সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

>করোনাকালে তারকারা ঘরেই জ্বলে উঠছেন। রোজকার কাজের চাপ নেই। তবে শিল্পীর মন তো আর ছুটিতে যায় না। অবকাশ, সংকট কিংবা উৎসবে শিল্পীমন নতুন সৃষ্টিতে সুখ খোঁজে। তাই এই সময়ে শিল্পীরা খুঁজে পাচ্ছেন নতুন কোনো সৃষ্টির সুখ। আবিষ্কার করছেন নিজের নতুন কোনো সৃজনশীল দিক। লিখেছেন মনজুরুল আলম
১ / ৫
জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান

কবি জাহিদ হাসান

ছাত্রজীবনে কে না কবি? জাহিদ হাসানও লিখেছেন। এত বছর ডায়েরিতে জমিয়ে রেখেছিলেন সেসব। যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তখন গভীর রাতে দু–একটি কবিতা লিখে ভেবেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে বাকিটা লিখে ফেলবেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই ছুটতে হতো শুটিংয়ে। পরে একটা সময় ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, হারাতে থাকে কবিতা লেখার আগ্রহ। তারপর কেটে গেছে অনেক দিন। অবসর না মেলায় লেখা হয়ে ওঠেনি অসমাপ্ত কবিতার পঙ্​ক্তিগুলো। তবে এবার আর আগ্রহ হারানোর সুযোগ নেই। করোনাকাল ফিরিয়ে দিয়েছে পুরোনো আগ্রহ। জাহিদ হাসান লিখে ফেলেছেন তিনটি কবিতা। এর মধ্যে ‘রাস্তা’ ও ‘করোনা’ নামের দুটি কবিতা পয়লা বৈশাখে শুনিয়েছেন প্রিয়জনদের। তিনি যে কবিতা লিখতে পারেন, সেটা জেনে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের। কবিতার প্রশংসা করে মাহফুজ আহমেদ বললেন, ‘জাহিদ হাসানের কবিতাটি খুব ভালো হয়েছে। সেটা আবার সবাইকে শুনিয়েছেন তিনি। করোনাকাল না হলে অন্য সময়ে আমাকে গুলি করলেও বিশ্বাস করতাম না যে জাহিদ কবিতা লিখতে পারেন।’

জাহিদ হাসানের বক্তব্য কী? ‘আমার কবিতা লিখতে খুব ইচ্ছা করে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সমাজের যে ঘটনাগুলো আমার ভেতর নাড়া দেয় নিয়ে ভাবি লিখব। কিন্ত ব্যস্ততায় তা আর হয়ে ওঠে না। আমার কবিতা লিখতে লাগে ৫-১০ মিনিট। কিন্ত লেখার ভাবটা আসতে অনেক সময় লাগে। এখন লকডাউনে তেমন কাজ নেই। অফুরন্ত সময়। বাসায় বসে লিখে ফেললাম কবিতা।’ ‘রাস্তা’ কবিতার দুটো লাইন মুঠোফোনে আমাদের শোনান জাহিদ হাসান- ‘এখন যেকোনো রাস্তা/ সড়কের দিকে তাকালে, নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবার মতো লাগে।’

২ / ৫
বাবা আলী যাকেরের ভিডিওচিত্র ধারণ করছেন ইরেশ। পাশে আছেন মা সারা যাকের
বাবা আলী যাকেরের ভিডিওচিত্র ধারণ করছেন ইরেশ। পাশে আছেন মা সারা যাকের

ভিডিওতে হাত পাকাচ্ছেন ইরেশ

শুটিংয়ে গেছেন আর ক্যামেরা নেননি, এমনটা খুব কমই হয়েছে অভিনেতা ও প্রযোজক ইরেশ যাকেরের বেলায়। শৈশব থেকেই ছবি তোলার শখ। এবার এই শখ নতুন উচ্চতা স্পর্শ করল। শিখে ফেললেন ভিডিওচিত্র ধারণ। এর আগে অনেকবার চেয়েছেন সিনেমাটোগ্রাফি শিখবেন। কিন্তু সময় মেলেনি। ইরেশ বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে ফটোগ্রাফি করি। এর আগে কখনো ভিডিওগ্রাফি করিনি। অনেকবার ভেবেছি। কিন্তু সেভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। ব্যস্ততায় তেমন সময়ও দেওয়া হয়নি। এখন দেড়-দুমাস ধরে লকডাউনে আছি। এই সময়ে আমি একটু একটু করে ভিডিও করা শিখেছি। নতুন কিছু শেখার আনন্দটাই আলাদা। ভালো লাগছে।’ শেখার পর থেকে বসে নেই ইরেশ। নিজের ক্যামেরা দিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি ২-৩ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা। আর প্রতিদিনই ইরেশ কিছু না কিছু শিখছেন এবং চালাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কে জানে, করোনাকাল একজন নির্মাতাকেই প্রস্তুত করছে কি না!

৩ / ৫
মোশাররফ করিম
মোশাররফ করিম

চিত্রনাট্য লিখলেন মোশাররফ করিম

মোশাররফ করিম যে কবি হতে চেয়েছিলেন এবং ভালো কবিতা লেখেন—এ তথ্য নিশ্চয়ই অনেকের জানা। বই পড়া তাঁর কাছে শখ নয়, নিত্যদিনের অভ্যাস। একটুখানি অবসর পেলে বই নিয়ে বসেন তিনি। ব্যস্ত দিনগুলোতে কতবার যে ভেবেছেন, বড় ছুটি পেলে নাটকের একটা চিত্রনাট্য লিখবেন। শুটিংয়ের মধ্যে অনেকবার অনেক নাটকের গল্প-সংলাপের উন্নয়ন ঘটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। নির্মাতাদের হয়ে আংশিক চিত্রনাট্যও লিখে দিয়েছেন একাধিকবার। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য না লেখা পর্যন্ত মোশাররফ করিমের নিশ্চয়ই আফসোস ছিল। প্রায় দেড় যুগের সে অতৃপ্তির অবসান হলো এই করোনাকালে। 

আর সবার মতো প্রায় দুমাস ধরে শুটিং থেকে দূরে আছেন মোশাররফ। সময়টা কাজে লাগালেন চিত্রনাট্য লিখে। এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন ‘তালাক’ নামের একটি নাটকের চিত্রনাট্য। প্রাথমিকভাবে নাম ঠিক হলেও, পরবর্তী সময়ে নাটকের নাম বদলেও যেতে পারে। মোশাররফ করিম বললেন, ‘অবসরে প্রথম কিছু দিন ভালোই কেটেছে। এমন সুযোগ সচরাচর হয় না। অবসরটাই আমার কাছে বিনোদন মনে হয়। কিছুদিন যাওয়ার পর মনে হলো, সময় কাটানোর জন্য আর কী করা যায়। তখন ভাবনায় আসে, এত দিন সময়ের অভাবে একান্ত নিজের মতো করে চিত্রনাট্য লেখা হয়ে ওঠেনি। তাহলে এখন তো লেখা যায়। লেখা শেষে ভালোই লাগছে। মাঝেমধ্যে সিনেমার গল্পও মাথায় উঁকি দিচ্ছে।’

৪ / ৫
ভাবনা
ভাবনা

বেশ আঁকছেন ভাবনা

ভাবনা জানতেন না কীভাবে ছবি আঁকতে হয়। বাসায় ছবি আঁকার জন্য রং-তুলিও ছিল না। কিন্তু করোনাকালে যে ওই আঁকাআঁকির ভূতটাই কাঁধে সওয়ার হলো। তাই আশনা হাবিব ভাবনা ছবি আঁকতে হাতে তুলে নিলেন তাঁর সাজসজ্জার সরঞ্জাম। মেকআপ বক্সের উপকরণ ও ব্রাশ দিয়েই এঁকে ফেললেন আস্ত একটি ছবি। সেই থেকে শুরু, করোনাকালে আর বিরতি নেই। এখন পর্যন্ত লকডাউনের এ সময়ে ৭০টির বেশি ছবি এঁকেছেন ভাবনা। তিনি বলেন, ‘১৮ মার্চ থেকে বাসায় বসে আছি। তখন বাবা কিছুটা অসুস্থ ছিলেন বলে মনটা খারাপ হয়ে থাকত। আমি নিয়মিত বই পড়ি, ছবি দেখি, কিন্তু সে সময়ে কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না। অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম। হঠাৎ ৩০ মার্চ ভোরে আমার মনে হয় নিজেকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা উচিত। তখনই মনে হয় ছবি আঁকব। করোনার এই অবসর না হলে হয়তো ছবি আঁকাটা হয়েই উঠত না।’

শুরুতে সাজসজ্জার সরঞ্জাম দিয়ে ছবি আঁকা শুরু করলেও ভাবনার এমন উৎসাহ দেখে রং-তুলি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী ও নির্মাতা অনিমেষ আইচ। ভাবনা জানালেন, শিগগিরই শততম ছবিটি এঁকে ফেলতে চান তিনি। করোনাকাল কেটে গেলে সবার সামনে তুলে ধরতে চান নিজের এই সৃষ্টিগুলো।

৫ / ৫
মিথিলা
মিথিলা

মিথিলার নাচে ফেরা

অভিনয় ও গানে নিজেকে বেশ আগেই চিনিয়েছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। তিনি যে নাচতেন, এ তথ্য কেউ কেউ হয়তো জানতেন। তবে করোনাকালে তাঁর নৃত্যশিল্পী পরিচয়টি অনেকেই জেনে গেল। প্রায় ১৫ বছর পর নাচে ফিরলেন এই শিল্পী। সম্প্রতি রবীন্দ্রজয়ন্তীতে নিজের নাচের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলেছেন মিথিলা। তাঁর নাচ দেখে বোঝার উপায় নেই যে দীর্ঘদিন তিনি নূপুরজোড়া তুলে রেখেছিলেন!

ছেলেবেলা থেকে মিথিলার নাচের চর্চা শুরু। স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানের মঞ্চে নাচতেন নিয়মিত। কিন্তু এরপর মিথিলা প্রকাশিত হয়েছেন গান ও অভিনয়ে। এত দিন পর আবার নাচে ফিরতে পেরে মিথিলা আনন্দিত, ‘অনেক দিন নাচ থেকে দূরে ছিলাম। নাচে বেশ সময় দিতে হয়; ব্যস্ততা বাড়ায় সে সময় হয়ে ওঠেনি। এবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর জন্য শাশুড়ি আমাকে উৎসাহ দেন কিছু করে পাঠাতে। তখন আমার মাথায় আসে নাচ করব। করোনার কারণে এই সময়ে বাসায় ছিলাম, সে জন্য নাচের অনুশীলনে কিছুটা সময় দিতে পেরেছি। সবাই যে আমার নাচ পছন্দ করেছেন, সে জন্য ভালো লাগছে।’