অর্ধেকেরও কম পারিশ্রমিক নেবেন শাকিব

শাকিব খান।  ছবি: প্রথম আলো
শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো

করোনায় সব ওলোট–পালোট। সবাইকে সবকিছু নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। গভীর সংকটে পড়া দেশের চলচ্চিত্র নিয়েও ভাবছেন দেশের সিনেমার এক যুগের সেরা নায়ক শাকিব খান। করোনা–পরবর্তী চলচ্চিত্রজগৎ বাঁচাতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, এখন থেকে ছবিপ্রতি পারিশ্রমিক তিন ভাগের এক ভাগ নেবেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্য সবাইকেও আহ্বান করছেন সেই সিদ্ধান্তে সাড়া দিতে।

শাকিব জানালেন, চলতি মাসের শেষ দিকে শুটিংয়ে ফিরতে পারেন তিনি। নতুন ছবি দিয়েই হবে তাঁর ফেরা। এদিকে করোনার পর অনেক প্রেক্ষাগৃহ খুলবে কি না, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। শাকিব বললেন, '৫০টি প্রেক্ষাগৃহ নিয়েই এগোব। সবাই আমার পাশে থাকুন। চলচ্চিত্র–অন্তঃপ্রাণ মানুষেরা থাকলেই চলবে। ভালো গল্প, ভালো পরিচালক, ভালো টেকনিশিয়ান আর একজন চলচ্চিত্রপ্রেমী প্রযোজক—আর কিছুরই দরকার নেই। দরকার হয় আগের মতো দিনরাত পরিশ্রম করে শুটিং করব।' 

শাকিব জানালেন, করোনার এই সময়টায় নতুন কিছু ছবির গল্প নির্বাচন করেছেন। কালজয়ী কিছু সিনেমা রিমেক করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। বানাতে পারেন বায়োপিকও।


চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালকদের মতে, শাকিব খান ছবিপ্রতি সম্মানী নেন ৬০ লাখ, কেউবা বলেন ৫০ লাখ, আবার কারও মতে ৭০ লাখ। প্রযোজক-পরিচালকদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ, শাকিব যদি ছবিপ্রতি তাঁর সম্মানী কমিয়ে দিতেন, অনেক বেশি ছবি তৈরি হতো। দেশের চলচ্চিত্রের চিত্রটা অন্য রকম হতো।

দেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নায়ক ভেবেছেন, আপাতত আগের সম্মানী নয়। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে নিজের সম্মানী কমানোর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। শুধু তা–ই নয়, চলচ্চিত্রের অন্য সবারও সম্মানী তিন ভাগের এক ভাগ করতে হবে বলে শাকিবের আহ্বান।


কথায় কথায় শাকিব আরও জানিয়ে রাখলেন, ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও অবশ্যই লাগবে। বিগত দুই বছরে যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ছবি বানিয়েছে, কাদের ছবির প্রতি দর্শকের আগ্রহ, সরকারি প্রণোদনা তারা যেন পায়। ছবিপ্রতি ৭০ লাখ টাকা বাজেট ধরে বছরে ২৫টি ছবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই যথেষ্ট। দুই বছরে ৩৫ কোটি টাকা। শাকিব বলেন, 'সরকার আন্তরিক হলেই দুই বছরে ৫০টি ছবিতে প্রণোদনা কিছুই নয়। তবে এসব প্রণোদনা যেন দলীয় বিবেচনায় না হয়।'


কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রণোদনা পেতে পারে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নে শাকিব জানালেন, আমি চাই যাঁরা আন্তরিকভাবে ছবি বানাচ্ছেন, তাঁরাই যেন এই প্রণোদনা পান।

ছবি তৈরি হলেও তো সামাজিক দূরত্বের কারণে প্রেক্ষাগৃহ দর্শক যাওয়া নিয়ে একটা শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এই বিষয়ে বিকল্প ভাবতে হবে কি? প্রেক্ষাগৃহগুলো সময়োপযোগী করতে হবেই। ছবি শুধু দর্শক প্রেক্ষাগৃহে দেখতে চায় না। ব্যবসার নানা উইন্ডো আছে। ডিজিটালিও বড় মার্কেট তৈরি আছে। আমি তো এসকে অ্যাপস বানানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। জীবন কিন্তু বসে থাকে না। করোনায়ও মানুষ গান গাইছে, ঘরে বসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছবি দেখছে। করোনার মধ্যেও এই সেক্টর থেকে বিনোদন অঙ্গন লাভবান হয়েছে।


চলচ্চিত্রকে কীভাবে চাঙা করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন শাকিব খান। এই সময়টায় তিনি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বন্ধু, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। সবাইকে তিনি সিনেমার এই সংকটে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরাও শাকিবকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানালেন।


অনেকের অভিযোগ, করোনায় শাকিব খানকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। একদম চুপ! এ প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, 'সহযোগিতা ঢাকঢোল পিটিয়ে করব! আমার মতো যা করার করেছি, করেও যাচ্ছি, আগামী দিনেও করব। দেখিয়ে করার কিছুই নেই।'