শুটিং না, অভিনয়টা মিস করি

অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো
অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতির আগে অভিনয়শিল্পী অপি করিম 'কালো জলের কাব্য' মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন। এই সময়ে নাটকটির বেশ কিছু শো হওয়ার কথা ছিল। ঈদের নাটকেও মাঝেমধ্যে দেখা যেত এই অভিনেত্রীকে। সবই এখন করোনায় আটকে পড়েছে। করোনাকালীন নিজের উপলব্ধি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।
প্রায় দুই মাস ঘরবন্দী, কী করে সময় কাটছে?
অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। আমাদের ফার্মে কিছু কাজ থাকে। নিজের আনন্দের জন্য বাসায় বই পড়ি, ছবি দেখি, ছবি আঁকার চেষ্টা করি, লিখি। টুকটাক রান্না করি, গাছ লাগাই। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলা বেড়ে গেছে। কাছের মানুষদের নিয়ে কিছু গ্রুপ আছে, সেখান থেকে সবাই মিলে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

সর্বশেষ ভালো লেগেছে কোন ছবিটি?
এই মুহূর্তে তিনটার নাম মনে পড়ছে। অপারেশন ডেব্রেক অনেক পুরোনো, খুব ভালো লেগেছে। জাল্লিকাট্টু ও শপলিফটার।
ঘরে থেকে নতুন কোন অভ্যাসটি হয়েছে?
আগে বাসায় ফিরতাম খুব ক্লান্ত হয়ে। চাইলে অনেক কিছুই একাগ্রচিত্তে করা হতো না। এখন যা-ই করছি যথাসময়ে, নিবিষ্ট মনে, যথেষ্ট সময় নিয়ে করছি। তা ধর্মচর্চা হোক বা রান্নাবান্না। আর অহেতুক আলোচনা, বিবাদ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছি। মানে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে যথেষ্ট নজর দিচ্ছি। এইটা একেবারেই নতুন অভ্যাস।

অপি করিম।ছবি: প্রথম আলো
অপি করিম।ছবি: প্রথম আলো

করোনাকালীন আপনার উপলব্ধি...

প্রথম উপলব্ধি হলো, সেদিন আমার পাশের বাড়ি থেকে ভায়োলেন্সের আওয়াজ কানে এসেছে। সেটা শোনার পরপরই। আসলে আমরা ঘরের মানুষগুলোকে কতটা চিনি? স্বামী-স্ত্রী-সন্তান-বাবা-মা পরিবারের একজন আরেকজনের কাছে পুরোপুরি অপরিচিত! আমার তো মনে হয় একজন অন্যজনকে বুঝতে না পারায় পরিবারে অশান্তি হচ্ছে। আবার অনেক বন্ধু ব্যতিক্রমও বলেছে, বলছে সম্পর্ক গাঢ় হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ১৬ কোটি মানুষের সবাই খেতে পারছে তো? মিডিয়া বা অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের কাজ নেই। তাঁরা কীভাবে চলছেন এটা ভীষণ ভাবাচ্ছে। খাবার, ওষুধ কিনতে পারছেন তো? তৃতীয়ত, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত যাদের কথাই বলি না কেন, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক যে ধাক্কাটা আসবে, সেই সময়ে কে কীভাবে সার্ভাইভ করব, এই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রমাগত।

মঞ্চে নিয়মিত থাকার চেষ্টা করেন অপি। ছবি: সংগৃহীত
মঞ্চে নিয়মিত থাকার চেষ্টা করেন অপি। ছবি: সংগৃহীত

দিবসকেন্দ্রিক বিশেষ নাটকে আপনাকে দেখা যায়। ঈদের নাটক কতটা টানে আপনাকে?
আমি আসলে শুটিং না, অভিনয়টা মিস করি। তাই মঞ্চনাটক আমাকে টানে। যে কারণে মঞ্চে নিয়মিত থাকার চেষ্টা করেছি সব সময়।

করোনার আগে মঞ্চে 'কালো জলের কাব্য' করেছিলেন?

হ্যাঁ। মাত্র দুইটা প্রদর্শনী হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে হয়তো এর মধ্যে আরও অনেকগুলো শো করতাম। মন খারাপ হয়!

ভক্তদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শরীরের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। অন্যকে ঝামেলায় না ফেলে মনকে কীভাবে শান্ত রাখা যায়, সেই কাজগুলো করুন। নিজের কাজের সঙ্গে সঙ্গে যতটুকু পারেন পরিবারকে সাহায্য করুন। যার যা সামর্থ্য আছে, সেই অনুযায়ী তাঁদের কাজগুলো করতে দিন। বলতে চাইছি, এই অন্ধকার সময়ে কোনো অবদানই ছোট না। সবকিছু আমাদের ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ নাও হতে পারে বরং আমরা সমালোচনা থেকে দূরে রাখি নিজেদের।