বেঁচে থাকলে জীবনে অসংখ্য আনন্দের ঈদ আসবে

আরিফিন শুভ। ছবি: প্রথম আলো
আরিফিন শুভ। ছবি: প্রথম আলো

এই ঈদে কোনো নতুন সিনেমা মুক্তি পায়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে গেল শুক্রবার নিজের কণ্ঠে গাওয়া গানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। উঠেছে তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেল। ‘মনটা বোঝে না’ শিরোনামে এ গানটি লিখেছেন কে জিয়া, সুর সংগীত করেছেন কে জিয়া ও ফুয়াদ এবং সংগীত করেছেন ফুয়াদ। এ ধরনের কাজ শুভর কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। গানটি প্রকাশের পর ভক্ত, সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন, বর্তমান সিনেমার অবস্থা—এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢালিউডের এই নায়ক।

ভিডিওটি প্রকাশের পর দর্শক, শ্রোতার প্রতিক্রিয়া কেমন?
সবাই পছন্দ করেছেন গানটি। আমি এতটা আশা করিনি। এটি আমার প্রথম গাওয়া একক কোনো গানের ভিডিও। তা ছাড়া গানটির ভিডিও বাসাতে বসেই করা। শুটিংয়ে তেমন কোনো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারেরও সুযোগ ছিল না। গানটি নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে সুন্দর লোকেশনে শুটিং করতে চেয়েছিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ি কাজটি করতে পারলে যা অবস্থা দেখছি, তাতে গানটি আরও উচ্চতায় চলে যেত।

গানটি নিয়ে পরিচিতজনদের কাছে কোন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
হ্যাঁ, তাঁরা তো বলছেনই। তাহসান, অদিত, ইমরান, নুসরাত ফারিয়া, ঐশী, পূজা, তাসকিনসহ অনেকেই প্রশংসা করেছেন। গানটি দেখে কেউ কেউ ফোন দিয়েছিলেন আমাকে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গানটি শেয়ার দিয়ে আমাকে প্রশংসা করেছেন। এতে নতুন করে আরও গান করার উৎসাহ পাচ্ছি।

নিজের কণ্ঠে গাওয়া গানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। ছবি: ইউটিউব থেকে।
নিজের কণ্ঠে গাওয়া গানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। ছবি: ইউটিউব থেকে।


করবেন নাকি?
সবাই অনলাইনে যেভাবে গানটির প্রশংসা করে লিখছেন, দেখে বোকা হয়ে যাচ্ছি। ভেতরে ভেতরে নতুন গান করার আগ্রহ বাড়ছে। ভাবছি করব। আগামী ঈদুল আজহার জন্য আরেকটি গান করতে পারি। তবে গান নিয়ে পেশাদার বা বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই। গানে কোনো ফোকাসও থাকবে না আমার। আমি সিনেমার নায়ক হিসেবেই নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই। গায়ক ফারহান আক্তার গান গেয়েছেন, তাঁদের গান জনপ্রিয় হয়েছে। ভক্তদের বিনোদন দিয়েছেন। এই করোনার মধ্যে আমি আমার ভক্তদের একটু ভিন্নভাবে বিনোদন দিতে চেয়েছি। শুধুই এতটুকুই।
গানটি নিয়ে নিজের ভালো লাগার জায়গাটা কতটুকু? কোন বিশ্বাস থেকে গানটি প্রকাশ করলেন?
ভালো লাগার জায়গাটা অনেক বেশি। আর আমার আত্মবিশ্বাস না থাকলে আনতাম না গানটি। কারণ আমি দেড় বছর ধরে গানটি রেখে দিয়েছিলাম। এই সময়টার মধ্যে আমি যাঁদেরই গানটি শুনিয়েছি, তাঁরা কেউই খারাপ বলেননি। প্রথমে তাঁরা বিশ্বাসই করতে চাননি এত সুন্দর করে আমি গান গাইতে জানি,পারি। সুতরাং বিশ্বাস ছিল বলেই গানটি দর্শকের জন্য প্রকাশ করেছি। সেই প্রমাণও পাচ্ছি। কারণ আমার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব মাত্র ১৩ হাজারের একটু বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজারেরও বেশি দর্শক গানটির ভিডিও দেখে ফেলেছেন। আমি গানটি নিয়ে তেমন কোনো প্রচারও করিনি। খালি নিজের ফেসবুক পেজ ও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার দিয়েছি গানটি।

