আনিসুল হকের ইশতেহার ২০২০-এর আবৃত্তির ভিডিওতে ব্যাপক সাড়া

কবি ও লেখক আনিসুল হকের দীর্ঘ কবিতা ‘ইশতেহার ২০২০’ আবৃত্তি শুনেছেন ১২ লাখের বেশি মানুষ। এ কবিতার আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছেন দেশের ১০ জন বিখ্যাত আবৃত্তিকার, বিশিষ্টজন। আবৃত্তি করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমা রহমান, হাসান আরিফ, শিমুল মুস্তাফা, তাহসিন রেজা, শারমিন লাকি, শারমিন মুস্তাফা ও অপি করিম।


বিশ্বব্যাপী বর্তমান করোনাকালের সময়কে ধারণ করা ৯২৫ শব্দের এক দীর্ঘ কবিতা! ‘ইশতেহার ২০২০’ শিরোনামে আনিসুল হকের লেখা কবিতাটি গত ১৮ এপ্রিল ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায়। পাঠকমহলে দারুণ সাড়া ফেলে সেটি। প্রথম আলোর উদ্যোগে এ কবিতার আবৃত্তির ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেছেন রেদোয়ান রনি। তাঁকে সহযোগিতা করেন গীতিকার কবির বকুল।


১৮ মে রাতে এটা প্রথম আলো ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। ২৬ মে বেলা ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত দর্শক ও শ্রোতার সংখ্যা হয়েছে ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬০। প্রথম আলোর ফেসবুকে ভিডিওটি প্রকাশের পরই শুরু হয় আলোচনা। এ ভিডিওর নিচে মন্তব্য ঘরে সৈয়দা তুহিন চৌধুরী লিখলেন, ক্ষমতাতন্ত্র ও আধিপত্যকামিতার বিরুদ্ধে কবির সাহসী উচ্চারণ। বাদল সৈয়দ লিখলেন, এ কবিতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম করোনার দুঃসময়ের কথা বলে যাবে। শ্যামল চন্দ্রনাথ লিখেছেন, সময়ের দাবিকে তুলে আনার মধ্য দিয়ে এই কবিতায় রয়েছে প্রতিবাদী ও মর্মস্পর্শী প্রয়াস।


কবিতাটির আবৃত্তিতে অংশ নেন প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। তিনি বলেন, ‘কবিতাটি পড়ে মনে হয়েছে, পুঁজিবাদী যে ব্যবস্থা দুনিয়াটাকে খেয়ে ফেলছে, এই দর্শনটাকে বদলাতে হবে। এ পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী, কারণ আমরাই ট্রাম্প তৈরি করি।’


শারমিন লাকি এত চমৎকার একটা আয়োজনের সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করার জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এত গুণী মানুষের ভেতর যে আমার ঠাঁই হয়েছে, সে জন্য কৃতজ্ঞতা। যেমন কবিতা, তেমন অডিও, তেমন ভিজ্যুয়াল। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এটা এমন একটা কাজ, যেটা আমাকে দর্শক শ্রোতাদের মাঝে বেশ কিছুদিন জিইয়ে রাখবে।’


হাসান আরিফ বলেন, ‘আমরা ঘরে বসে, সমাজবদ্ধ অবস্থান থেকে, জাতীয় ও ভৌগোলিক অবস্থান থেকে এই সময়টাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি। এই করোনা পরিস্থিতিকে সামগ্রিকভাবে বুঝতে হলে পৃথিবীর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, দখলদারত্ব, আধিপত্য, প্রতিযোগিতা—সবটাই জানতে হবে। এই কবিতায় সেই চিত্রটা সম্পূর্ণভাবে এসেছে।’


কবিতাটির লেখক আনিসুল হক বলেন, ‘এ কবিতায় আমি বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্বনেতাদের দায়ী করার পাশাপাশি আমার নিজেকে এবং আমাদের দায়ী করেছি। কারণ যে ভয়াবহ অন্যায়ভরা, বৈষম্যভরা, অমানবিক পরিবেশবিরোধী, মুনাফালোভী, যুদ্ধোন্মাদ ব্যবস্থা বা সিস্টেম কায়েম হয়ে আছে, তার উচ্ছিষ্টভোগী হিসেবে আমি বা আমরা কোনো প্রতিবাদের মতন প্রতিবাদ করিনি, প্রতিরোধ গড়ে তুলিনি।’


ভিডিও নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘কবিতার কথাগুলো সবার। এই অসময়েও আবৃত্তিশিল্পীরা এর সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন, এটা আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে।’


কবিতাটিতে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। সেটি প্রথম আলো ইংরেজি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর আয়োজনের বাইরেও আরও অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কবিতাটি অনুবাদ করেছেন এবং আবৃত্তি করেছেন। কবিতাটি দেশের বাইরেও আলোচিত হতে শুরু করেছে। ভারতে এটি হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।