ভাবনায়, নির্মাণে, উপস্থাপনে এগিয়ে নায়িকারা

>দেশের কয়েকজন অভিনেত্রী তাঁদের সৃজনশীল চিন্তা, নির্মাণশৈলী আর বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনরীতি দিয়ে মহামারির দমবন্ধ করা সময়ে নিজেদের মেধার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। এটা বোঝা যায় তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলগুলো দেখলেই। নিজেদের অভিনব সব চিন্তাকে মনের মতো করে সাজিয়ে তুলে ধরেছেন সবার সামনে। অভিনেত্রীদের এই চ্যানেলগুলো নিয়ে লিখেছেন শফিক আল মামুন
বঁা থেকে (ওপরে) বিদ্যা সিনহা মিম, সাবিলা নূর ও মেহজাবীন এবং (নিচে) সাফা কবির ও তানজিন তিশা
বঁা থেকে (ওপরে) বিদ্যা সিনহা মিম, সাবিলা নূর ও মেহজাবীন এবং (নিচে) সাফা কবির ও তানজিন তিশা

অভিষেকেই মিমের বাজিমাত

মাসখানেক হলো অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম ভিডিও ইউটিউবে নিজের নামে চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে নিজের মতো করে বাগানচর্চা, মেকআপ আর রান্নার ভিডিও প্রকাশ করেছেন। পর্দায় সব সময় ‘গ্ল্যামারাস’ খেতাব পাওয়া মিমকে তাঁর চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে ঘরোয়া বেশে।

নিজেকে এভাবে নতুন একটি মাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়ে মিম বলেন, ‘এই কাজের মাধ্যমে ভক্তদের আরও কাছে যাওয়া হচ্ছে। ভক্তরা অনেক সময় আমার সম্পর্কে অজানা অনেক বিষয় জানতে চান, দেখতে চান। আমি পর্দার বাইরে কী করছি, সেগুলোতে আগ্রহ থাকে তাঁদের। তাই তাঁদের জন্যই এভাবে এই কাজে নেমে পড়লাম।’

নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কনটেন্ট বানাতে গিয়ে নতুন নতুন অনেক কিছু শেখা হচ্ছে মিমের। আগে নিত্যনতুন আইডিয়া মাথা এলে তা মাথার ভেতরে থেকে একসময় হারিয়ে যেত। এখন নাকি নিজের চ্যানেল হওয়ার সুবাদে পরিকল্পনাগুলো প্রাণ পাচ্ছে, আর করোনাকালে এটাই মিমের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

এরই মধ্যে মিমের ইউটিউব চ্যানেলের গ্রাহক প্রায় ৬৬ হাজার। নিজেই সঞ্চালক হয়ে ‘মিম’স কাস্টডি’ নামে একটি অনুষ্ঠান চালু করেছেন তিনি। এই অনুষ্ঠানের পরিচালক, প্রশ্নকর্তা—সবই মিম। এর প্রথম পর্বে অতিথি অভিনেতা ও গায়ক তাহসানের সঙ্গে মিমের আড্ডা দর্শক বেশ ভালোভাবেই নিয়েছেন।

সাবিলা নানা কিছু শিখছেন নতুন করে

এত দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয়ের জন্য যতটুকু শেখা দরকার, ততটুকুই শিখেছেন সাবিলা নূর। কিন্তু মাস দুয়েক হলো শেখার পরিধিটা বেড়ে গেছে। শুধু ক্যামেরার সামনে নয়, তাঁকে শিখতে হচ্ছে অনুষ্ঠান নির্মাণের সবকিছু। কারণ, প্রায় দুই মাস হলো নিজের চ্যানেল চালু করেছেন সাবিলা।

নিজের নামে তৈরি এই ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিটা ভিডিও সাবিলা নিজে তৈরি করেছেন। এই নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা সাবিলা বললেন এভাবে, ‘ইউটিউব চ্যানেল চালানো সহজ না। লাইট, ক্যামেরা ঠিক রেখে ভিডিও শুট নিজেই করছি। ভিডিওর মান ঠিক করার জন্য সম্পাদনার কাজও আমাকে করতে হচ্ছে। অনেক কিছুই জানতাম না। একটু একটু শিখে নিয়েছি, এখনো শিখছি।’

মাত্র ৩টি ভিডিও উঠেছে সাবিলার চ্যানেলে। অনুষ্ঠান নির্মাণে নিজেকে আরও একটু শক্ত করে নতুন সব ভিডিও প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কনটেন্টের বিষয় নির্বাচনে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। যে কয়টি কনটেন্ট প্রকাশ করেছি, সব কটিতেই দর্শকের প্রশংসা পেয়েছি। এভাবে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগটাও বাড়ছে।’

মেহ্‌জাবীনের চ্যানেলে মেহ্‌জাবীনকে পাওয়া যায়

পর্দায় নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন, জিতেছেন পুরস্কার। কিন্তু এত এত চরিত্রের আড়ালে অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরীকে জানার সুযোগ দর্শকের খুব একটা ছিল না। তাই দর্শকের কথা ভেবে মেহ্জাবীন নিজেকে, নিজের ব্যক্তিজীবনকে তুলে ধরেছেন ইউটিউবে।

