'ওই ছেলেকে নিয়ে অনেক গল্প-কবিতা লিখেছি'

সম্ভাবনাময় অভিনয়শিল্পী তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে
সম্ভাবনাময় অভিনয়শিল্পী তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে
>বর্তমান সময়ের সম্ভাবনাময় অভিনয়শিল্পী তাসনিয়া ফারিন এই করোনাকালীন ঈদেও ১৬টি নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে আগামী ঈদের নাটকের শুটিং এখনো শুরু করেননি। সম্প্রতি জানালেন নাটক আর চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর তাৎক্ষণিক ভাবনা।

পাশের বাড়ির মেয়ে নাটকের সামিয়ার সঙ্গে ফারিনের কতটা মিল?
আমার বাস্তব জীবনের ঘটনার সঙ্গে এটা মিলে গেছে। বলতে পারেন, ৭–৮ বছর আগের ফারিনকে পর্দায় দেখেছেন দর্শকেরা। (হাসি)। এটা সত্যিকারের গল্প, আমার জীবনেরও সঙ্গে মিলে গেছে। আমার জীবনের সঙ্গে মিল থাকায় অভিনয়ও ভালো হয়েছে মনে হয়। যখন নাটকটা দেখছিলাম, মনে হচ্ছিল আমাকেই দেখতে পাচ্ছি। তবে নাটকের পরিণতির সঙ্গে আমার বাস্তব জীবনের মিল নেই।

তার মানে আগে প্রেমের জন্য ব্যাকুল ছিলেন, এখনো কি তা–ই। নাকি অভিনয়ে আসার পর প্রেমের প্রস্তাব বেশি পাচ্ছেন?
তখনো যে আমি প্রেমের প্রস্তাব পেতাম না, তা নয় কিন্তু। হয় না, প্রথম ভালো লাগার অনুভূতি, ওটা তো ভিন্ন রকম। আমার প্রথম ভালো লাগা আমার প্রতিবেশীর প্রতিই ছিল। সে আমাদের বিল্ডিংয়ে থাকত, এখনো থাকে। শুনেছি দেশের বাইরে থাকে। আমিও আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামাই না।

এখনো প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করছেন তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে
এখনো প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করছেন তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

নিশ্চয়ই স্কুলে পড়ার সময়ের ঘটনা...
ছোটবেলায় আমি খুব ডেসপ্যারেট ছিলাম। আমি অনেক কঠোর নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছি। মোবাইল ছিল না, ইন্টারেনট ছিল না। আম্মু স্কুল–কোচিংয়ে নিয়ে যেত–আনত। এ জন্যই মনে হয় আরও বেশি ডেসপ্যারেট ছিলাম। একবার যদি ওই ছেলেকে লিফটে কিংবা বাসার নিচে দেখতাম, সারা দিন ওটাই চিন্তা করতাম। সাত দিনও চলে যেত। আমার একটা ডায়েরি ছিল। সেখানে ওই ছেলেকে নিয়ে অনেক গল্প–কবিতা লিখেছি...। বারান্দায় দেড়–দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম শুধু একনজর দেখব বলে। বড় হওয়ার সঙ্গে এসব হারিয়ে গেছে।

অভিনয়জীবনে এসে প্রেম নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
আলাদাভাবে চিন্তা করা হয় না।

নাকি ফারিনের প্রেম করার সময় নেই?
এটা নিয়ে কিছু বলব না। প্রেম থাকে মানুষের মনে, ওটাই আরকি।

অনেক ধরনের সৃজনশীল মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন। নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে ভালো লাগে। সেই ভালো লাগাটা কেমন?
ভালো লাগা বলতে, কিছু মানুষের সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা ভালো হয়। তাই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করি। পরিচালকদের মধ্যে মোস্তফা কামাল রাজ, ইমরাউল রাফাত, কাজল আরেফিন অমি— তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া চমৎকার। সহশিল্পীদের প্রায় সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তারপরও যদি বলতে হয় বলব, আমি সবচেয়ে উন্মুখ থাকি আফরান নিশোর সঙ্গে কাজ করতে। তিনি হাতে–কলমে শিখিয়ে দেন। আমিও আমার অভিনয়ের উন্নতি টের পাই। মোশাররফ করিমের অভিনয়ের ধরন দেখলে মাঝেমধ্যে মনে হয়, একটা মানুষ কীভাবে এত ভালো অভিনয় করতে পারেন! অপূর্বর সঙ্গেও কাজ করে অনেক কিছু শিখি, তিনি আমার অনেক মতামত নেন।

