দুই কোটি টাকার নাটকগুলো কী হবে

‘আ ডে উইদাউট ফোন’ নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিম ও নিশাত প্রিয়ম। ছবি: সংগৃহীত
‘আ ডে উইদাউট ফোন’ নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিম ও নিশাত প্রিয়ম। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ করেই করোনা হানা দেওয়ায় মাঝপথে বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু ধারাবাহিক ও একক নাটক। সব মিলিয়ে এই নাটকের সংখ্যা ৪০টির বেশি। নাটকগুলোর প্রচার ও শুটিং নিয়ে শঙ্কায় নির্মাতা ও প্রযোজকেরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নাটকের বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা। টেলিভিশন নাটক–সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা বলেছেন, এর সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন।
‘সদা সত্য বলিব’ নামে একটি ঈদ ধারাবাহিক নাটকের প্রমো বাংলাভিশনে প্রচার হচ্ছে। এই ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, ফারুক আহমেদ, নাদিয়া আহমেদ, মারজুক রাসেল, রোবেনা রেজা জুঁই প্রমুখ। নাটকটির শুটিং কিঞ্চিৎ বাকি আছে। নাটকটির নির্মাতা মুরসালিন শুভ বলেন, ‘ঈদে আমার চারটি নাটক প্রচার হবে। তার মধ্যে “সদা সত্য বলিব” নাটকের স্বল্প পরিসরে দু–তিনটি দৃশ্যের শুটিং বাকি আছে। একটি একক নাটকের এক–দেড় ঘণ্টার শুটিং বাকি আছে। সেগুলো শেষ করার জন্য সংগঠনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি।’
আফরান নিশো ও তানজিন তিশা অভিনীত মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘তাকে ভালোবাসা বলে’ ঈদে প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল। নির্মাতা বলেন, ‘নাটকটি ঈদে প্রচারে দিতে পারছি না, আমার এক দিনের শুটিং এখনো বাকি আছে।’ এই নির্মাতার আফরান নিশো ও মেহ্‌জাবীন অভিনীত ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া’র শুটিং এক দিন কিছুটা করেই বন্ধ করতে হয়েছে।
রুপক বিন রউফ নামের একজন নির্মাতা জানান, তাঁরও চারটি কাজ অসমাপ্ত হয়ে আছে। নির্মাতা সেরনিয়াবাত শাওনের আফরান নিশো, তাসনুভা তিশা অভিনীত ‘সিটি অব এরর’ ওয়েব সিরিজের দু-তিন ঘণ্টার কাজ বাকি আছে।
বেশ কয়েকজন নাট্য নির্মাতাই দাবি জানিয়েছেন নিয়ম মেনে শুটিং চালু করার। কারণ, ঈদকে কেন্দ্র করেই মূলত বেশ চাঙা থাকে টেলিভশিন নাটকের বাজার। কিন্তু অনেক নির্মাতাই ঈদের নাটক বানাতে পারেননি। কারও নাটক থেমে গেছে মাঝপথে। এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান এবং সম্প্রচার বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা নতুন নাটকের সংকটে ছিলাম। এই ঈদে মাত্র ১০টি নতুন নাটক আমাদের চ্যানেলে প্রচারিত হবে। নির্মাতারা শুটিং করলে আমাদের হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলার নেই। তবে এখন শুটিং শুরু হলে ঈদে প্রচার করা যাবে কি না সন্দেহ।’
৭ মে থেকে সচেতনতা মেনে শুরু হয়েছে বিজ্ঞাপনের শুটিং। একটি বিজ্ঞাপন শুটিং সেট থেকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নির্মাতা বলেন, ‘ঈদের আগে যদি দুই থেকে তিনটি বিজ্ঞাপনের শুটিং না করি, তাহলে পরিবার নিয়ে ঈদের পর না খেয়ে থাকতে হবে। এই মুহূর্তে কারও কাছেই সাহায্য চাইতে পারব না। এসব দুশ্চিন্তায় যতটা নিরাপদে থাকা যায়, সেভাবে দূর থেকে মডেল ও ক্যামেরাম্যানকে দৃশ্য বুঝিয়ে শুটিং করছি।’

‘সিটি অব এরর’ সিরিজের দৃশ্যে আফরান নিশো ও তাসনুভা তিশা। ছবি: সংগৃহীত
‘সিটি অব এরর’ সিরিজের দৃশ্যে আফরান নিশো ও তাসনুভা তিশা। ছবি: সংগৃহীত

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিরেক্টরস গিল্ডের একজন নেতা বলেন, ‘কবে শুটিং শুরু হবে কিছু জানি না। দেশে সামনে যদি অর্থনৈতিক মন্দা হয় তাহলে বাজেট কমবে। ঈদে টিভি চ্যানেলগুলোতে নাটকের বাজেট নিয়ে সমস্যা হয় না। এখন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, অফিস, মার্কেট পারলে আমরা কেন স্বল্প পরিসরে দুজন শিল্পী আর চার–পাঁচজন কলাকুশলী নিয়ে নিরাপদে শুটিং করতে পারব না।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজক সমিতির সভাপতি ইরেশ যাকের বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘ, নাট্যকার সংঘ—সবার সঙ্গে আলোচনা করছি কীভাবে শুটিং শুরু করা যায়।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন হলে হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুটা শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সেই সিদ্ধান্ত আমরা সাংগঠনিকভাবে নেব।’