের ভাবনা খুব ভিন্ন কিছু না। মানবসভ্যতার ইতিহাস যদি দেখি, বিগত এক শ বছরে পৃথিবীতে এত অনাচার করেছি। এর আগে অনেক সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে। তবে আমাদের এখন সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। এই মুহূর্ত থেকে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে অনেক অনেক কথা বলতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এসব নিয়ে অনেক বেশি সচেতন থাকলেও আমরা গভীরভাবে ভাবি না। আমার মনে হয়, এত দিন আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ বুঝত, এসব পাশ্চাত্যের সমস্যা। এবার হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারবে, এটা আমাদেরও সমস্যা। পৃথিবীটাকে আমাদের সুস্থ রাখতে হবে, তাহলে পৃথিবী আমাদের সুস্থ রাখবে। 

করোনার এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে অনেক ধরনের সমালোচনায় মুখর। এখন আমাদের জীবনাচরণ কেমন হওয়া উচিত?

আমাদের জীবদ্দশায় সারা পৃথিবীতে এমন দুর্যোগের মুখোমুখি কম হয়েছি। পুরো পৃথিবী আজ ক্ষতিগ্রস্ত। দুস্থরা যেমন চিন্তায় আছে, বিত্তবানেরাও আছে গভীর চিন্তায়। এই সময়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগোতে হবে। করোনা নিয়ে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো মানুষই সঠিক উত্তরটা জানে না।

শিগগির করোনার এই দুর্যোগ যাবে না। আমরা এমনিতে একে অপরকে দোষারোপ করতে খুব তৎপর থাকি। অথচ এখন এমন একটা সময়, যখন সবাইকে এক ছাতার নিচে থাকতে হবে। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারের কথা শুনলে বুঝতে পারি, সবাই কঠিন সময় পার করছেন। আমাদেরও তা বুঝতে হবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন কাজ দেশ পরিচালনা করা। যিনি এই কঠিন কাজ করছেন, তাঁর ওপর আস্থা রেখে কাজ করে যেতে হবে যার যার জায়গা থেকে। সরকারি–বেসরকারি এবং আমরা যাঁরা বিনোদন অঙ্গনের আছি, তাঁদেরও অনেক দায়িত্ব। আমাদের কথায় অনেক জোর আছে, তাই আমাদেরও সঠিক কথাগুলো প্রতিনিয়ত বলে যেতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, বিভেদ সৃষ্টি না করে কথা কম বলি, তাহলে সুন্দরভাবে কঠিন সময়টা পার করতে পারব। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কী হচ্ছে বলে ওখানকার মানুষকে আলাদা করে দেখব না। দেশের সবাই একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মানসিক অবস্থাও সবার এক না। সবাইকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত অন্যের দোষ খুঁজে ঝগড়া না করে, নিজে কী করছি বা কী করতে পারি, তা নিয়ে ভাবা উচিত, যাতে আরেকজন ভালো থাকতে পারে।

দেশের সংগীতের ভবিষ্যৎ কী দেখছেন?

আমাদের অঙ্গনটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লকডাউন একটা সময় ওঠে যাবে। মানুষ যার যার কাজে ফিরবে, কিন্তু আমাদের কনসার্ট শিগগিরই শুরু হবে না। মানুষকে বিনোদন দিয়ে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁরা এখনো খারাপ অবস্থায় আছেন, সামনেও থাকবেন। আমাদের এই কঠিন সময়েও বিনা মূল্যে বিনোদন দিয়ে যেতে হচ্ছে। ঘরে থেকে গান চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ আমরা আমাদের কষ্টের কথা হয়তো বলতেও পারব না। তবে আমরা যাঁরা অনেকদিন ধরে এই অঙ্গনে আছি, তাঁদের কেউ কেউ আর্থিকভাবে সফল, সচ্ছলতা আছে বলে চিন্তা করতে হবে না, কিন্তু বেশির ভাগের অবস্থা ভালো না। আমাদের সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আমরা যেন মিউজিশিয়ানদের পাশে দাঁড়াই। অনেকের কারেন্ট পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে দিন চলতে হয়। করোনার এই সময়ে কথা-গানে ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে শিল্পীরা যে অসহায় ও অসচ্ছল মানুষের পাশে আছেন, মানুষ যেন ভবিষ্যতে শিল্পীদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়।

এদিকে দুর্যোগের এই সময়ে কোন শিল্পী কত ত্রাণ দিলেন, তা নিয়ে নানা কথা হয়। কেউ কেউ বলেন, বাইরের দেশের অমুক শিল্পী তো এক শ কোটি, দুই শ কোটি কিংবা পাঁচ শ কোটি টাকা দিলেন; অথচ আমাদের শিল্পীরা কী করলেন? এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আমরা সবকিছুতে দুই ভাগ হয়ে যাই। মেরুকরণ করে ফেলি। আমি কেউই সব বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকি না। কেউ দেখিয়ে দান করবে, কেউ না দেখিয়েও করবে। এসব নিয়ে কথা বলার সময় এখন না। আমি মনে করি, এমন ক্রান্তিকালে আমরা সবার পাশে থাকলে সমস্যার উত্তরণ ঘটবে। আমি এ–ও বলতে চাই, যাঁরা দেশের তারকাদের সঙ্গে বিদেশের তারকাদের তুলনা করেন তাঁরা কী জানেন, তাঁদের বার্ষিক আয় কত। তাঁরা কত বাজেটের সব নাটক, সিনেমা ও গানের প্রোডাকশনে কাজ করেন! এসবের খোঁজ না নিয়ে আমরা কথা বলে ফেলি। দেশের তারকাদের সঙ্গে বিদেশের তারকাদের সঙ্গে মেলাবেন না। ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় এটা বলতে পারি, একটা গ্রুপ থাকে, যারা সবকিছুতেই খারাপ বলবে। এদের কথা ভেবে তো থেমে থাকব না। আমি আমার কাজটা করে যাব।

শিল্পী তাহসান খান। ছবি: ফেসবুক থেকে
শিল্পী তাহসান খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

এবার একেবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। হঠাৎ করে আরিফিন শুভ আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় ভক্তরা নড়েচড়ে বসেছেন। অবাক হয়েছেন। ঘটনাটা কী?

একদম মজার ছলে আরিফিন শুভ এটা করেছে। আমরা ভালো বন্ধু। ও আমার ফ্যান, আমিও ওর ফ্যান। আমরা একটু মজা করলাম। আমরা মাঝেমধ্যে সময় পেলে আড্ডা দিই, কিন্তু করোনার কারণে অনেক দিন আমাদের কোনো আড্ডাও হচ্ছে না।

আপনি নাকি আরিফিন শুভকে বউ খুঁজে দিতে বলেছেন?

আরে, বউ দেখার কথাটা দুষ্টামি করে বলেছিলাম।

গানের মানুষ, গানের খবর বলুন।

ভেবেছিলাম একটা অ্যালবামের কাজ করব। তিনটা গানের কাজ শেষও করেছিলাম, কিন্তু এই অবস্থায় গানেও খুব একটা মন বসাতে পারছি না।

কী করে সময় কাটাচ্ছেন?

এখন আসলে বই পড়ছি বেশি।