অনেক জনপ্রিয় শিল্পী সাড়া দেননি

নিপুণ। ছবি: সংগৃহীত
নিপুণ। ছবি: সংগৃহীত
>

সিনেমাতে সরব না থাকলেও এই করোনাকালে এফডিসিতে অসহায় শিল্পী, কলাকুশলীদের পাশে বেশ সরব চিত্রনায়িকা নিপুণ। নিজে কিংবা তহবিল গঠন করে অসহায় শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য কাজ করছেন। অনেক দিন সিনেমায় নেই এই তারকা। এর মধ্যে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও গড়েছেন। এসবসহ করোনার দিনগুলো নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নিপুণ।

হঠাৎ করেই এফডিসিতে বেশ সরব দেখা যাচ্ছে আপনাকে। এ সময়ে শিল্পী–কলাকুশলীদের জন্য কী করছেন?

হঠাৎ নয়। যখন করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সিনেমার শুটিংসহ সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল, তখন থেকেই ভাবছিলাম এই দুর্যোগে সিনেমার স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর কী হবে। যখন দেখলাম সিনেমার বিভিন্ন সমিতি মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস বিতরণ করছে, তখন আমার মনে হলো এই সব মানুষের জন্য খাবারও দরকার। আমি নিজের উদ্যোগে স্টিল ক্যামেরাম্যান, মেকআপম্যান, ভিডিও ক্যামেরা সহযোগীদের কিছু কিছু খাবার দিয়ে সহযোগিতা শুরু করি। কারণ, এই মানুষগুলোই শুটিং চলাকালে নায়ক–নায়িকাদের জন্য অমানবিক পরিশ্রম করেন। এরপর রোজা শুরু হলে এফডিসির মসজিদের ইমাম, নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ, আনসারদের সারা মাসের ইফতার করানোর দায়িত্ব নিয়েছি।

সিনেমায় ছোটখাটো আরও অনেক সমিতি আছে। ওই সমিতির সদস্যরা দিনের আয়ে চলেন। তাঁদের জন্য কিছু করছেন?

আমার একার পক্ষে সব সম্ভব নয়। এ কারণে এখন স্পনসর বা তহবিল সংগ্রহ করে এ ধরনের সমিতির সদস্যদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। কয়েক দিন আগে প্রোডাকশন ম্যানেজার সমিতি, প্রোডাকশন বয় সমিতিকে আলাদা করে অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি। এরপর সিডাপকে দেব। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এই তহবিলে নায়িকা শিল্পী, নায়ক মুন্না ও দেশের বাইরে থেকে নায়িকা সোনিয়া অর্থ দিয়েছেন। এর মধ্যে তহবিলে নায়ক ফারুক ভাইও অর্থ দিয়েছেন। আরও কিছু সংগ্রহ করে ঈদ সামনে রেখে এসব শিল্পী ও কলাকুশলীর জন্য কিছু করার চেষ্টা চলছে।

আপনার সময়ের এবং বর্তমানে জনপ্রিয় অনেক নায়িকাই এই দুঃসময়ে মাঠে নেই…
এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। জোর করে এ ধরনের কাজে নামানো যাবে না। তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজন নায়িকাকে ফোন করেছিলাম। চলচ্চিত্রের অসহায় এই মানুষগুলোর জন্য তহবিল সহযোগিতা চেয়েছিলাম। জনপ্রিয় শিল্পীদের তেমন কেউ সাড়া দেননি। অনেকে বলেছেন তাঁরা নাকি গোপনে সহযোগিতা করছেন। মানুষকে জানাচ্ছেন না।

বেশ ভালোভাবে শিল্পী-কলাকুশলীদের পাশে আছেন। অনেকেই ধারণা করছেন, শিল্পী সমিতির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন…
দেখুন, চেয়ারে বসে কাজ করার ইচ্ছা নেই আমার। আমি চেয়ারের পেছনে থেকেই কাজ করতে ভালোবাসি। নির্বাচন করব কি করব না, তা পরের বিষয়। দুর্যোগ কাটলে নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলা যাবে। সামনের দিন হয়তো আরও খারাপ আসবে। কিছুই জানি না। আগে মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে।

গত নির্বাচনে আপনি সভাপতি পদে নির্বাচনের চেষ্টা করেছিলেন?
করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টি গণমাধ্যমকে আমি জানাইনি। সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করতে গিয়ে যে ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি দেখেছি, পরে আর ইচ্ছা হয়নি। সরে এসেছিলাম।

অনেক দিন হলো সিনেমাতে অভিনয় করছেন না। কেন?
আমার শেষ ছবি 'অজ্ঞাতনামা'। এই ছবির আগে 'ধূসর কুয়াশা' শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এরপর আর কাজ করিনি। ভেবেছিলাম চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো হবে। আবার কাজে ফিরব। কিন্ত চিত্র উল্টো, যতই দিন যাচ্ছে, সিনেমার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এটা নিয়ে মৌন কষ্টও আছে।

করোনার এই সময়ে অসহায় শিল্পী ও কলাকুশলীদের পাশে থাকছেন নিপুণ। ছবি: সংগৃহীত
করোনার এই সময়ে অসহায় শিল্পী ও কলাকুশলীদের পাশে থাকছেন নিপুণ। ছবি: সংগৃহীত

কেমন?
গত জাতীয় নির্বাচনে ফারুক ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা শিল্পীরা সবাই তাঁর জন্য মাঠে নেমেছিলাম। কষ্ট করেছিলাম। ভেবেছিলাম সিনেমার মানুষ হিসেবে ফারুক ভাই বিজয়ী হলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিনেমার সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। তিনি বিজয়ী হয়েছেন, কিন্তু ফারুক ভাই আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি এখনও। এ জন্য মাঝেমধ্যে হতাশা লাগে।

কী নিয়ে সময় কাটছে তাহলে?
অনেক দিন হলো পারলার শুরু করেছি। আর ব্যবসা করছি বলেই তো এখন এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। তা না হলে সম্ভব হতো না। পাশাপাশি একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েছি।

কিন্তু এর মাঝে 'রঙ' শিরোনামে একটি গানে আপনি মডেল হয়েছিলেন...
হ্যাঁ। এটি আমার নিজেরই প্রোডাকশনের কাজ। এ কারণে গানটিতে মডেল হয়েছি। 'টিউলিপ এন্টারটেইনমেন্ট' নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছি। ওই গানটি প্রতিষ্ঠানটির প্রথম প্রযোজনা। মূলত সিনেমা প্রযোজনা করার জন্যই প্রতিষ্ঠান করা। কিন্তু সিনেমার যা অবস্থা, তাতে সাহস হচ্ছে না। সামনে সিনেমার অবস্থা ভালো হলে প্রযোজনা করার ইচ্ছা আছে।

ঘরে সময় কাটছে কীভাবে?
এফডিসির কিছু মানুষের ও বাসার দারোয়ানসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়মিত ইফতার করাচ্ছি। এ জন্য দিনের বেশ কিছু সময় ইফতারি তৈরিতে দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করি, সিনেমা দেখি। আগে বাসায় বসে পরিবারের সঙ্গে গল্প করার সময় হতো না। এখন সেটা করি। আমার মেয়ে তানিশা যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করে। গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশে এসেছে। তাকেও সময় দিচ্ছি।