করোনাভাইরাসের কারণে সিনেমার শুটিং, মুক্তি সব বন্ধ। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে সিনেমার অবস্থা নিয়ে কিছু ভাবছেন?
সিনেমার অবস্থা আগেই খারাপ ছিল। তবে এই বছরে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বাকিটুকু শেষ হয়ে গেল। এখন অবশিষ্ট আর কিছু নেই। এত দিন অনেকেই বড় বড় কথা বলেছেন। কাজ হয়নি। এখন সিনেমার সত্তর, আশি, নব্বই পেরিয়ে ২০০০ সালের অধ্যয় শেষ। আমার কাছে মনে হয় সিনেমা নতুন করে একেবারে গোড়া থেকে আবার শুরু হবে। সেটা নতুন ভাবনা, নতুন পরিকল্পনা, নতুন মানসিক শক্তি নিয়ে সিনেমা ঘরে দাঁড়াবে।

‘মনটা বোঝে না’ শিরোনামে এই গানটি সংগীত পরিচালনা করেছেন ফুয়াদ। ছবি: ফেসবুক থেকে
‘মনটা বোঝে না’ শিরোনামে এই গানটি সংগীত পরিচালনা করেছেন ফুয়াদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

কিন্তু কীভাবে সেটা?
কারণ করোনা–পরবর্তীকালে নতুন পৃথিবী পাবে মানুষ। এই সময়টাতে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছে না। নেটের মাধ্যমে মোবাইলে ফোনে মানুষের পকেটে সারা দুনিয়ার সিনেমা। মানুষ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশের ভালো ভালো সিনেমা দেখায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং নতুন দিনে মানুষ ওই সব বস্তা পচা জিনিস আর দেখতে চাইবেন না। আমাদের সিনেমায় আর সেন্ট্রালাইজড থাকবে না। দেশীয় সিনেমায় নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে, রুচিবোধের পরিবর্তন আসবে। মানুষকে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। যুগের সঙ্গে না থাকতে পারলে পুরোনোরা ঝরে পড়বেন। নতুন যুগের মানুষ আসবেন, নতুন নতুন কাজ আসবে। আমাদের সিনেমা বিশ্বদরবারে প্রতিযোগিতা করবে।

এবাবের ঈদটা কীভাবে পালন করবেন?
আমার একটাই কথা, ১০০ বছর আগের ভয়াবহ স্প্যানিশ ফ্লু শেষে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। এখন মানবসভ্যতার আরও উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থাও কেটে যাবে। কিন্তু আমরা যদি বুঝতে না চাই, তাহলেই বিপদ। এই ঈদে আমি ও আমার পরিবার একটা সুতাও কিনব না। ঈদে যদি আড্ডা দিতে মন চায়, তাহলে ভিডিও কলে কথা বলুন সবাই। আড্ডা দেন। ভাব বিনিয়ম করুন। ছবি তুলে পাঠান। দয়া করে কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না। আপনার তুচ্ছ বোকামির জন্য, আপনার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমিও ঈদের দিন বাসায় বসে বন্ধুদের সঙ্গে প্রচুর ভিডিওকলে কথা বলব। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা হবে। আমার ভক্তদের বলব, ঈদের আনন্দ করার জন্য বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বেঁচে থাকলে সামনের জীবনে অসংখ্য আনন্দের ঈদ আসবে।