জীবনের বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত হুট করেই হয়ে গেছে বলে জানালেন তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে
জীবনের বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত হুট করেই হয়ে গেছে বলে জানালেন তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

সংসারজীবন নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
আমার বয়স মোটে ২২ বছর চলছে। আমি ভাগ্যবান এই ভেবে, ক্যারিয়ার খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়েছে। এই সময়ে অনেকের পড়াশোনাও শেষ হয় না। বিউপি থেকে কেবল বিবিএ শেষ করেছি। মাস্টার্সের পরিকল্পনা আছে। বিয়ের ব্যাপারটি পরিবার থেকে আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে ৩০ বছর পর বিয়ে করব। কিছুদিন পর হয়তো তাঁরাও পীড়াপীড়ি করবে।

আপনার পরিবারের কেউ অভিনয়ে ছিলেন?
মা–বাবা আর পরিবারে আমার একটা ছোট ভাই আছে। আমার দাদা–নানার বংশে কেউই অভিনয়ে ছিল না। তবে আমার আম্মুর ইচ্ছা ছিল অভিনয় করার। পারেনি। মা চেয়েছিল আমি অভিনয় করি। আমাকে পরিবার সাপোর্ট করেছে। পরিবার বলেছে, তুমি সৎভাবে কাজ করলে কোনো সমস্যা নেই।

সংসার জীবনে কোন ধরনের সংসার জীবন চান?
আমি সব সময় চেষ্টা করি, আমার ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবন এক যেন না হয়। জানি ভক্তদেরও অনেক আগ্রহ থাকে, চেষ্টা করব ব্যক্তিগত জীবন ও এই মানুষটাকে তা থেকে দূরে রাখতে। আমি কিন্তু আমার মা–বাবার ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিই না। আমার স্বামী যে হবে তার ব্যক্তিগত জীবন আমার জীবন থেকে আলাদা রাখব।

করোনাকাল চলছে। এই করোনা কেটে গেলে কোথায় বেড়াতে যাবেন। সঙ্গে কাকে নিয়ে যাবেন?
প্রতিবছর একবার আমাদের পরিবারের বাইরে যাওয়া হয়। আমাদের এ বছরের পরিকল্পনা ছিল অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার। পরিবারকে নিয়েই যাব। একবারই শুধু পরিবার ছাড়া গিয়েছি, ব্যাংককে নাটকের শুটিং করতে, গেল জানুয়ারিতে।

প্রতিদিন প্রেমের প্রস্তাব পান তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে
প্রতিদিন প্রেমের প্রস্তাব পান তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেমন সময় দেন?
আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। তবে পেজ আছে। ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার ব্যবহার করি। সব মিলিয়ে দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা হবে। টুইটারে আমার মতামত দিই, যদিও আমার অনুসারী খুব বেশি না। এই কারণেই হয়তো মন খুলে বলতে পারি। ইনস্টাগ্রামে আমার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের খবর দিই। পোস্ট দিয়ে বের হয়ে যাই। সামাজিক মাধ্যমে আমি কখনোই আসক্ত ছিলাম না, এখনো না।

এসব মাধ্যম থেকে নিশ্চয়ই প্রেমের প্রস্তাব পান?
হাহাহা, আমি নই, কমবেশি সবাই পায়। আমি অবশ্য বেশি প্রেমের প্রস্তাব পাই। বলতে গেলে প্রতিদিন প্রেমের প্রস্তাব পাই। বায়োডাটাও পাই।

নাটকে তো করছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও নিশ্চয়ই পাচ্ছেন। কোনো ভাবনা?
আমার জীবনের বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত হুট করেই হয় গেছে। অভিনয়ে আমার তো কেবল শুরু হলো। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় যেতে হলে অনেক কিছু বাদ দিতে হবে, সেই ঝুঁকি নেওয়ার মতো কাজ এখনো পাইনি। কনভিন্সিং এনাফ কোনো কাজ পাইনি। পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারি।