সঙ্গী হোক হুমায়ূন আহমেদ

দেখতে পারেন হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এ ছবিগুলো। ছবি: সংগৃহীত
দেখতে পারেন হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এ ছবিগুলো। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালে তিনি ২২ বছরের টগবগে তরুণ, পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে, থাকতেন মুহসীন হলের ৫৬৪ নম্বর কক্ষে। বন্ধুদের হাত দেখে আর ম্যাজিক দেখিয়ে ভালোই কাটছিল হুমায়ূন আহমেদের। একাত্তরের দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে মেরে ফেলার জন্য গুলিও চলল, কিন্তু ওপরওয়ালা তাঁর মৃত্যু বোধ হয় এভাবে লেখেননি। লিখেছিলেন, মৃত্যুকে তীব্রভাবে জড়িয়ে ধরার আগে তিনি সফল লেখক, নাট্যকার, গীতিকার, পরিচালক হবেন।

তাই সেবার নিজে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।


কিন্তু জ্যোৎস্নার এক রাতে নদীতে ভেসে গিয়েছিল তাঁর বাবা ফয়জুর রহমানের লাশ। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জীবনের সেই অনুভবকে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরেছিলেন ২৩ বছর পর, ১৯৯৪ সালে। ১৯৯০ সাল থেকে একটু একটু করে তৈরি হচ্ছিল আগুনের পরশমণি। চার বছর পর বড় পর্দায় হৃদয় জয় করল ট্রানজিস্টর হাতে বাবা মতিন সাহেবরূপী আবুল হায়াত, মুক্তিযোদ্ধা বদির ভূমিকায় আসাদুজ্জামান নূর। আর হাসিমুখে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করলেন বিপাশা হায়াত আর ১২ বছরের হুমায়ূনকন্যা শিলা আহমেদ।


সেবার ৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত এই ছবি। সে সময় বাংলা চলচ্চিত্রে এঁটে ছিল অশ্লীলতার ছাপ। রুচিশীল দর্শককে হলে ফেরানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন হুমায়ূন আহমেদ। একে একে বানিয়ে ফেললেন আটটি চলচ্চিত্র। ২০০৪ সালে মুক্তি পেল মুক্তিযুদ্ধের আবহে তৈরি আরেকটি চলচ্চিত্র শ্যামল ছায়া। ১৯৭১-এর আষাঢ়ের এক দিনে এক ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মুক্তাঞ্চলের উদ্দেশে যেন ভেসে চলেছে এক টুকরো বাংলাদেশ। তাঁদের মনে তীব্র আতঙ্ক, কিন্তু চোখ ভবিষ্যতের শ্যামল ছায়ায়।

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত তৃতীয় যে চলচ্চিত্রের কথা বলব, সেটির প্রেক্ষাপটে যেতে গেলে ক্যালেন্ডারে পেছাতে হবে দেড় শ বছর। তখনো হুমায়ূনের শরীরের ক্যানসার ধরা পড়েনি। তবু তিনি কী মনে করে বলেছিলেন, এটিই হবে তাঁর শেষ ছবি। ঘাট থেকে ঘেটু, ছবির নাম ঘেটুপুত্র কমলা। নদী ও হাওর অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল ঘেটুগানের সংস্কৃতি। হবিগঞ্জের জলসুখা গ্রামের জমিদার তারিক আনাম খান। বর্ষাকালে জলবন্দির সময়ে তাঁর মজলিসে 'কমলা' হয়ে নেচে-গেয়ে মনোরঞ্জন করতে আসে মামুন। সুন্দর মুখের শিশু মামুনের যৌনসঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হন জমিদার। ঘেটুগান জনপ্রিয় হলেও জমিদারদের এই কদর্য কতটা নির্মম হতে পারে, তার উদাহরণ ঘেটুপুত্র কমলা।