নোবেল বললেন, 'তামাশা করলাম'

সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
>‘সারেগামাপা’খ্যাত সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল গেল মঙ্গলবার তার ফেসবুক পেজে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীদের গত দশ বছরে কোনো অর্জন নেই। এমনকি সংগীত লেজেন্ডেদেরও তিনি গান শেখানোর কথা তাঁর স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন। এটি নোবেলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগীতপ্রেমী শ্রোতা ও সংগীতের মানুষেরা তাঁর বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছেন। মঙ্গলবার রাতে এসব নিয়ে কথা হয় নোবেলের সঙ্গে।


হঠাৎ এ ধরনের স্ট্যাটাস দিলেন কেন?
এটি আমার তামাশা। মানে ‘তামাশা’ নামে আমার একটি মৌলিক গান আগামী মাসে আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘নোবেলম্যান’ থেকে প্রকাশিত হবে। গানটির প্রকাশের আগে আগে একধরনের তামাশা করেই মার্কেটিং কৌশল নিয়েছি। এর বাইরে কিছুই নয়।

কিন্তু মার্কেটিং কৌশল করতে গিয়ে আপনি বাংলাদেশের গানের মানুষদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করবেন? ‘লেজেন্ড’দের সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করবেন?
আমি তো আগেই বলেছি, এটি গানের মার্কেটিং কৌশল। তবে আমি জানি, এই স্ট্যাটাসে গানের লেজেন্ডরা রাগ করছেন, আমাকে খারাপ বলছেন। আমি তাঁদের কাছে মাফ চাইছি, ক্ষমা চাইছি। প্রয়োজন হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গিয়ে মাফ চাইব। আমি সত্যি সত্যি তো তাঁদের এ কথা বলিনি। গানের প্রচারের জন্য বলেছি।

কিন্তু এ জন্য যে গানপ্রেমী শ্রোতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাকে নিয়ে বিষোদ্গার করছেন, গালমন্দ করছেন। আপনার স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে গানপ্রেমীদের এসব প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেছেন কি?
দেখেছি। তবে যাঁরা আমাকে সমালোচনা করছেন, আমি মনে করি, তাঁরা বুদ্ধিমান। তাঁরা বুদ্ধিমান না হলে আমার বিরুদ্ধ বলা, গালমন্দ করার সুযোগ দিতাম না। এটি আমার জন্য আশীর্বাদ মনে করছি। বলতে পারেন, নিজের ভালোর জন্য তাঁদের বলার সুযোগ করে দিয়েছি।

নিজের গানের মার্কেটিং করতে গিয়ে বিশিষ্ট শিল্পীদের অপমান করছেন। আপনি নিজেও তাঁদের অনেক গান গেয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখনো বিভিন্ন জায়গায় শোতে তাঁদের গান কভার করে আয় করছেন, বাহবা নিচ্ছেন।
তা ঠিক আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই শিখে আসে না। এসেই না শেখে। আমিও এখানে এসে শিখছি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আর কভার গান করব না। কভার গান করাটা এখন অপরাধ মনে হয় নিজের কাছে। তবে একেবারই যে গাইব না, তা না। মঞ্চে নিজের মৌলিক গান আগে প্রাধান্য দেব। মৌলিক গানের পাশাপাশি অল্প কিছু কভার গান করব।

সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

আপনি প্রায় নিজেকে সমালোচনার মধ্যে ফেলে দেন, কেন?
অনেক সময় আমি বলি এক, সবাই সেটাকে অন্য রকম বানিয়ে ফেলে আমাকে নিয়ে সমালোচনা তৈরি করেন। তবে আমার কাছে মনে হয়, পর্দার সামনের জনপ্রিয় মানুষদের সত্য–মিথ্যা ঘটনা নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়। পান থেকে চুন খসলেই এসব মানুষের বিপদ। আমাকে শ্রোতা–দর্শক পর্দার সামনেই দেখতে চান। আমাকে নিয়ে সমালোচনাও বেশি হয়।

আপনি স্ট্যাটাসে বিগত ১০ বছরে হিট–ফ্লপ গানের প্রসঙ্গটি এনেছেন...
সত্য কথা কী, ফিল্মের বাইরে খুব বেশি গান দর্শকপ্রিয়তা পায়নি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। আরমান আলিফের ‘অপরাধী’ গানটা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। তবে এই গান দিয়ে শিল্পীর কোনো লাভ হয়নি। এক শ্রেণির মানুষ গানটি দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। অন্যদিকে আরমান আলিফ বাইরে এক লাখ টাকার শো পাচ্ছেন না। পথে পথে ৫০ হাজার টাকার শো করে ‘নেশা’র গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন। এই হলো অবস্থা। এসব কারণে ফিল্মের বাইরে মৌলিক গান ডুবে যাচ্ছে।

কেমন?
আপনি বলেন বাচ্চু ভাই, জেমস ভাইয়েরা কি ফিল্মের গান দিয়ে লেজেন্ড হয়েছেন? তাঁরা তাঁদের মৌলিক গান দিয়ে বাংলার বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। এখনকার একজন শিল্পীও তাঁদের ধারে–কাছে আছেন? আমার মনে হয়, এখন অনেক শিল্পী, সুরকার লিরিক না বুঝেই গানের সুর করেন, গানে কণ্ঠ দেন। অনেকের আবার মিউজিকও হয় না।

‘তামাশা’ গানটি কবে আসবে?
৭ জুনের মধ্যে আসবে। একই সঙ্গে হিন্দি ও ইংরাজিতেও প্রকাশিত হবে গানটি। লেখা, সুর ও সংগীত জিহানের। ভিডিওর কাজ চলছে। মোট পাঁচটি গান করেছি। সেখান থেকে ‘তামাশা’ গানটি প্রকাশিত হবে। এটি আমার বাংলাদেশে প্রথম মৌলিক গান।

‘সারেগামাপা’খ্যাত সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
‘সারেগামাপা’খ্যাত সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

সারেগামাপা থেকে বের হয়েছেন অনেক আগেই। মৌলিক গান করতে এত সময় নিলেন কেন?
গান তো আর এক দিনে হয় না। এক দিনের গান এক দিনেই হারিয়ে যায়। অনেক সময় নিয়ে গবেষণা করে একসঙ্গে অনেকগুলো গান করেছি। যাতে বেশি সময় ধরে গানগুলো শ্রোতাদের মধ্যে বেঁচে থাকে।

বাকি গানগুলো কবে আসবে?
গানগুলো অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করছি। প্রথম অ্যালবামের নাম দিয়েছি ‘ইউর রয়েল হাইনেস’। এখান থেকে ‘তামাশা’সহ তৈরি পাঁচটি গান প্রকাশ করব। প্রতি মাসেই একটি করে প্রকাশের ইচ্ছা আছে। দ্বিতীয় অ্যালবামেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। দ্বিতীয় অ্যালবামে আটটি গান করার ইচ্ছা। দ্বিতীয় অ্যালবামের গানগুলো হবে সামাজিক অসংগতি নিয়ে।

এখন ঘরে বসে কী করছেন?
যে গানগুলো প্রকাশের জন্য প্রস্তত করেছি, গানগুলো মঞ্চে গাওয়ার জন্য অনুশীলন করছি। করোনার কারণে বাইরে যাই না। ঘুম থেকে উঠেই গিটার নিয়ে বসি। সারা দিনই অনুশীলন করি। গানগুলো প্রকাশের পরপরই যেন মঞ্চে গাইতে পারি।