করোনায় মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যু

মোস্তফা কামাল সৈয়দ। ছবি: সংগৃহীত
মোস্তফা কামাল সৈয়দ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান), এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ দুপুর দেড়টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন।

এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। তিনি আজ দুপুরে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি কোভিড–১৯ পজিটিভ ছিলেন।

একজন স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবে পরিচিতি ছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা।

মূলত পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে একজন সজ্জন, বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। ৮০ দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সংগীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সুচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশির ভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ।

বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি টেলিভিশন জগতে অনন্য অবদান রাখা এ মানুষটি একেবারে আলাদা জীবন যাপন করতেন। তিনি কখনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। নাটক ও অনুষ্ঠান নির্বাচনেও সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলে নিতেন।

মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ৭০ দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদ লেখা ‘প্রজাপতি মন’, ৮০ দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘কুল নাই কিনার নাই’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কুল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।

মোস্তফা কামাল সৈয়দ কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন টিভি চ্যানেলে। ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকে তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান ছিলেন। ৫২ বছরের কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান টিভিতেও শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন।

জানা গেছে, বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে মোস্তফা কামাল সৈয়দকে। দাফনের সময় ও জানাজার বিষয় সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পরিবারই নির্ধারণ করবে।