অসুস্থ, চার দেয়ালে বন্দী অভিনেতা প্রবীর মিত্র

প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

অভিনয় দিয়েই দর্শককে আনন্দে ভাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন। পাঁচ দশকের অভিনয় দিয়ে অর্জন করেছেন মানুষের ভালোবাসা। দেশের চলচ্চিত্রের গুণী এই মানুষটির সময় কাটছে ঘরে শুয়ে-বসে। ছবিতে কাজ করছেন না বছর তিনেক হলো। গেল মাসে পা পিছলে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। তিনটি সেলাই দিতে হয়। প্রবীর মিত্রর সময় কাটছে সেগুনবাগিচার বাড়িতে। বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটান।


কয়েক মাস আগে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস থাকলেও করোনার এই সময়ে পরিবারের সবাই তাঁকে টেলিভিশন থেকে দূরে রাখছেন। তবে সবাই মিলে বসলেই তিনি টিভির সামনে বসেন। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন আর্থ্রাইটিসে। হাঁটুর ব্যথার কারণে ঘর থেকে বেরও হন না। একরকম চার দেয়ালে বন্দী ও প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন তিনি।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যে প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্রের দৃশ্যে প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

বড় ছেলের বউ সোনিয়া জানালেন, অস্টিওপোরোসিসেও ভুগছেন তাঁর শ্বশুর। তাঁর হাড়ে ক্ষয় ধরেছে। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, আবার কদিন ভালো থাকেন। কারও সাহায্য ছাড়া চলতেও পারেন না। ইদানীং কানেও কম শুনছেন।
কিছুদিন আগে প্রবীর মিত্রই বলছিলেন, ‘আমি ক্লান্ত। লাঠিতে ভর করে হাঁটি। এ অবস্থায় সিনেমায় কাজ করা যায় না। তাই সারা দিন বাসায় থাকি। চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা ছাড়া বাইরে বের হই না।’


দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ, সেটা জানেন না প্রবীর মিত্র। পরিবারের মানুষেরা তাঁকে সেসব জানাননি। তবে করোনাভাইরাস নামে যে দেশে কিছু একটা এসেছে, সেটা জানেন। সোনিয়া বললেন, ‘আমরা জানাতে চাইনি, কারণ তিনি ভয় পাবেন। যদিও তিনি মানসিকভাবে বেশ শক্ত।’


ঢালিউডের একসময়ের ব্যস্ত অভিনেতার ব্যস্ততাগুলো এখন কেবলই অতীত। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটতেন কাকরাইল ফিল্ম পাড়া বা এফডিসিতে। সহশিল্পীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতেন। এখন তা হয় না।


যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করেছেন, সেখানকার দু-একজন ছাড়া কেউ তেমন খোঁজ-খবর নেন না। প্রবীর মিত্র বলেন, ‘আগে সবার সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। এখন মাসের পর মাস অনেকের সঙ্গে দেখা হয় না, কথা হয় না। এটা পীড়া দেয়। আমার সবাইকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাদেরও হয়তো ইচ্ছে হয়। কিন্তু দেখাটা হয়ে ওঠে না। যা-ই হোক, সবকিছু মেনে নিতে হয়।’

প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে মাঝেমধ্যে লোক যান প্রবীর মিত্রর বাসায়, খবর নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া আর কেউ খবর নেন না, ফোনও করেন না। ভীষণ কাজপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। কাজ করতে না পারায় ভীষণ আক্ষেপ তাঁর।


স্ত্রী মারা গেছেন ২০‌০০ সালে। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলে আকাশ মারা গেছেন ২০১২ সালে। বড় ছেলেকে নিয়ে সেগুনবাগিচায় থাকলেও মেজ ছেলে আর মেয়ের বাসায় যাওয়া-আসা আছে তাঁর।


প্রবীর কুমার মিত্রের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুন বাজারে। পৈতৃক নিবাস কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরে ওই পরিচালকের 'জলছবি' সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়।