আজ রাতে নিলামে উঠছে হুমায়ুন ফরীদির চশমা

আজ রাতে নিলামে উঠছে হুমায়ুন ফরীদির চশমা। ছবি: সংগৃহীত
আজ রাতে নিলামে উঠছে হুমায়ুন ফরীদির চশমা। ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো সংকটেই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দাঁড়ান মানুষের পাশে। করোনাকালের ক্রান্তিতে আবারও প্রতীয়মান হলো সেই মহানুভবতা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সামিল হচ্ছেন এই কাফেলায়। সব সময়ের মতো এগিয়ে আসছেন নানা ক্ষেত্রের তারকারাও। তাঁদের উপস্থিতি কখনো ভার্চুয়াল, কখনো শরীরী আবার কখনোবা অশরীরী। বর্তমানের তারকারা যেমন উদাহরণ সৃষ্টি করছেন, তেমনি প্রয়াত তারকারা প্রাণিত করছেন তাঁদের অতীতের কর্মময়তায়।

এই যেমন ধরা যাক হুমায়ুন ফরীদির কথা। বাংলাদেশের সব্যসাচী অভিনয়ব্যক্তিত্ব। অনবদ্য অভিনয়শৈলী দিয়ে মাতিয়েছেন দর্শক। দৃপ্ত পদচারণ ছিল তাঁর মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে দেশের এই সংকটকালে কোনো সন্দেহ নেই উপস্থিতি হয়ে যেতেন। পাশে দাঁড়াতেন অসহায় মানুষের। কিন্তু প্রয়াত এই শিল্পী উপস্থিত থাকছেন একটু অন্যভাবে। দাঁড়াচ্ছেন অসহায় মানুষের পাশে।

তাঁর রেখে যাওয়া একটি প্রিয় সামগ্রী, অর্থাৎ তাঁর ব্যবহার করা চশমা তাঁর পরিবার নিলামের জন্য দিয়েছেন। আর অকশান ফর অ্যাকশনের মাধ্যমে আজ রাত ১০টায় এটা নিলামে উঠছে।

এ নিয়ে কথা হচ্ছিল হুমায়ুন ফরীদির পরিবারের সঙ্গে। তাঁর মেয়ে শারারাত ইসলাম, যিনি দেবযানী নামেই বিশেষত পরিচিত, বলেছেন, এটা একটা উপলক্ষও বটে; কারণ, তাঁর ব্যবহার করা একটি সামগ্রী দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির স্মৃতি সজীব করার প্রয়াস পাওয়া যাচ্ছে। আর এভাবে একটা ভালো উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করাও হচ্ছে।

এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি দেবযানী। বরং আরও যোগ করেছেন, ‘বাবা এই চশমা নিয়মিত পরেছেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর স্পর্শ। কোনো সন্দেহ নেই, তাঁর যেকোনো জিনিসই আমাদের কাছে প্রিয়। কারণ, তাঁর ব্যবহার করা প্রতিটি জিনিসের মধ্যে দিয়েই তো আমরা প্রতিমুহূর্তেই তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি। এ জন্য চশমাটি যিনি কিনবেন, তিনি যত্নে রাখবেন, এটুকুই আমাদের চাওয়া।’

আজকের নিলামে তাঁর মেয়ে দেবযানী ও জামাই কাজী সাবির উপস্থিত থাকবেন। আর নিশ্চয়ই হুমায়ুন ফরীদির অদৃশ্য উপস্থিতিও থাকবে বলে মনে করেন অকশান ফর অ্যাকশনের অন্যতম উদ্যোক্তা প্রীত রেজা। তিনি আরও জানান হুমায়ুন ফরীদির একাধিক সহঅভিনেতা আজ রাতে নিলাম চলাকালে উপস্থিত থাকবেন। স্মৃতিচারণা করবেন তাঁদের প্রিয় বন্ধু বা অগ্রজ সম্পর্কে।

হুমায়ুন ফরীদি। ছবি: সংগৃহীত
হুমায়ুন ফরীদি। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, অকশন ফর অ্যাকশন নামের নিলামের এই নতুন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে গেছে। এই কল্যাণকর আয়োজনের নেপথ্যে আছেন ফটোসাংবাদিক, পরিচালক ও উপস্থাপক প্রীত রেজা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তারকা আরিফ আর হোসেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ব্যবহৃত সেই স্মরণীয় ব্যাট দিয়েই শুরু হয় নিলাম। এ ক্ষেত্রে আরও ছিল সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। অকশন ফর অ্যাকশনের এই উদ্যোগের সঙ্গে আরও রয়েছেন সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা চিশতী ইকবাল।

সাকিবের ব্যাট ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। পুরো অর্থ যায় সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনে। এরপর তাহসানের সঙ্গে পিয়ানো সেশনের দাম ওঠে সাড়ে সাত লাখ টাকা। আসলে এটা কোনো অর্থের প্রতিযোগিতা নয়। বরং মূল বিষয় হলো ভালো কাজে অবদান রাখা। সংকটে মানুষের পাশে থাকা।

এই নিলাম যেসব দর্শক সরাসরি দেখেন, তাঁরাও অবদান রাখতে পারেন তাঁদের নিয়মিত খরচের একটা অংশ সাশ্রয় করে অকশান ফর অ্যাকশনকে দিয়ে। সবার সহযোগিতায় সংগৃহীত অর্থে কিছু অভুক্ত মানুষের খাবারের সংস্থান করবে অকশান ফর অ্যাকশন, স্বীকৃত কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

হুমায়ুন ফরীদি। ছবি: সংগৃহীত
হুমায়ুন ফরীদি। ছবি: সংগৃহীত

অকশান ফর অ্যাকশনের চমক আছে এরপরও। কারণ, হুমায়ূন আহমেদের হলুদ পাঞ্জাবিও উঠবে নিলামে। এই তালিকা বেশ হৃদয়গ্রাহী। কেবল সামগ্রী নয়, আছে অন্য রকম বিষয়। সময় ভালো হলে বাকের ভাইয়ের সঙ্গে কোনো গলির মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা, অনন্ত জলিলের সঙ্গে লং ড্রাইভ, মাইলসের সদস্যদের সঙ্গে ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তোলা, মোশাররফ করিমকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর মতো চমৎকার কিছু বিষয়, যা উঠবে নিলামে। উঠবে জেমসের তোরাই বল কি চাস। তবে অন্য কিছুও আছে সাকিবের ব্যাটের মতো। যেমন নির্মলেন্দু গুণের কবিতা, চিরকুটের সুমির নথ, ইমনের গিটার, পাভেলের ড্রামস কিট। তালিকা এতটা ক্ষুদ্র নয়; বরং আরও আছেন অনেক সেলিব্রিটি, যাঁরা তাঁদের সৃষ্টি কিংবা সঙ্গ নিলামে দিতে এগিয়ে এসেছেন। দীর্ঘ তালিকায় আছেন আলী জাকের, পার্থ বড়ুয়া, সৌম্য সরকার, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তিশা, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ আরও অনেকে।

পর্যায়ক্রমে নিলামে উঠবে ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিমের ব্যাট, এশিয়া কাপে ১১৭ বলে ১২১ রান করা লিটন দাসের সেই ব্যাটও।