যাঁরা মাঠের যোদ্ধা

>করোনার কারণে বেশির ভাগ শিল্পীই এখন ঘরবন্দী। তবে আজ থাকছে চারজন শিল্পীর কথা, শুটিং বন্ধ থাকলেও যাঁরা সবাই এখনো ব্যস্ত। কারণ, তাঁদের বিচরণ শুধু বিনোদনের জগতেই নয়, তাঁদের মধ্যে কেউ চিকিৎসক, কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত। তাই এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেও কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল আলম।

বাইরে থাকার প্রতিটা মুহূর্তেই দুশ্চিন্তা হয়

ডি এ তায়েব, অভিনেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা

ডি এ তায়েব
ডি এ তায়েব

অভিনেতা ও নির্মাতা ডি এ তায়েব বাংলাদেশ পুলিশের একজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়মিত কাজ করে যেতে হচ্ছে তাঁকে। প্রতিদিন সব ধরনের সতর্কতাবিধি মেনে অফিসে যাচ্ছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে সঙ্গে না নিয়ে, নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে যান। অফিসেও যথাসাধ্য দূরত্ব মেনে কাজ করার চেষ্টা করছেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘অনেক দিন আগে থেকে সব ধরনের শুটিংয়ে অংশ নেওয়া বন্ধ করেছি। করোনার এই সময়ে অফিস নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে আমার ওপর যে দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে আমাকে আসামি ধরতে হয় না। কোনো গন্ডগোল নেই। তারপরও সব সময় করোনা নিয়ে সচেতন থাকতে হচ্ছে, সবাইকে সচেতন করতে হচ্ছে। বাইরে থাকলে প্রতিটা মুহূর্ত খুব দুশ্চিন্তা হয়। মনে হয় এই বুঝি আক্রান্ত হয়ে গেলাম।

নিরাপদে ফিরতে পারব তো?

শ্রাবণ্য তৌহিদা, মডেল, উপস্থাপক ও চিকিৎসক

শ্রাবণ্য তৌহিদা
শ্রাবণ্য তৌহিদা

প্রতিদিন বাসা থেকে বের হলেই মডেল ও উপস্থাপক শ্রাবণ্য তৌহিদার প্রথম চিন্তা, ‘আজ করোনা ছাড়া নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারব তো?’ কিন্তু কোনো চিন্তা বা দুশ্চিন্তাই তাঁকে দায়িত্ব থেকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না। পেশাগত কারণে তাঁকে প্রতিদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। লকডাউনের আগ পর্যন্ত তিনি একাধারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন, অংশ নিয়েছেন ফটোশুটে, আবার চিকিৎসকের দায়িত্বও পালন করে গেছেন। এখন শুটিং নেই। তাই বলে যে খানিকটা অবসর পেয়েছেন, তা নয়। এই মডেল ও উপস্থাপক বলেন, ‘হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের রোগী আসছেন। করোনা সন্দেহ করেই সবাইকে সেবা দিতে হচ্ছে। কারণ, কার করোনা আছে, কার নেই, এটা কেউই জানি না। আমরা এটা মাথায় নিয়েই কাজ করি। আমাদের প্রতিদিনের পুরো কাজটাই ঝুঁকিপূর্ণ। ভয় কিছুটা থাকলেও আমাদের সেবা দেওয়াই ধর্ম। চাইলেও আমরা সবার কাছ থেকে দূরত্ব মেনে সরে যেতে পারি না।’ 

সুরক্ষানীতি মেনে চলছে কাজ

খন্দকার লেনিন, অভিনেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা

খন্দকার লেনিন
খন্দকার লেনিন

অভিনয়ের হাতেখড়ি আরণ্যক নাট্যদল থেকে। এরপর ‘আমার নাম মফিজ ভাড়া হইল তিরিশ’ বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে আলোচনায় আসেন অভিনেতা খন্দকার লেনিন। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারও। এসবই তিনি করেছেন তাঁর মূল পেশার বাইরে গিয়ে, অভিনয়ের প্রতি টান ও ভালোবাসা থেকে। পেশাজীবনে এই অভিনেতা বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। করোনার এই সময়ে দিনরাত সব সময়ই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। । করোনা সন্দেহে ভুক্তভোগী রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, দাফন করানো, বাড়ি লকডাউন হলেই কাজ শেষ হয় না তাঁর। এই দুর্যোগে ভেঙে পড়া পরিবারকে মানসিকভাবে মনোবল বাড়াতে সাহস জোগান তিনি। লেনিন বলেন, ‘করোনার এই সময়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, কোয়ারেন্টিনে রাখা, অনেকে খাবারের কষ্টে আছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের মনোবল চাঙা করতে হয়। পুলিশের কাজ নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া। সরকারি সব সুরক্ষানীতি মেনেই সেই সব কাজ করে যাচ্ছি।’

“কাজের ফাঁকেই সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ‘আমি তো ভাবতেই পারিনি’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন লেনিন। এরই মধ্যে এই কবিতা অবলম্বনে নির্মিত একটি স্বল্পদ্যৈঘ্য ছবি অনলাইনে মুক্তিও দেওয়া হয়েছে।

বাসা থেকে বেরোলেই আতঙ্ক

আরেফিন শামস, মডেল ও চিকিৎসক

আরেফিন শামস
আরেফিন শামস

বাসা থেকে বের হলেই করোনা নিয়ে একধরনের আতঙ্কে থাকতে হয় মডেল আরেফিন শামসকে। অভিনয়ও করেন তিনি। সর্বশেষ বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বাধীনতা দিবসের নাটক কৃষ্ণপক্ষ-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর অভিনয় আর মডেলিংয়ে বিরতি দিয়ে পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন চিকিৎসাসেবায়। বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামস। তিনি বলেন, ‘করোনার সব রকম উপসর্গ থাকার পরও অনেক রোগী নিজেদের সঠিক নাম-ঠিকানা বলতে চান না, সব লক্ষণ প্রকাশ করেন না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের সেবা দিতে হয়। যতটা পারা যায় সরকারি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত নীতিমালা মেনে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, অ্যাপ্রন ব্যবহার করে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।