দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই তো সময়

গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর
গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর

বরাবরই মে দিবসে গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর ব্যস্ত থাকেন। টেলিভিশন চ্যানেলের একাধিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সভা-সেমিনারেও অংশ নেন। এবার করোনায় লকডাউন পরিস্থিতি সত্ত্বেও কথা বলবেন টেলিভিশন চ্যানেলে। ঘরে বসে শোনাবেন গানও। করোনার এই সময় কেমন কাটছে, মে দিবস নিয়ে ভাবনা—এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এবারের মে দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
এমনই এক দুর্দিনে মে দিবস, যখন আমাদের মতো একটা দেশে শ্রমিকদের বড় দুঃসময়। লে-অফ, শ্রমিক ছাঁটাই, মজুরি না দেওয়া—প্রতিদিনই শুনছি। একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতায় চলছে। যখন করোনায় সারা দেশ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে, তখন শ্রমিকেরা ঢাকামুখী হচ্ছে গাদাগাদি করে। এটা আমাকে আতঙ্কিত করে। শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী—সবাই ঘরে বসে আছে। পৃথিবীর মানুষ অনেক আগেও ভাইরাসের সংক্রমণে পড়েছে। কিন্তু এটা এমন ভাইরাস, যা চোখে দেখা সম্ভব নয়। তবে মানুষ এখন সংকটে আছে, সমস্যায় আছে, কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবেই।

এটা কি আপনার বিশ্বাস?
আমি এমনটাই বিশ্বাস করি। মানুষ সব সময় সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এবারও দাঁড়াবে।

মে দিবসে আপনি অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এবার তা ভাবলে কেমন লাগে?
এবারও থাকব, তবে ঘরে থেকে ব্যস্ত থাকব। টেলিভিশনের সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশ নেব। কথা বলব, গান গাইব। অন্যান্য বছরে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে নানা সভা–সেমিনার হয়। এবারে সব যেন ম্লান। মে দিবসে কত নাটক তৈরি হয়। নাটকের দলগুলো এই দিনে নাটক মঞ্চায়ন করে।

গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর
গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর

শিল্পীরা কীভাবে এই সংকটে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখছেন বলে মনে করছেন?
প্রথম থেকেই সঙ্গে আছে, পাশে আছে। যেকোনো দুর্ভিক্ষে বা সংকটে শিল্পীরা বিনা দ্বিধায় পাশে দাঁড়ায়, এগিয়ে আসে। এবারও শুরু থেকে তা–ই করেছে। আমরা অসচ্ছল শিল্পীদের পাশে ছিলাম। ব্যক্তি উদ্যোগেও কিছু করার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করছি, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই তো সময়। সংগীতের মানুষেরা তো এমনিতে যেকোনো সংকটে গানে-কথায় দেশের মানুষকে উদীপ্ত করে, সাহস জোগায়। এবারও করছে। এবার সবচেয়ে আগে এগিয়ে এসেছে সংগীতশিল্পীরা।

স্বেচ্ছা ঘরবন্দী সময়টা কেমন কাটছে?
আমার স্ত্রী তো বলে, 'তোমার তো লকডাউনে ভালোই সময় কাটছে। দুটো বই লিখেছ। নামাজ পড়ছ। নানা বিষয় নিয়ে সবার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছ, সবার খোঁজখবর আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছ।' সত্যি তাই, ঘরে বসে সুন্দর সময় কাটছে। করোনার এই সংকটে শিল্পীবন্ধুদের চেতনা দেখে অভিভূত। সব মতের সব বয়সী শিল্পীরা শুরু থেকে একত্র হয়ে আশপাশের মানুষ, দূরের মানুষ, দুঃখী ও অসচ্ছল মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এসব দেখে মন, প্রাণটা ভরে যাচ্ছে। আমি তো ভাবছি, এভাবেই সম্মিলিত চেষ্টায় দুর্দিন আমরা পরাভূত করবই।

গানের খবর বলুন।
এরই মধ্যে চারটা গান করেছি। যত দিন লকডাউনে থাকব, গানে গানে মানুষকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করতেই থাকব।