চেষ্টা করলাম কোনোভাবে বিয়ে টেকানো গেল না

অভিনেতা অপূর্ব ও নাজিয়া হাসান অদিতি। ছবি: ফেসবুক থেকে
অভিনেতা অপূর্ব ও নাজিয়া হাসান অদিতি। ছবি: ফেসবুক থেকে

বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেল ছোট পর্দার অভিনেতা অপূর্ব ও নাট্যকার নাজিয়া হাসান অদিতির। রোববার দুপুরে অদিতি তাঁর ফেসবুকের রিলেশন স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ডিভোর্সড’। এর কয়েক ঘণ্টা পর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমাকে ভাবি বলা সবাই বন্ধ করুন।’ এরপর বিচ্ছেদের খবরটি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িড়ে পড়ে। আগে থেকে বিচ্ছেদ নিয়ে কানাঘুষা থাকলে বিষয়টি নিয়ে কোনো পক্ষ মুখ খোলেননি এত দিন। গত রোববারে অদিতির স্ট্যাটাসের পর সব পরিষ্কার হয়ে গেল। অদিতি বলেছেন, সম্প্রতি তাঁদের দুজনের মতামতের ভিত্তিতেই এই ডিভোর্সড। তাঁদের ঘরে আয়াশ নামে ছয় বছরের একটি ছেলেসন্তান আছে।

কেন এই বিবাহবিচ্ছদ? কী হয়ে হয়েছিল তাঁদের দুজনের মধ্যে? এসব বিষয় রোববার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অদিতি।

হঠাৎ করেই এ ধরনের স্ট্যাটাস দিলেন কেন?
আমার মনে হয়েছে বলেই দিয়েছি। অপূর্ব ও আয়াশ দুজনই পাবলিক ফিগার। তাদের কারণে আমাকেও অনেকই চেনেন। এই মুহূর্তে এসে আমার মনে হয়েছে বিচ্ছেদের বিষয়টি সবাইকে জানানো উচিত। তা না হলে এটি হিপোক্রেসি হয়ে যাবে। বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরও আমাকে সবাই ‘ভাবি’ বলে সম্বোধন করেন। এটি ভালো লাগে না। ফেসবুকে অনেক দিন দুজনেরর ছবি দিই না। এ জন্য অনেকই আমাকে ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়ে আমি ঠিকঠাক আছি কি না জানতে চায়। এ জন্য আজ (রোববার) বিষয়টি সবাইকে ক্লিয়ার করে দিলাম।

কত দিন আগে বিচ্ছেদ হয়েছে? দুজনের মতামতে?
খুব কাছাকাছি সময়েই হয়েছে। দুজনের মতামতের ভিত্তিতেই আমরা আলাদা হয়ে গেছি। দুজনই চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কোনোভাবেই বিয়েটা টেকানো গেল না।

বিয়ের দীর্ঘ আট বছরের মাথায় এই বিচ্ছেদ। কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিষয়টি নিয়ে আমি কাদা–ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। তবে এতটুকু বলি, দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। মতবিরোধ ছিল। এ কারণেই বিচ্ছেদ টানা হয়েছে।

শুধুই কি এই কারণে?
দুজনের চিন্তার জায়গায় এক হচ্ছিল না। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ তো ছিলই। বলা যায় বড় ঝামেলাই হয়েছে দুজনের মধ্যে। তবে সে আমার বাচ্চার বাবা। তাকে আমি ছোট করতে চাই না। কাউকে ছোট করে কেউ কখনো বড় হতে পারে না। তা ছাড়া আমি তো অপূর্বকে অস্বীকার করব না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও না। সে আমার বাচ্চার বাবা। এই রশিটা সারা জীবন থেকেই যাবে। অপূর্ব নিজেও আমাকে সম্মান করে। আমাকে নিয়ে কোথাও তার মুখে বাজে মন্তব্য শুনিনি।

স্বামী হিসেবে অপূর্ব কেমন ছিল?
আমরা দুজন মারামারি, ঝগড়া যা–ই করি না কেন, সেগুলো আমাদের একান্তই ঘরের ব্যাপার। কিন্তু অপূর্ব বাংলাদেশের ছোট পর্দার প্রথম সারির জনপ্রিয় তারকা। বাংলাদেশের মানুষ তাকে যে পরিমাণ ভালোবাসে, সেটা ব্যক্তিগত কারণে কেড়ে নিতে পারি না। ভালো অভিনয় করাটা তার একটি গুণ। এত বড় গুণ তো অস্বীকার করা যাবে না। সবাই তো আর তারকা হতে পারে না। তবে সব মানুষেরই ভালো–মন্দ দিক থাকে। তবে সে অসম্ভব মেধাবী। মানুষ হিসেবেও দারুণ।

পুরোনো ছবির অ্যালবামে সন্তান নিয়ে অভিনেতা অপূর্ব ও নাজিয়া হাসান অদিতি। ছবি: ফেসবুক থেকে
পুরোনো ছবির অ্যালবামে সন্তান নিয়ে অভিনেতা অপূর্ব ও নাজিয়া হাসান অদিতি। ছবি: ফেসবুক থেকে

কখন বুঝলেন যে দুজন একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়?
সত্যি কথা কি, শুধু আমি একা না, দুজনই খুব চেষ্টা করেছি একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু হলো না। একটা সময় বুঝলাম দুজন আলাদা হয়ে গেলে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্কটা টিকে থাকবে, দুজনের সম্মানও বজায় থাকবে। এতে আমাদের সন্তান আয়াশও ভালো থাকবে। কারণ, মনোমালিন্য নিয়ে সংসার করলে আমাদের সন্তানের জন্য খারাপ হতো।

সমস্যটা কত দিনের?
অবশ্যই মাঝে বেশ সময় গেছে। এসব তো আর এক দিনে হয় না। কেউ এক দিনেই পট করে ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত নেয় না। তা ছাড়া আমরা দুজন তো বড় হয়েছি। মাঝে আটটি বছর গেছে। এই বয়সে এসে সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে না। কিন্তু কোনোভাবেই আমাদের সমঝোতা হচ্ছিল না।

এই সমস্যার পেছনে কোনো তৃতীয় পক্ষ ছিল কি?
না, এ ব্যাপারে কিছুই বলব না। আর কোনো তৃতীয় পক্ষ ছিলও না। এটি আমাদের দুজনের ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে হয়েছে। দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য থেকেই হয়েছে।

অপূর্বর সঙ্গে শেষ দেখা কবে হয়েছে?
প্রায়ই দেখা হয়। আমাদের দুজনের মধ্যে তো মারামারি, গালাগালি নেই। আয়াশ আমার কাছে থাকে। আয়াশকে প্রায়ই নিতে আসে। আমরা দুজনই আয়াশকে নিয়ে বাইরে খেতে যাই, খেলি। আজও (রোববার) দেখা হয়েছে অপূর্বর সঙ্গে।

কিন্তু বিচ্ছেদের কারণে একটা পর্যায়ে গিয়ে আয়াশের সমস্যা হবে না?
না, আমি মনে করি সমস্যা হবে না। সমস্যা কখন হয়, যখন বাবা সন্তানকে মায়ের কাছে যেতে দেয় না আবার মা সন্তানকে বাবার কাছে যেতে দেয় না কিংবা যখন সন্তানের কান ভারী করা হয়। কিন্তু আমরা দুজনই সন্তানকে বলি, মা দিবসে মাকে উইশ করো, বাবা দিবসে বাবাকে উইশ করো। বাচ্চাকে মাঝে রেখে আমরা দুজন কেউই বিচ্ছেদ চাইনি। এখন দুজন দুজনকে সম্মান রেখে যতটুকু ভালো থাকা যায়, সন্তানকে ভালো রাখা যায়। আমি মনে করি দুজনের বনিবনার মাধ্যমে আয়াশকে আমরা বড় করতে পারব মানুষ করে তুলতে পারব।

আপনি বেশ কয়েকটি টেলিভিশন নাটক লিখেছেন। নাটক লেখার কাজ কি চালিয়ে যাবেন?
এ পর্যন্ত একটি গল্পভাবনাসহ তিনটি নাটক লিখেছি। শেষটা ‘রোদ্র আসবে বলে’ এই ঈদে প্রচারিত হবে। আসলে নাটকটা মুডের ওপর লেখা হয়। মুড এলে লিখব। নিশো ভাই, মেহ্‌জাবীন, তানজিন তিশা, নির্মাতা আরিয়ানসহ মিডিয়ার অনেক মানুষের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। কখনো কোনো পরিচালক চিত্রনাট্য চাইলে হয়তো লিখতে পারি।