করোনাদুর্গতদের সহযোগিতায় সংস্কৃতিকর্মীরা

এই শিল্পকর্মগুলো গানের দল সর্বনামের পেজে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিক্রির টাকা যাবে করোনাদুর্গত মানুষের সাহায্য তহবিলে। ছবি: সংগৃহীত
এই শিল্পকর্মগুলো গানের দল সর্বনামের পেজে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিক্রির টাকা যাবে করোনাদুর্গত মানুষের সাহায্য তহবিলে। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির এই সময়ে বিপদে সবাই। বিশেষে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এসব মানুষকে সহযোগিতা করতে পাশে দাঁড়িয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা মানুষ, নানা প্ল্যাটফর্মে। সবার উদ্দেশ্য একটাই, দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের বেশ কিছু উদ্যোগ চোখে পড়েছে এই সময়ে। ঘরে বসেই নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে তারা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অসচ্ছল সংস্কৃতকর্মী তথা দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে তহবিল গঠনেও সাড়া মিলছে এসব আয়োজনের মাধ্যমে।

এই শিল্পকর্মগুলো গানের দল সর্বনামের পেজে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিক্রির টাকা যাবে করোনাদুর্গত মানুষের সাহায্য তহবিলে। ছবি: সংগৃহীত
এই শিল্পকর্মগুলো গানের দল সর্বনামের পেজে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিক্রির টাকা যাবে করোনাদুর্গত মানুষের সাহায্য তহবিলে। ছবি: সংগৃহীত

সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ঘরবন্দী হওয়ার প্রথম দিকেই ফেসবুকে সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ নামে একটি পেজ খোলা হয়। ক্রমেই থিয়েটার, আবৃত্তি সংগঠনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের অনেকেই এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে দুর্গতদের সাহায্যার্থে তহবিল গড়ায় উদ্যোগী হন। যূথবদ্ধ এ আয়োজন সাড়া জাগিয়েছে বেশ। তহবিল সংগ্রহ এবং তা অসচ্ছল সংস্কৃতিকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ফেসবুক লাইভে অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পয়লা বৈশাখে তিন পর্বে, পরবর্তী সময়ে আরও দুটি পর্বে বিভিন্ন সৃজনশীল পরিবেশনা নিয়ে যুক্ত হয়েছেন থিয়েটার, সংগীত, আবৃত্তি অঙ্গনের শিল্পীরা এবং বিভিন পেশাজীবীরা। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দের উদ্যোগে ২৬৬ জন সংস্কৃতিকর্মীকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমটি চলমান রাখতে সংস্কৃতিকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দারুণ সক্রিয়। এখনো চলছে তাঁদের কার্যক্রম।

সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে লাইভে এসেছিলেন দুই নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে লাইভে এসেছিলেন দুই নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

ক্ষ্যাপার অনলাইন আড্ডা
করোনার এই ঘরবন্দী সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এপ্রিল মাসের শুরুতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে থিয়েটার সাময়িকী ক্ষ্যাপা। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিয়মিত অনলাইন আড্ডার আয়োজন করেছে তারা। ফেসবুক লাইভের মধ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখও উদযাপন করেছে। ক্ষ্যাপার এই আয়োজনটি সংস্কৃতি অঙ্গনে ইতিমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। ক্ষ্যাপার ফেসবুক লাইভ আড্ডাটি চালুর পর আরও অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষ্যাপার আড্ডায় অংশ নেন সংস্কৃতি অঙ্গনের খ্যাতিমান এবং তরুণ শিল্পীরা। ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত রমজান মাসে প্রতিদিন রাত ১০টায় এই লাইভ আড্ডাটি সম্প্রচার হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষ্যাপার সহকারী সম্পাদক অপু মেহেদী। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজন থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইতিমধ্যে অর্থসংকটে থাকা কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
সর্বনামের করোনাদুর্গত সাহায্য তহবিল

শিল্পকর্ম বিক্রির টাকা দেওয়া হবে করোনাদুর্গতদের। ছবি: সংগৃহীত
শিল্পকর্ম বিক্রির টাকা দেওয়া হবে করোনাদুর্গতদের। ছবি: সংগৃহীত

এই সময়ে অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে কাজ করছে গানের দল সর্বনাম। দলটির পক্ষ থেকে ‘সর্বনাম করোনাদুর্গত সাহায্য তহবিল’ গঠন করা হয়েছে। এই আয়োজনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার ও অনুদানের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সর্বনামের ডাকে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের অনেক তরুণ ও প্রবীণ চিত্রশিল্পী। তহবিলের অর্থ বাড়াতে নিজেদের শিল্পকর্ম দিচ্ছেন, যা বিক্রির মাধ্যমে যতটুকু অর্থ পাওয়া যাবে সবই অনুদান হিসেবে দুর্গত মানুষকে দেওয়া হবে। সর্বনামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিক্রি হচ্ছে এসব ছবি।
এ উদ্যোগের সমন্বয়ক সর্বনামের সদস্য হাসনাত রিপন জানান, ‘গানের দল সর্বনাম আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে গান করি। এই শারীরিক বিচ্ছিন্নতায় হাঁপিয়ে উঠেছি সবাই। কী করা যায়, এমন ভাবনায় আমরা সদস্যরা নিজেরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে তহবিল সংগ্রহ করি। এরপর আমাদের বন্ধু সুহৃদ তাদেরকেও আহ্বান জানাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে। এতটা ভালো লাগা কাজ করেছিল যখন প্রথম ছবিটা বিক্রি হয়। এরপর একে একে অনেকগুলো কাজ বিক্রি হয়ে গেছে।’
ছবি কিনতে ঘুরে আসতে পারেন সর্বনামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে- https://www.facebook.com/ShorboNam/?ref=br_tf&epa=SEARCH_BOX
এ ছাড়া আমরাই জাহাঙ্গীরনগর, দনিয়া পাঠাগারসহ নানা নামে সংস্কৃতিকর্মীরা বিভিন্ন আয়োজন করছেন এবং পাশে থাকার চেষ্টা করছেন করোনাদুর্গত মানুষের।