নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা, খুঁজছে ত্রিপুরার পুলিশ

গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: প্রথম আলো।
গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি: প্রথম আলো।

ভারতের টেলিভিশনের চ্যানেলে গান গেয়ে পরিচিতি পাওয়া গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল, এখন ভারতে যাওয়ামাত্রই গ্রেপ্তার হবেন। মামলা হওয়ার পর থেকে তাঁকে খুঁজছে ত্রিপুরার পুলিশ। ২৫ মে ত্রিপুরার বিলোনিয়া থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। এদিকে মামলার বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন নোবেলও।

বর্তমানে নতুন গান নিয়ে ব্যস্ত নোবেল । ছবি: প্রথম আলো।
বর্তমানে নতুন গান নিয়ে ব্যস্ত নোবেল । ছবি: প্রথম আলো।

বুধবার রাতে নোবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে, শুনেছি। আমি আপাতত নতুন গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিং নিয়ে ব্যস্ত। কাল এটা নিয়ে ভাবব।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য করায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ত্রিপুরার বিলোনিয়ার সুমন পাল। স্থানীয় বিলোনিয়া থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলাটি করা হয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, নোবেলের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের একটি করে প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কাছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ভারতে ঢোকামাত্রই গ্রেপ্তার হবেন নোবেল। তাঁকে ত্রিপুরা পুলিশ খুঁজছে।

যোগাযোগ করা হলে আগরতলা থেকে সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। এখানকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নোবেলের মামলার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।’

জানা গেছে, সুমন পাল অভিযোগপত্রে তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মন্দ মন্তব্য করায় নোবেলের ভারতের ভিসা বাতিল এবং তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এর আগে বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধেও কুরুচিকর মন্তব্য করে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন নোবেল।

সুমন পাল সংবাদমাধ্যমে জানান, একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন কুৎসাপূর্ণ মন্তব্য মেনে নিতে পারেননি, তাই নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য নোবেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

জি বাংলার সারেগামাপা অনুষ্ঠানে গান গেয়ে যখন সবার প্রশংসায় ভাসছিলেন, ঠিক তখনই বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন নোবেল। সারেগামাপা অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড ফিনালের আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বদল করার মন্তব্য করেন তিনি। সে সময় তিনি এ-ও বলেছিলেন, বাংলাদেশে তাঁর কাজ করার মতো কোনো সংগীত পরিচালক নেই। এমনকি তাঁর সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গান গাওয়ার যোগ্যতা দেশের কোনো নারী শিল্পী রাখেন না।

ভারতের জি বাংলার সারেগামাপা অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর নোবেল ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ‘সুনন্দা’ শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করবেন। সেটির খবর না দিতে পারলেও ‘তামাশা’ প্রচারণা করতে গিয়ে সমালোচনার শিকার হন নোবেল। গানের প্রচারের কৌশল হিসেবে দেশের সংগীতের কিংবদন্তিদের নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করে ১৯ মে বিতর্কে জড়ান। নিজের ফেসবুক পেজে নোবেল বলেছেন, ‘লিজেন্ডদের আমি শেখাব কীভাবে ২০২০ সালে মিউজিক করতে হয়!’ ভারতের রিয়েলিটি শো পরিচিতি পাওয়ার পর বিতর্কের জন্ম দেওয়া নোবেলের এ ধরনের কথা শুনে দেশের সংগীতাঙ্গনের অনেকেই অবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। অনেকে এটাকে পাগলের প্রলাপও বলছেন।

ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলার দাদাগিরি অনুষ্ঠানে নোবেল।ছবি: ফেসবুক থেকে
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলার দাদাগিরি অনুষ্ঠানে নোবেল।ছবি: ফেসবুক থেকে

হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই নোবেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে শুরুতে কেউ বিশ্বাস করতে চাননি। ভেবেছিলেন, হয়তো ফেসবুক পেজ হ্যাক করে কেউ লিখে দিয়েছেন। তাই লিজেন্ডদের নিয়ে এভাবে লিখেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, যিনি দেশের জাতীয় সংগীত বদল করার কথা বলতে পারেন, তাঁর পক্ষে দেশের কিংবদন্তিদের নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলাটা কোনো বিষয়ই নয়। পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফেসবুক লাইভে আসেন নোবেল। তখন সবাই নিশ্চিত হয়ে যান, জেনে-বুঝে নোবেল এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলেছেন। ফেসবুক লাইভে নোবেলও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, তিনি জেনে-বুঝে পোস্টটি দিয়েছেন। লাইভে তিনি বলেছেন, ‘অ্যা ভাই, কী শুনলাম আমি। পেজ নাকি হ্যাক হইছে। কই পেজ তো হ্যাক হয়নি। আমি তো নোবেল। দেখেন রক্ত-মাংসের নোবেল। গাল টানলে গাল বাড়ে, নাক ধরা যায়। আমি নোবেল। সো নো প্রবলেম।’

সম্প্রতি নোবেলের বিয়ের খবর প্রকাশ পায়। ছবি: ফেসবুক থেকে
সম্প্রতি নোবেলের বিয়ের খবর প্রকাশ পায়। ছবি: ফেসবুক থেকে


এদিকে গান নিয়ে সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঈদের পরই সাত মাস আগে সেরে নেওয়া বিয়ের খবরটি প্রকাশ্যে চলে আসে। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে এটি নোবেলের তৃতীয় বিয়ে হিসেবে চাউর হতে থাকে। প্রথম আলোর কাছে নোবেল দাবি করেছেন, তৃতীয় বিয়ের ব্যাপারটি পুরোটাই মিথ্যা। ২৬ মে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এর আগে কোনো মেয়ের বিয়ে হয়নি। তবে আমার সঙ্গে অনেক মেয়ের রিলেশন ছিল। এত মেয়ের রিলেশন ছিল যে গুনে শেষ করা যাবে না। এ অবস্থায় এখন যদি বলা হয় এটি আমার তৃতীয় বিয়ে, এটি ঠিক না। তৃতীয় বিয়ের খবরটি গুজব, বিভ্রান্তিকর।’

নোবেল আরও জানিয়েছেন, নতুন গান ‘তামাশা’র কাজ শেষ। ইমন চৌধুরী মিক্স মাস্টারিং করছেন। বুধবার গানটির ভিডিওর শুটিং হয়েছে। ২৯ মে প্রোমো ছাড়ার ইচ্ছা আছে। ৭ জুন গানটি ইউটিউবে প্রকাশিত হবে।

ভারতের টিভি চ্যানেল জি বাংলার সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো সারেগামাপার মাধ্যমে দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় হয়েছেন মাঈনুল আহসান নোবেল।

গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেল বড় হয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। লেখাপড়া করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতে। মাথায় গানের পোকা ঢোকে কলকাতায় থাকতেই। মাত্র ৬০০ টাকায় পুরোনো সিগনেচার ব্যান্ডের গিটার কিনে তা দিয়েই শুরু করে দেন সংগীতচর্চা। কলকাতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় ফেরেন নোবেল। এভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা করতে করতে নোবেলের সঙ্গে গানের প্রেম পোক্ত হয়ে যায়।