'খুশির ঈদে'র দিনে আজ নজরুলের জয়ন্তী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর রমজানের শেষ দিন সন্ধ্যায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি বাজতে থাকে চারদিক। নানা আয়োজনে, টেলিভিশনের পর্দায় বিচিত্র পরিবেশনায় এই গানটি পরিবেশিত হয়। উৎসব-সংগীত হিসেবে নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য একটি গান। ধর্ম-নির্বিশেষে সবার মনে সমান দোলা দিয়ে যায় এই অসাধারণ নজরুল-সৃষ্টি। আজ রমজান শেষের খুশির ঈদের দিনই নজরুলের জন্মবার্ষিকী; ১২১তম নজরুল জয়ন্তী।

ঈদের দিন এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন পরিবেশে আজ তাঁকে স্মরণ করবে মানুষ। করোনাভাইরাসের প্রকোপে বহুদিন ধরেই জনসমাগম নিষিদ্ধ। তাই প্রতিবছর যেমন আয়োজন করে উদযাপন করা হয় দ্রোহের কবির জন্মদিন, এ বছর সেভাবে পালন করা যাবে না। তাই বলে থেমে থাকবে না জন্মদিনের উৎসব। ভার্চ্যুয়াল নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হবে জন্মোৎসব। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শীর্ষক আনুমানিক ৫০ মিনিটের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আজ বেলা ১১টা বা নিকটতম সময়ে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের সঙ্গে নাচ করেছেন দেশ-বিদেশের নৃত্যশিল্পীরা। করোনাকালে কবির জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর গানে গানে নাচের আয়োজন করেছেন তাঁরা। সেসব নাচের ভিডিও জড়ো করে একযোগে প্রকাশিত হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। নজরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘কবি নজরুল ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যেখানেই অন্যায়-অবিচার, সেখানেই কবির কলম হয়ে উঠেছে খাপছাড়া তলোয়ার। বিশ শতকের প্রথম দুই দশকে যখন নজরুলের শৈশব, কৈশোর অতিক্রান্ত হচ্ছিল উপমহাদেশে, তখন স্বাধীনতা আন্দোলন ও ব্রিটিশ শাসনবিরোধী সংগ্রাম চলছিল।’ তিনি বলেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে নজরুলের অবিনশ্বর উপস্থিতি বাঙালি জাতির প্রাণশক্তিকে চিরকাল জাগরিত রাখবে।’
এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বলেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম ও কর্মে।’ নজরুলকে প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, পাশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কবি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ইন্তেকাল করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
নজরুলের রচনায় ধ্বনিত হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। কবিতার পাশাপাশি বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই প্রথম বাংলা গজলের প্রবর্তন করেন এবং একে উত্তর ভারতীয় রাগ সংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ও বৈভবের কাছে। ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় কবির চেতনা ও আদর্শ চিরভাস্বর হয়ে আছে আমাদের জীবনে।