নওয়াজুদ্দিনের বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। ছবি: ফেসবুক থেকে।
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। ছবি: ফেসবুক থেকে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের এক কৃষক পরিবারে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর জন্ম। ভাগ্যের অন্বেষণে একসময় দিল্লিতে পাড়ি জমান। সেখানেই মঞ্চ অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে এই অভিনেতার। পরে তাঁকে ভারতের জাতীয় নাট্যশালায় দারোয়ানের চাকরি করতে হয়েছিল দেড় বছর। এভাবেই নাট্যশালার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেখান থেকে বড় পর্দায়। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নিজেকে। ‘মাঝি দ্য মাউন্টেন ম্যান’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন এই অভিনেতা। সে সময় টুইটারে নওয়াজুদ্দিন সম্পর্কে ভারতের প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা লিখেছিলেন, ‘নওয়াজুদ্দিন এ শতকের সেরা আবিষ্কার।’

সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান নিজেকে আজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলিউডে। অনেক প্রসংশা, বিশেষণ তাঁর নামের সঙ্গে। কিন্তু আলোর বিপরীতে নিকষ কালো অন্ধকার। সুনামের পাশাপাশি নওয়াজুদ্দিনের বদনামও কম নয়। সে সূত্রে দিনকাল মোটেও ভালো যাচ্ছে না তাঁর। ৭ মে নওয়াজের হোয়াটসঅ্যাপ ও ই–মেইলে তালাকের আইনি নোটিশ পাঠান তাঁর স্ত্রী আলিয়া সিদ্দিকী। অভিযোগ গুরুতর। অভিযোগ ব্যক্তি নওয়াজ এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। শুধু স্ত্রী নন, অভিযোগ করেছেন সাবেক প্রেমিকাও।

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি ও স্ত্রী আলিয়া সিদ্দিকী। ছবি: ফেসবুক থেকে।
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি ও স্ত্রী আলিয়া সিদ্দিকী। ছবি: ফেসবুক থেকে।

পারিবারিক নির্যাতন
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন আলিয়া সিদ্দিকী। তাঁর প্রকৃত নাম অঞ্জনা কিশোর পাণ্ডে। অভিযোগ, নওয়াজ গায়ে হাত না তুললেও অভিনেতার ভাই শামাস সিদ্দিকি আলিয়াকে মারধর করেছেন।

বলিউডলাইফকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নওয়াজের স্ত্রীর অভিযোগ, ‘নওয়াজ আমার ওপর কোনো দিনও হাত তোলেনি। কিন্তু ওর চিত্কার, ঝগড়া আমার পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। শুধু ওটাই (মারধর) বাকি ছিল। কিন্তু ওর পরিবার আমার ওপর মারাত্মক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে। ওর ভাই আমাকে মেরেছে পর্যন্ত। ওর মা, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী মুম্বাইতে আমাদের সঙ্গেই থাকত। অনেক বছর ধরে আমি এগুলো সহ্য করছি। ওর প্রথম স্ত্রী ঠিক একই কারণে ওকে ছেড়ে গিয়েছিল।’
এখানে শেষ না, তাঁর স্ত্রীর দাবি এটি নাকি সিদ্দিকী পরিবারের ঐতিহ্য! সিদ্দিকী পরিবারের স্ত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত সাতটা এই ধরনের মামলা করেছেন। আজ পর্যন্ত চারটে ডিভোর্স হয়েছে ওই পরিবারে, এটা পাঁচ নম্বর। তাদের পরিবারটাই ওই রকম। লোকলজ্জা ঢাকার অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছি, কিন্তু আর কত সহ্য করব!’

আলিয়া সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার আত্মসম্মানটা ওরা সবাই মিলে ধ্বংস করে দিয়েছে। পরিবার–পরিজন ছেড়ে আমি শুধু ভালোবাসার টানে এসেছিলাম ওর ঘরে। কিন্তু আমার জীবনটা খুব বাজেভাবে পাল্টে গেল।’
মুম্বাইয়ের ‘স্পটবয়’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলিয়া জানান, একটা নয়, তাঁর সঙ্গে নওয়াজের বিচ্ছেদের হাজারটা কারণ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘সারা জীবন আমাকে অপমান করে গিয়েছে ও। “গ্যাংস অব ওয়াসিপুর” ছবির পর হঠাৎ করেই ওর নামডাক হতে শুরু করে। এরপরেই আমার প্রতি ওর আচরণ বদলে যেতে থাকে। আমরা যখন বিয়ে করি, তখন নওয়াজের কিচ্ছু ছিল না। তখন বাসা ভাড়া আমি চালাতাম। এখন ওর চারটে বাংলো হয়েছে, কিন্তু একটা সময় কী ছিল ওর? আজ সব ভুলে গিয়েছে ও। সব।’
অভিযোগে আরও বলেন, ‘আমার সন্তানের তখন ছয় মাস বয়স। সে সময় প্রায় এক বছরের মতো সময় ধরে একা ছিলাম আমি। আমি ওকে বিয়ে করেছিলাম বলে আমার পরিবারও আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল। শুধু তা–ই নয়, আমি বাইরে বেরোলেই ওর গার্ল ফ্রেন্ডরা বাড়িতে ঢুকত।

