মুখে কালি মেখে প্রতিবাদ জলের গানের রাহুল আনন্দের

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয় বাউল রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে। গতকাল শনিবার এর প্রতিবাদে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে `বাউল সংহতি` ব্যানারে গানের অনুষ্ঠান করেন। এতে জলের গানের সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ মুখে কালি মেখে ঘটনার অভিনব প্রতিবাদ জানান। ছবি : সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয় বাউল রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে। গতকাল শনিবার এর প্রতিবাদে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে `বাউল সংহতি` ব্যানারে গানের অনুষ্ঠান করেন। এতে জলের গানের সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ মুখে কালি মেখে ঘটনার অভিনব প্রতিবাদ জানান। ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় বাউল রণেশ ঠাকুরের বাড়ি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে 'বাউল সংহতি' ব্যানারে বাদ্যবিহীন প্রতিবাদী গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গতকাল শনিবার রাত আটটায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে অংশ নিয়ে জলের গানের সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ মুখে কালি মেখে ঘটনার অভিনব প্রতিবাদ জানান।

টানা আড়াই ঘণ্টা এ অনুষ্ঠান চলে। অংশ নেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও 'জলের গান'-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দ। প্রায় সোয়া ৯ মিনিটের পরিবেশনায় তিনি মুখে কালি মেখে এবং গান ও ছবি আঁকার খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে বাউলের গানের ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানান।

'সলিডারিটি কনসার্ট ফর রণেশ ঠাকুর' শীর্ষক পরিবেশনার শুরুতেই রাহুল আনন্দ আক্ষেপ করে বলেন, 'আমি কোনো প্রতিবাদ, ঘৃণা, অন্যায়, অবিচারের জন্য বিচার চাইতে আসিনি। আগুনটা তো শুধুমাত্র রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে দেওয়া হয়নি; সে আগুনের আঁচ আমার ঘরেও এসেছে, এমনকি আপনার ঘরেও পড়েছে। কেন বাউলের ঘরে আগুন? বাউল তো সাম্যের কথা বলে, বাউল সুন্দরের কথা বলে।' এভাবে কিছুক্ষণ সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর তিনি গাইতে শুরু করেন 'মন মুনিয়া জানে রে তোর মনেরই বেদন' গানটি।

গান পরিবেশনার পাশাপাশি রাহুল আনন্দ দুই হাত দিয়ে তাঁর পুরো মুখে কালি লেপ্টে দেন। একই সঙ্গে তিনি তাঁর গানের খাতার পৃষ্ঠা আর ছবি আঁকার পাতাও ছিঁড়েন। গান পরিবেশনার পাশাপাশি তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ ছুঁয়ে যায় দর্শনার্থীদের। বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন দিয়ে বাউলের বাদ্যযন্ত্র আর ৪০ বছরের গানের সংগ্রহশালা নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মাধ্যমে শিল্পী ও শিল্পের যে অবমাননা হয়েছে, তারই প্রতিবাদ জানান রাহুল আনন্দ।

রাহুল আনন্দের পর যেসব শিল্পী পরিবেশনায় এসেছেন, তাদেরও ছুঁয়ে গেছে এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদী ঘটনা। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আয়োজনের সমন্বয়ক উজ্জ্বল দাশ। প্রথমেই গান পরিবেশনায় অংশ নেন বাউল রণেশ ঠাকুর। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও কনক আদিত্য, বাউল শফি মণ্ডল, বশিরউদ্দিন সরকার ও সূর্যলাল দাস, সৈয়দ হাসান টিপু, পিন্টু ঘোষ, আশিক, শিবু কুমার শীল ও প্রকাশ, কলকাতার শিল্পী দেব চৌধুরী ও রাজীব দাশ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তাজুল ইসলাম, লন্ডন প্রবাসী অমিত দে, গৌরী চৌধুরী ও সোহিনী আলম, জার্মানি প্রবাসী শবনম সুরিতা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পারমিতা দে প্রমুখ অংশ নেন।

রণেশ ঠাকুর দিরাইয়ের প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের অন্যতম শিষ্য। ১৭ মে মধ্যরাতে দিরাইয়ের উজানধল গ্রামে তাঁর গানের আসরের ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার এক দিন পর দিরাই থানায় রণেশ ঠাকুর মামলা করেন। এ ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।