থেমে আছে বৃন্দাবন দাসের নাটক লেখা

বৃন্দাবন দাস। ছবি সংগৃহীত।
বৃন্দাবন দাস। ছবি সংগৃহীত।

নাট্যকার হিসেবে শুধু পরীক্ষিতই নন, জনপ্রিয়ও বৃন্দাবন দাস। তাঁর লেখা অনেক নাটক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাট্যকার হিসেবে তাঁর স্বকীয়তা আছে। অথচ এই বৃন্দাবন দাস লিখতে পারছেন না নাটক। লেখা শুরু করেও শেষ করতে পারছেন না। হতাশা পেয়ে যায়। এর একটাই কারণ, করোনা।

ঈদ সামনে রেখে নাটক নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি থাকে। এই চিত্রনাট্যকারের কাছে থাকে নির্মাতাদের বিশেষ চাহিদা। পাণ্ডুলিপি দিতেই হবে। সবার মন রাখতে না পারলেও চিত্রনাট্যকার বৃন্দাবন দাসের রচনার একক এবং ঈদ ধারাবাহিক মিলিয়ে কমবেশি ১০টি নাটক প্রতি ঈদেই প্রচারিত হয়। সেই সংখ্যা গত ঈদে ছিল একটি। সেটাও এক বছর আগের শুটিং করা। সম্প্রতি ঈদ নাটকের শুটিং শুরু হলেও দেশের এই গুণী চিত্রনাট্যকারের হাতে নেই কোনো পাণ্ডুলিপি। গত তিন মাসে কোনো চিত্রনাট্য লিখতে পারেননি।

প্রথমেই এই নাট্যকারকে প্রশ্ন করি, প্রতি ঈদে আপনার লেখা বেশ কটি নাটক প্রচারিত হয়। গত ঈদে ছিল একটি। এবার ঈদের জন্য কটি নাটক লিখেছেন বা নাটক লেখা নিয়ে পরিকল্পনা কী আপনার? এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিত্রনাট্যকার বলেন, ‘লেখালেখি হচ্ছে না। একটি স্ক্রিপ্টও এখনো লিখতে পারিনি। করোনার জন্য লেখায় একদমই মন বসাতে পারছি না।’ লেখালেখি ছাড়া যে মানুষ অন্য কিছু বোঝেন না, সেই মানুষ করোনায় একটি স্ক্রিপ্ট শেষ করতে পারেননি। শুনে একটু কৌতূহল হয়। জানতে চাই, গত মার্চের ২১ তারিখ থেকে ছোট পর্দার সব শুটিং বন্ধ হয়েছিল। এই তিন মাসে কটা চিত্রনাট্য লিখেছেন? সোজাসাপ্টা জবাব দেন বৃন্দাবন দাস। তিনি বলেন, ‘একটি স্ক্রিপ্টও লিখিনি। আমার লেখা হচ্ছে না। দেশের এই সার্বিক পরিস্থিতিতে মেন্টালি একধরনের লকডাউনের মধ্যে আছি। একধরনের অনিশ্চয়তা, প্রতিদিন মানুষের দুর্দশার খবর। দিন দিন করোনা যেভাবে বাড়ছে, এসব চিন্তায় আর লেখা হচ্ছে না। ঘরের মধ্যেই বন্দী থাকি। বের হই না। লিখতে বসলেই একটা বিক্ষিপ্ত ভাবনা এসে জড়ো হয়। একটা ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পড়ে গেছি।’

গত তিন মাসে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেছেন পুরো একটি চিত্রনাট্য শেষ করবেন। এভাবে তিন–চারটি একক নাটক এবং ধারাবাহিক লেখায় হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু–একটি দৃশ্য ছাড়া বেশি দূর এগোতে পারেননি। কোনোটায় মনই দিতে পারেননি এই নাট্যকার। এই সময়ে তিনি বাসায় বসে অনেক ছবি দেখেছেন, নিয়মিত বইও পড়েছেন। করোনার এই সময়ে সংসারের অনেক কাজে সহযোগিতা করেছেন, সেই কথাও জানালেন তিনি।

পরিবারের সঙ্গে বৃন্দাবন দাস। ছবি সংগৃহীত।
পরিবারের সঙ্গে বৃন্দাবন দাস। ছবি সংগৃহীত।

সম্প্রতি নাটক লেখার জন্য তাঁকে খাতা–কলম নিয়ে বসিয়েছেন স্ত্রী অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। পরিকল্পনা করছেন একটি ঈদ ধারাবাহিক লেখার। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত দুই ঈদ থেকে একটি সাত পর্বের সিকুয়েল যায়, নাম “নশু ভিলেন”। এটা পরিচালনা করেন সাগর জাহান। নাটকটি লেখার কাজে হাত দিয়েছি, কিন্তু জানি না শেষ হবে কি না। দেখা যায়, কয়েকটা দৃশ্য লেখার পর কেমন যেন একটা ডিপ্রেশন চলে আসে। আমার স্ত্রী খুশি, আমার ছেলেরা লেখার জন্য সব সময় চেষ্টা করতে বলে। কিন্তু লেখার চেয়ে করোনায় দিন দিন আমার কাজের সংশ্লিষ্ট জায়গাটা বড় একটা সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে, সেটাই বেশি ভাবাচ্ছে।’

শিল্পী সংঘের তথ্যমতে, দেশের নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর মধ্যে করোনায় ৩০–৪০ ভাগ শিল্পী–কলাকুশলী বেকার হয়ে যেতে পারেন। করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বৃন্দাবন দাস। করোনার এই সময়ে ছোট পর্দার শিল্পী–কলাকুশলীদের কাজের ক্ষেত্রে একটা ভয়ংকর রকম ওলট–পালট হয়ে যাবে, এমনটাই মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এই চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা বলেন, ‘গোটা অর্থনীতির মতো আমার এই অবহেলিত সেক্টর করোনার প্রভাবে ব্যাপক সংকটের মধ্যে পড়বে। এটা কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন হবে। বর্তমান শিল্পী–কলাকুশলী নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনা বা পরিকল্পনা নেই। এখন যাঁদের নেশা এবং পেশা, নাটকের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা বড় একটা ধাক্কা খাবেন। করোনা–পরবর্তী কী যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে, সেটার কথা ভাবতেই আর কিছুই লিখতে পারি না।’