প্রিয় তারকার ব্যক্তিজীবনের প্রতি দর্শকের যে কত আগ্রহ, তা মেহ্‌জাবীনের চ্যানেলের কনটেন্ট এবং এর নিচে আসা কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেহ্‌জাবীন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটি চালু করেন। এরই মধ্যে চ্যানেলে গ্রাহকের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। কখনো মেকআপ টিপস, কখনো রান্নার রেসিপি, কখনো বিদেশ ভ্রমণের ভিডিও নিজের মতো করে বানিয়ে চ্যানেলে নিয়মিত আপলোড করছেন মেহ্‌জাবিন। তিনি বললেন, ‘দর্শক তো আমাদের পর্দাতে পান। তাই প্রিয় তারকার ব্যক্তিজীবন নিয়ে তাঁদের মনে অনেক প্রশ্ন আর কৌতূহল থাকে। এ জন্য নিজের চ্যানেল থেকে আমি নিজের জীবনের নানা অংশের চিত্র দেখানোর চেষ্টা করি। এতে দর্শক উপভোগও করেন, কিছু শিখতেও পারেন। পাশাপাশি নানা ধরনের কনটেন্ট বানাতে গিয়ে আমার নিজের জানাশোনার পরিধিও বাড়ে।’

সাফার চ্যানেলে অনেক কিছু

অভিনেত্রী সাফা কবিরের ইউটিউব চ্যানেলের বয়স এক বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে পেয়েছেন সিলভার বাটনও। চ্যানেলে গ্রাহকসংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার। ইউটিবের এই ব্যক্তিনির্ভর চ্যানেলের ভিডিওগুলো বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে অনেক বড় চ্যানেলকেও হার মানায়। সাজ, পোশাক, রান্না, দৈনন্দিন টিপস, শুটিং, ফটোশুট, বেড়ানো, তারকাদের মজার সাক্ষাৎকার, গেমস—কী নেই!

নিজের তৈরি করা অসংখ্য কনটেন্ট দিয়ে সাফা সাজিয়েছেন চ্যানেলটি। যেমন বিষয় নিয়ে ভাবেন সাফা, তেমন আলো, ফ্রেম থেকে শুরু করে ছোট ছোট প্রপসের প্রতিও খেয়াল থাকে তাঁর। কারণ, নিজের চ্যানেলের ভিডিওর পরিচালকও তিনি, সঞ্চালকও তিনি আবার সম্পাদকও। তাই দায়িত্বটা একটু বেশিই নিতে হয় আর তাতে আনন্দও পান। সাফা বলেন, ‘বেশ সাড়া পাই প্রতিটা ভিডিও থেকে। দর্শকেরা যখন বলেন তাঁরা ভিডিও দেখে উপকৃত হচ্ছেন, তখন সব পরিশ্রম সার্থক হয়। যাঁরা ভিডিও দেখেন, তাঁদের কাছ থেকেও নিত্যনতুন আইডিয়া পাই। সময়-সুযোগ বুঝে সেই আইডিয়া দিয়েও ভিডিও বানাতে চেষ্টা করি।’

আগাম খবর দিলেন তিশা

নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের নতুন মাধ্যম খুঁজে পেয়েছেন তানজিন তিশা। মাত্র এক মাস হলো ইউটিউবে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ হিসেবে অভিষেক হয়েছে তাঁর। তবে এরই মধ্যে নিজেকে এই মাধ্যমে নানাভাবে প্রকাশ করার কায়দা ভালোই রপ্ত করে ফেলেছেন। নিজেই বানাচ্ছেন নানা ধরনের ভিডিও, সম্পাদনা করছেন, এরপর তুলে দিচ্ছেন চ্যানেলে।

করোনাকালে ঘরেবন্দী থেকে স্বল্প কারিগরি সুবিধা নিয়েই রান্না, সাজ, পোশাক আর অভিনয়জীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্র নিজেই নির্মাণ করে চলেছেন। তিশা বলেন, ‘নিজের মতো করে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করছি, এগুলো দর্শক পছন্দও করছেন। সরাসরি জানাচ্ছেন তাঁদের প্রতিক্রিয়া। এটা খুব অনুপ্রেণা জোগাচ্ছে। যদিও কনটেন্টগুলো তৈরিতে পরিশ্রম করা লাগছে, অনেক সময় দিতে হচ্ছে।’

আগাম তথ্য দিলেন তানজিন তিশা। বলেন, ‘আমার চ্যানেল থেকে সামনে একটি অনুষ্ঠান তৈরি করব। তারকাবহুল হবে অনুষ্ঠানটি। সবকিছুই নিজের পরিকল্পনাতেই করছি। এর প্রতিটা অংশেই থাকবে আমার নিজের ভাবনা, নিজের পরিশ্রম।’