নওয়াজের পুরোনো প্রেমিকা নীহারিকা সিং। ছবি: ফেসবুক থেকে।
নওয়াজের পুরোনো প্রেমিকা নীহারিকা সিং। ছবি: ফেসবুক থেকে।

পুরোনো প্রেমিকা নীহারিকার অভিযোগ
বেশ কিছু আগেই নওয়াজের পুরোনো প্রেমিকা নীহারিকা সিং অভিযোগ এনেছিলেন, অভিনেতার অবদমিত কামের শিকার তিনি। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোর করতেন নওয়াজ, এমনটাই বলেছিলেন নীহারিকা। নীহারিকা সিংয়ের সেই অভিযোগ টুইটারে প্রকাশ করেছেন সন্ধ্যা মেনন। তিনি লিখেছেন, নীহারিকার সঙ্গে নওয়াজের পরিচয় হয় ২০১২ সালে ‘মিস লাভলি’ ছবির শুটিংয়ে। একবার সারা রাত শুটিং করে সকালে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ফিরছিলেন। ফোনে তিনি নীহারিকাকে জানান, তাঁর বাড়ির খুব কাছাকাছি তিনি আছেন। নীহারিকা তাঁকে প্রাতরাশ করার জন্য বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী আসার পর বাড়ির দরজা খুলতেই তিনি নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরেন। নীহারিকা তাঁর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে খুব অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন নীহারিকা। নীহারিকা জানতে পেরেছিলন, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী নিজের জীবনের অনেক সত্য তাঁর কাছে লুকিয়েছিলেন। তিনি যে বিবাহিত, এ কথা নীহারিকা অন্যদের কাছ থেকে জেনেছিলেন। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর জীবনের এসব ঘনটা জানার পর নীহারিকা এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন।
তাহলে কি নওয়াজের অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং অবদমিত যৌনতাড়নাই বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ? উঠেছিল প্রশ্ন।

সন্তানদের সময় দেন না
সন্তানদের জন্য নওয়াজুদ্দিনের হাতে নাকি সময় নেই। এমন অভিযোগ করে স্ত্রী আলিয়া বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা মনেও করতে পারবে না শেষবার বাবাকে কবে দেখেছে! তিন-চার মাস হলো ছেলেমেয়ের সঙ্গে ও দেখা করেনি। ওরা একদমই বাবার সঙ্গে জড়িত নয়, জিজ্ঞাসাও করে না বাবার কথা। আমি আমার সন্তানদের সম্পূর্ণ নিজের কাছে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালন করেনি নওয়াজ। একা একা সন্তানের বড় করেছি। তিন–চার মাসে একবার ফোন করত আমাদের। এবং তাও অফিসের নম্বর থেকে। কিছু বললে বলত, আউটডোর শুটিংয়ে রয়েছি।’

মুখ খোলেননি নওয়াজ
ডিভোর্স বিজ্ঞপ্তি আর নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। তবে তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ঘুমকেতু’তে ব্যক্তিগত জীবনের কেচ্ছা বেশ প্রভাব ফেলেছে। সে কথা এক সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজেই স্বীকার করেছেন নওয়াজ। আলিয়া ডিভোর্সের নোটিশ পাঠালেও এখন পর্যন্ত সে চিঠির কোনো জবাব দেননি নওয়াজ। তিনি বর্তমানে উত্তর প্রদেশের বুধানায় দেশের বাড়িতে আছেন। ১৫ মে মুম্বাই থেকে সড়কপথে সেখানে পৌঁছান অভিনেতা। টুইট বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, বোনের মৃত্যুর পর মায়ের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার জন্যই লকডাউনেও দেশের বাড়ি ফিরেছে তাঁর পরিবার।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আলিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় নওয়াজের। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে।