অভিমান করে ছেড়েছিলেন, আবার ফিরেছেন সমু চৌধুরী

কয়েক বছর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে ছিলেন সমু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
কয়েক বছর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে ছিলেন সমু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন নাটকের পরিচিত মুখ সমু চৌধুরী। সে সময় টিভি নাটকে দর্শক মাতিয়েছিলেন এই মঞ্চ অভিনেতা। মাঝে অভিমান করে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন, পরে আবার ফিরে এসে অভিনয়ে যোগ দেন।

মাঝে অভিমান করে কয়েক বছর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে ছিলেন সমু চৌধুরী। প্রায় তিন বছর কাজ করেননি কোনো। নিজের গ্রামের বাড়ি যশোরে চলে গিয়েছিলেন। পরে শিল্পী ঐক্য জোটের মাধ্যমে আবারও অভিনয়ে ফিরে আসেন। এরপর থেকে কাজ করছেন নিয়মিতই।

প্রায় ২৯ বছরের ক্যারিয়ারে সমু চৌধুরী কাজ করেছেন পাঁচ শতাধিক নাটকে এবং ১২টি চলচ্চিত্রে। নানামাত্রিক চরিত্রে হাজির হয়ে মন কেড়েছিলেন দর্শকদের। কাজ করেছেন অনেক শিল্পী ও নির্মাতার সঙ্গে। সেদিক থেকে কাজের অভিজ্ঞতাটাও অনেকটা ভারী।

বর্তমান সময়ের কাজ প্রসঙ্গে সমু চৌধুরী বলেন, ‘এখন তো কাজও বেড়েছে, অনেক সেক্টরও বেড়েছে। আমাদের সময় তো এত কিছু ছিল না। তখন শুধু একটাই চ্যানেল ছিল, আর সেটা বিটিভি। এখন কাজের মান পরিবর্তন হয়েছে, পরিচালক–আর্টিস্ট সবই বেড়েছে। কিন্তু আমাদের স্ক্রিপ্ট রাইটারের অভাব, যার ফলে ইম্প্রোভাইজেশনের কাজ বেশি। যার কারণে এক ঘণ্টার নাটক নাটক বা ধারাবাহিকে বেশির ভাগই এখন কমেডি করতে গিয়ে ভাঁড়ামি করছে।

নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সমু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সমু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‘নাটকের ক্ষেত্রে বাজেট অবশ্যই একটা বড় বিষয়। এখন যেসমস্ত চ্যানেল আছে, সব ব্যক্তিমালিকানাধীন। আর তাই তারা চায় কম টাকায় নাটক বানিয়ে নিতে। এখন এটা নিয়ে কী করার আছে, যার জন্য একেকজন আর্টিস্ট এক দিনে ১৫টা বা ৩০টা দৃশ্য করছে। তাদের ওপর চাপ থাকছে, যার কারণে ইম্প্রোভাইজ করে কাজ করতে হয় সবার। তারপর বিজ্ঞাপন তো আছেই। কতক্ষণ যে চলবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এগুলো যদি চ্যানেল না বোঝে, তাহলে কিছু হবে না। যার কারণে এখন ভালো কিছু হচ্ছে না।’

সমু চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমাদের সময়ে নাটকের বাজেট নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে আমরা কাজ করেছি। কিন্তু এখন তো দুজন শিল্পী দিয়েই নাটকের কাজ শেষ হয়ে যায়। আমাদের সময়ে সেট ডিজাইন করে সব মিলিয়ে নাটকের বাজেট থাকত মিনিমাম ১৪ লাখ টাকা। সরকারি টেলিভিশন বলে সেটা সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন তো আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সেগুলা বলে লাভও নেই।

সমু চৌধুরী ছাত্রজীবনে যশোর উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টানা ১০ বছর উদীচীর হয়ে পথনাটক, মঞ্চনাটক ও গণসংগীত করেছেন। পরে ঢাকা উদীচী, ঢাকা থিয়েটার, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে আতিকুল হক চৌধুরীর ‘সমৃদ্ধ অসীম’ নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ‘জন্মভূমি’, ‘সাতপৌরে কাব্য’, ‘এই সময়ের গল্প’, ‘জিনের বাদশা’, ‘সোনালী রোদ্দুর’, ‘এবং আমি’, ‘সবুজের হলুদ ব্যাধি’, ‘দূরের আকাশ’সহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জায়গা করে নেন জনপ্রিয় অভিনেতার তালিকায়।

নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সমু চৌধুরী। ১৯৯৫ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘আদরের সন্তান’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক। এরপর ‘দোলন চাঁপা’, ‘শত জনমের প্রেম’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘দেশ দরদী’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘যাবি কই’, ‘সুন্দরী বধূ’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন।

সম্প্রতি বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সমু চৌধুরী। বিপুল খান পরিচালিত মেগা সিরিয়াল ‘ইহা একটি ধারাবাহিক নাটক’–এ কাজ করছেন এখন। নাটকটি প্রতি শুক্র ও শনিবার মাইটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে।

এ ছাড়া ‘হাজার রকম ভালোবাসা’ মেগা সিরিয়ালে কাজ করছেন সমু চৌধুরী। এই ধারাবাহিক পরিচালনা করছেন নারী নির্মাতা ইসমত আরা শান্তি। কায়েস চৌধুরীর একটি নাটক ও গত ভালোবাসা দিবসে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পে ‘ছন্দ ছাড়া গান’ নাটকেও কাজ করেছেন তিনি।

সমু চৌধুরী বলেন, ‘ইতিমধ্যে কয়েকটা ধারাবাহিকে কাজ করছি। আগের মতো তো আর এখন কাজ হয় না। তারপরও যতটুকু পারছি করছি। অভিনয়টাকে ভালোবাসি বলেই এখনো কাজ করে যাচ্ছি কম আর বেশি। দেখা যাক সামনে কী হয়! একটা চলচ্চিত্রে কাজের বিষয়েও কথা চলছে এখন। চূড়ান্ত হলে বলতে পারব সেটা।’