'অহন কেউ আহেও না, পাইও না'

কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

লোকশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। শরীর ভালো থাকলে গাইতে ছুটে যান। কিছু আয় হয়, তবে তা–ও নিয়মিত না। লোকগানের এই শিল্পীর সম্বল কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১০ হাজার টাকা। এই টাকার সঙ্গে গান গেয়ে পাওয়া টাকায় বড় মেয়ে পুষ্প বেগম ও তিন নাতিকে নিয়ে কোনো রকমে চলে যেত শিল্পীর। করোনার কারণে সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকেও দুই মাস কোনো টাকা তুলতে পারেননি। করোনার এই সময়ে তাই এদিক–ওদিক হাত পেতে চলতে হচ্ছে তাঁকে। প্রথম আলোকে এমনটাই জানালেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া।

দুস্থ শিল্পী হিসেবে কাঙ্গালিনী সুফিয়া ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেতেন ৫ হাজার টাকা। ২০১৪ সাল থেকে সে অঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে প্রতি মাসে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। এই টাকার সঙ্গে গান গেয়ে আয় করা টাকায় চলে মেয়ে ও নাতিদের নিয়ে সংসার।
‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের এই শিল্পী জানান, মার্চে দোলপূর্ণিমার সময় কুষ্টিয়ার লালনের আখড়ায় যান। সেখান থেকে শহরের জেলখানা মোড়ের এরশাদ নগরের বাড়িতে যান। এর মধ্যে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তাই আসতে পারেননি সাভারের বাড়িতে।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

কেমন আছেন, কীভাবে দিন কাটছে, এমন প্রশ্নে কাঙ্গালিনী সুফিয়া বললেন, ‘আর কেমন থাকি, করোনাভাইরাসে মইরে গেলাম। ঘর থেইকা বাইর হবার পারি নাই। গানবাজনা সব বন্ধ। দুরবস্থার মইধ্যে আছি। খুবই দুরবস্থা। এই কদিন যা–ও দুই–তিন জায়গা থেকে সাহাইয্য আইছিল, চাইল–ডাইল পাইছিলাম, এহন আর পাই না। কয়েকজন কিছু টাকা দিছিল। ডিসি সাহেব খাবার পাঠাইছিলেন, তা–ও ম্যালাদিন হইয়া গেছে। একজন ডাক্তার আমারে দেখতে আইসা কিছু টাকা দিয়া গেছেন। অহন কেউ আহেও না, পাইও না। টেনেটুনে, এদিক–ওদিক চেয়ে সবাইরে নিয়া চলতে হইতেছে।’
কাঙ্গালিনী সুফিয়া হার্ট, কিডনি ও মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি মাসে তাঁর ১৫ হাজার টাকার মতো ওষুধ লাগে। দুই মাস ধরে কোনো আয় নেই, তাই ওষুধ খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছেন। অর্ধেক ওষুধ খাচ্ছেন বলে জানালেন।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার জন্ম ১৯৬১ সালে। গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ১৪ বছর বয়সে মানুষের নজর কেড়েছিলেন তিনি। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্তি পান। তাঁর গানের গুরু ছিলেন গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী।