যে চলচ্চিত্রগুলোর নায়কদের বয়স আটের ঘরে

নাল ছবির পোস্টার, মেরে পেয়ারে প্রাইম মিনিস্টার ছবির পোস্টার, ওট্টাল ছবির পোস্টার
নাল ছবির পোস্টার, মেরে পেয়ারে প্রাইম মিনিস্টার ছবির পোস্টার, ওট্টাল ছবির পোস্টার

ঘরে বসে (বা শুয়ে, দাঁড়িয়ে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ খেলা শেষ। ডালগোনা কফি বা জিলাপির নামও শুনতে ইচ্ছা করে না আর? গ্রুপ চ্যাটের টুংটাং আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছালেই এখন বিরক্ত লাগে। কিছুই ভালো লাগছে না! মন ভালো করে দেওয়া একটা সিনেমার নাম বলি? মারাঠি ভাষার ছবি, নাল।

ছবিটি বানাতে প্রযোজক নাগরাজ মানজুলের পকেট থেকে গেছে ৩ কোটি, আর ফিরে এসেছে ৪০ কোটি। ২০১৯ সালে ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে এই ছবি পরিচালক শুধাকর রেড্ডির হাতে তুলে দিয়েছিল, 'বেস্ট ফার্স্ট ফিল্ম অব আ ডিরেক্টর; ট্রফি। এই সিনেমা আপনাকে হাসাবে, কাঁদাবে। আর সিনেমা শেষ আপনার মনের এক কোণে লেগে থাকবে স্বস্তি আর প্রশান্তির একটা নীরব চওড়া হাসি।

তা ছাড়া ঘরে থেকে থেকে সমার একঘেয়ে লাগতেই পারে। এই সিনেমা আপনাকে ঘুরিয়ে আনবে অনেক দূরের একটা বিশুদ্ধ গ্রাম থেকে। যেই গ্রামে থাকে ৮ বছরের ছেলে, চৈতা। সে ঘুম থেকে উঠে মুরগি ছাড়ে, গ্রামময় ছুটে বেড়ায়, দাদির কাছে গল্প শোনে, স্কুলে ক্লাসের বাইরে নিয়মিত কান ধরে মুরগি হয়ে বসে থাকে, পায়ে ব্যথা নিয়ে ঘরে ফিরলে মা রাতে তেল মালিশ করে দেয়। মায়ের কোল ঘেঁষে দিব্যি ঘুমায়। একদিন এই জীবনে ছন্দপতন ঘটে। চৈতা জেনে যায়, এই মা তার আসল মা না। তারপরেই চৈতার সন্দেহ হয়, যে এই মা তাকে ভালোবাসে না। শিশুমনে শুরু হয় টানাপোড়েন। শুরু হয় সিনেমা।

মালয়ালম ওট্টাল-এর মানে ফাঁদ। রাশিয়ান লেখক অ্যান্টন চেখভের গল্প 'বাঙ্কা'কেই ক্যামেরা দিয়ে লিখেছেন পরিচালক জয়রাজ। ২০১৪ সালে এই ছবি কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল বিভাগের সব পুরস্কার ঝুলিতে ভরে সেবার এই উৎসবের ১৮ বছরের ইতিহাস নতুন করে লিখেছিল। দু-দুটো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও বার্লিন থেকে 'ক্রিস্টাল বিয়ার'ও ঘরে এনেছিল এই ছবি।

এই ছবিরও মূল চরিত্র ৮ বছরের কুট্টাপাই। তার বাবা–মা নেই। জেলে দাদু ভালিয়াপ্পাচাই তার বাবা, তার মা (এই অভিনেতা বাস্তবেও জেলে, পরিচালক শত শত অভিনেতার অডিশন নিয়ে শেষে জেলেপাড়া ঘুরে তাঁকে এই চরিত্রের জন্য খুঁজে বের করেছিলেন)। এই দাদু নাতি নৌকায় চড়ে চইচই করে হাঁস তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। নামহীন এক কুকুরকে কুট্টাপাই তার সব খাবার বিলিয়ে দিয়ে দাদুকে তার ইচ্ছের কথা জানায়, সে স্কুলে যেতে চায়। যোগ–বিয়োগ শিখতে চায়। দারিদ্র্য দাদু নাতির পিঠে হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলিয়ে দিয়ে জানায়, তাদের জীবনের বিয়োগফলও যা, 'যোগফল'ও তা, একটা শূন্য। জীবনের এই ফাঁদ থেকে তারা বেরোতে পারবে?

তৃতীয় ছবিটির নাম, মেরে পেয়ারে প্রাইম মিনিস্টার। না, এটি কোনো রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নয়। আগের দুটো ছবির মতোই এই সিনেমার গল্পও বোনা হয়েছে ৮ বছরের বালক কান্নুকে ঘিরে। রোম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হওয়া ও দাঁড়িয়ে করতালি পাওয়া একমাত্র এশীয় ছবি এটি।

কান্নুদের গান্ধীনগরের বস্তিতে ফ্রিজ আছে, ডিশ–টিভিও আছে, কিন্তু কোনো টয়লেট নেই। থাকবে কীভাবে? সরকারের খাতায় এই বস্তিই নেই। সরকারিভাবে তাই এই বস্তির হাজারো মানুষ অস্তিত্বহীন। এখানে টয়লেট বানানোর প্রশ্নই আসে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। রাতের আঁধারে কান্নুর মা শৌচকাজ শেষে ফিরে আসার পথে ধর্ষণের শিকার হয়। মায়ের সুরক্ষার জন্য ছেলে প্রধানমন্ত্রীকে টয়লেট বানানোর জন্য লেখা চিঠি নিয়ে কাউকে কিছু না বলে রওনা হয় দিল্লির উদ্দেশে।

লকডাউনে এই তিন ভাষার তিনটি ছবি আপনি আপনার পরিবার, সন্তান নিয়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, সময় নষ্ট হবে না।