আগে জীবন, পরে জীবিকা

ফজলুর রহমান বাবু। ছবি: প্রথম আলো
ফজলুর রহমান বাবু। ছবি: প্রথম আলো
>অনবরত শুটিংয়ের ডাক পাচ্ছেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। সুরক্ষানীতি মানতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তিনি। সম্প্রতি প্রচারিত ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ নাটকে তাঁর অভিনীত চরিত্রের জন্য প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই শিল্পী। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি এই সময়টিকে নিয়ে অনেক কথা বললেন তিনি।

শুটিংয়ে যেতে চাইছেন না কেন?
যখন আমরা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছিলাম, তখনকার চেয়ে এখন সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। আগে শুনতাম, করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে, এখন শুনছি কাছের মানুষ মারা যাচ্ছে। আগে দূরে রোগীর খবর শুনতাম, এখন পাশের ফ্ল্যাটের বা পাশের বাড়ির মানুষদের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাচ্ছি। আগে জীবন, পরে জীবিকা; তাই আপাতত শুটিংয়ে যাচ্ছি না। হয়তো যাব, পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয়। আরও এক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই।

ঘরবন্দী মানুষের জন্য বিনোদন দুনিয়ার মানুষের এখন দায়িত্ব অনেক। আপনার কী মত?
আমি তো প্রায় প্রতিদিনই অনলাইনে নানা রকম অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছি। বটতলার মতো থিয়েটার গ্রুপগুলো কর্মশালা করাচ্ছে, নাট্যকর্মীদের নাটক সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করছে। নানা গ্রুপ করোনাকালে করণীয় নিয়ে আলোচনা করছে। ইতালিপ্রবাসীদের সঙ্গে বসছি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির একটা গ্রুপের সঙ্গে বসেছি।

ফজলুর রহমান বাবু। ছবি: প্রথম আলো
ফজলুর রহমান বাবু। ছবি: প্রথম আলো

শিল্পীরা ঘর থেকে শুট করে অনুষ্ঠান বানাচ্ছে, ব্যাপারটা আপনার কাছে কেমন লেগেছে?
এটা তো সংকটকালীন প্রচেষ্টা। সংকটকালে মানুষ নানাভাবে কাজ করার চেষ্টা করে। এতে কিন্তু ফিকশন করার সুযোগ কম। আমিও জনসচেতনতামূলক কিছু কাজ করেছি। আফজাল ভাই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় ভিডিও করে পাঠিয়েছি। তবে কলিগদের মিস করি, অ্যাকশন, কাট শব্দগুলো মিস করি। কত দিন সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয় না, আড্ডা হয় না। একরকম হাঁপিয়েই উঠেছি। আশা করি, দ্রুত আমরা এ পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পাব।

পরিবার আপনাকে নিয়মিত কাছে পাচ্ছে, এটা উপভোগ করছেন?
জীবনে এই প্রথম এভাবে তারা আমাকে কাছে পেয়েছে। বিশেষ করে আমার স্ত্রী খুব খুশি, মেয়েরাও। প্রতিদিন নানা ধরনের রান্না হচ্ছে। একসঙ্গে বসে খাচ্ছি, সিনেমা দেখছি, টিভিতে নানা অনুষ্ঠান দেখছি, বই পড়ছি। এই যে দুপুরে একটু ঘুমালাম, এ সুযোগও সাধারণত পাই না। মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, বাইরে যেতে পারছে না বলে তাদের একটু একঘেয়ে লাগছে বটে, কিন্তু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।

‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ নাটকটার প্রশংসা করছে সবাই। কেন বলবেন?
গল্পটা টাচি, মানুষ হয়তো নাটকটায় জীবনের ছায়া দেখেছে। সে কারণেই তাদের ভালো লেগেছে।

নতুন কোনো কাজে প্রশংসা পেলে কেমন বোধ করেন?
প্রশংসা শিল্পীর জন্য সব সময় অনুপ্রেরণার, সে যত বড় শিল্পীই হোক না কেন। দর্শকের প্রশংসায় আমরা শক্তি পাই, সাহস পাই।

আত্মজীবনী লিখবেন কবে থেকে?
ভাবিনি কখনো। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে ডাকলে জীবনের নানা কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করি। জীবনে অনেক কিছু করতে পেরেছি বলে মনে হয়নি, তাই আত্মজীবনী লেখা নিয়ে কখনো ভাবিনি। ভবিষ্যতে যদি কখনো মনে হয়, হয়তো চেষ্টা করব।

অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে?
কখনো না। অভিনয় এমন এক পেশা, এ থেকে অবসর নেওয়ার কোনো কারণ নেই। যতক্ষণ শ্বাস ও শক্তি আছে, ততক্ষণ অভিনয় করে যাব। মানুষ যে কাজটি করতে ভালোবাসে, সেই কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়া আমাদের দেশে কঠিন। আমার সৌভাগ্য যে আমি সেটা পেরেছি। আমি অভিনয়কে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখেছি যে আমি একেই পেশা হিসেবে নেব।