মাকে প্রণাম করেননি, ছেলেকে বুকে নেননি অরুণা

ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অরুণা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অরুণা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার বাড়িতে বন্দী ছিলেন অরুণা বিশ্বাস। মন আর মানছিল না। কবে দেখতে পাবেন নিজের মা আর সন্তানকে! কানাডার টরন্টোতে আছেন তাঁরা। তাঁদের ছেড়ে বাংলাদেশে কত দিন আটকে থাকবেন ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অরুণা বিশ্বাস? দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনে উড়াল দিলেন টরন্টোর পথে।

বন্দী থাকতে থাকতে উদ্ভট সব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়। ১০ মে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে কানাডা ফিরেছেন অরুণা বিশ্বাস। দোহা বিমানবন্দরে ৫ ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর পৌঁছেছেন টরন্টোতে। বাড়িতে গিয়ে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। টরোন্টো থেকে এই অভিনয়শিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার এখানে। আমার পরিবারই আমার সব। বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল, যদি না বাঁচি, তাহলে তো কারও মুখ আর দেখা হবে না। কোনোভাবে কানাডা যেতে পারলে, মরলেও মা-ছেলে আর ভাইয়ের চোখের সামনেই মরব। তাই যে করেই হোক, তাঁদের কাছে আসার উপায় খুঁজছিলাম।’
অরুণা বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে শুদ্ধ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস অব সায়েন্স বিষয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি গানও করেন। কানাডার টরন্টোর ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউতে অরুণা বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যরা বাস করছেন ২২ বছর। অরুণা বলেন, ‘আমার মা ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে এসেছেন। একসঙ্গে আমারও আসার কথা ছিল। কিন্তু চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায়, আমি আসতে পারিনি। এদিকে আমার ছেলেও বলছিল প্রত্যেকবার তুমি কম সময় থাকো। এবার এলে একটু বেশি দিন থাকতে হবে। আমিও ভাবছিলাম, এপ্রিলের শেষ দিকে এসে একটু বেশি সময় থাকব। কিন্তু করোনা সব ওলট-পালট করে দিল।’

ঢাকায় অরুণা বিশ্বাস ও তাঁর মা জোছনা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় অরুণা বিশ্বাস ও তাঁর মা জোছনা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনটাও খারাপ হতে থাকে অরুণার। ভাইয়ের সন্তানও তাঁর ভীষণ আদরের। তাকে দেখার জন্যও উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন এই ঢালিউড অভিনেত্রী। এর মধ্যে কানাডার ফ্লাইট খুঁজতে থাকেন। প্রথম দুবার সুযোগ পাননি। কান্নাকাটিও করতেন খুব। কিছুই ভালো লাগছিল না। অরুণা বলেন, ‘কানাডা এম্বেসিতে ফোন করলাম। তাঁদের পরামর্শে নাম নিবন্ধন করলাম। আমি আসলে একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। শুনেছিলাম, মরদেহ বাইরের দেশে নিতে দেওয়া হবে না। রাস্তায় কেউ মরে পড়ে থাকলে ছুঁয়ে দেখবে না। এসব শুনে অস্থির লাগছিল। ১০ মে সকাল সাড়ে ৯টায় অটোয়া থেকে জানানো হলো টিকিট পাওয়া গেছে। আমি তিন ঘণ্টার মধ্যে রেডি হয়ে বিমানবন্দরে ঢুকি। বিকেল ৫টায় রওনা করি। দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনে আসতে হয়েছে। তারপরও শান্তি, সবাইকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।’

ছেলে শুদ্ধর সঙ্গে অরুণা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
ছেলে শুদ্ধর সঙ্গে অরুণা বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষে পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন অরুণা। তিনি বললেন, ‘এখনো মাকে প্রণাম করতে পারিনি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারিনি। ভাইয়ের বাচ্চাকে আদর করতে পারিনি। তার পরও শান্তি, সবাই আমার চোখের সামনে আছে।’