এই সময়ে আমাদের মানবিক আচরণ বেশি জরুরি

তিন মাস পর আবার কাজ শুরু করেছেন তারিন। ছবি: প্রথম আলো
তিন মাস পর আবার কাজ শুরু করেছেন তারিন। ছবি: প্রথম আলো
>কলকাতায় ‘এটা আমাদের গল্প’ ছবিতে কাজ শেষ করে মার্চে দেশে ফেরেন অভিনেত্রী তারিন। তারপর থেকেই লকডাউনে ঘরবন্দী হন এই অভিনেত্রী। ঘরে থেকে সচেতনতামূলক কিছু কাজ করলেও তিন মাস পর ‘বনে ভোজন’ নামে একটি ঈদের নাটকের শুটিংয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন তিনি। বর্তমান শুটিং–ভাবনা, কলকাতার ছবির ডাবিং ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বললেন এই তারকা।

‘বনে ভোজন’ নাটক সম্পর্কে একটু জানতে চাই?
তিন মাস পর ২২ জুন ‘বনে ভোজন’ নামে ঈদের একটি ধারাবাহিকের শুটিং শুরু করেছি। নাটকের মূল গল্প লিখেছেন সাজু খাদেম। নাটকটির পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল। চিত্রনাট্য করেছেন লিটু সাখাওয়াত। নাটকে আমার চরিত্র ষাটের দশকের মেয়ের। আমার সহশিল্পী জাহিদ হাসান। নাটকটি ঈদে প্রচার হবে।

দীর্ঘদিন পর শুটিংয়ে ফিরে কেমন লাগছে?
বলতে গেলে মিডিয়াতেই আমার বেড়ে ওঠা। ৩৭ বছরের ক্যারিয়ারে এখন অভিনয় আমার নেশা এবং পেশা। গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে কাজ থেকে এতটা সময় দূরে থাকা হয়নি। তিন মাস পর সেই পুরোনো লোকজন, পুরোনো ইউনিট, আমার সহকর্মী, নির্মাতা সবার সঙ্গে দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগছে।

৩৭ বছর ক্যারিয়ার তারিনের। ছবি: সংগৃহীত
৩৭ বছর ক্যারিয়ার তারিনের। ছবি: সংগৃহীত

করোনার আগে এবং বর্তমান কাজের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন?
করোনার আগে বাসা থেকে বের হয়ে শুটিংয়ে যাওয়ার যে প্রস্তুতি থাকে, সেখানে এবার বাসা থেকে বের হতে এক্সট্রা প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্প্রে সঙ্গে নিয়েছি কি না, বারবার দেখতে হয়েছে। আগে মেকআপ রুমে সবাই থাকতাম। এবার একা একটি রুমে আছি। নিজের মেকআপ নিজেই করছি। শুটিংয়ে বিশাল সেটের জায়গায় এবার গুটিকয় মানুষ। আসলে যে জিনিস দেখা যায় না, তার জন্য ফাইট করাটাও কঠিন। যে জন্য শিল্পী, টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে সবাই সারাক্ষণ মাস্ক পরে আছে, দূরত্ব মেইনটেইন করছে, একটু পরপর হাত ধুচ্ছে। সবাই পরিষ্কার–পরিচ্ছনতা বজায় রেখে কাজ করছে। আমি আগে থেকেই আমার ব্যবহারের জন্য কসমেটিকস, শুটিংয়ে খাবার, চেয়ার, পানির বোতল নিয়ে আসতাম। এগুলোই শুধু আগের মতোই নিয়ে এসেছি।

১ জুন নিয়ম মেনে শুটিং শুরু হয়েছে, আপনি ২১ দিন পর শুটিং শুরু করলেন। যখন করোনা–পরিস্থিতি তুলনামূলক খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন মনে হয়েছে কি না?
আমি গল্প, স্ক্রিপ্ট, চরিত্র বুঝেশুনেই কাজ করতে চেয়েছি। এই স্ক্রিপ্ট ভালো লেগেছে, ইউনিটের সবাই নিট অ্যান্ড ক্লিন, সে জন্য কাজ করতে সম্মতি দিয়েছি। আর করোনাটা এমন নয় যে এটা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। দিন যত যাবে ততই সংক্রমণ বাড়বে। এখন বাইরে বের হলেই করোনা হবে বিষয়টা এমন নয়। অনেকেই ঘরে বসে এফেক্টেড হচ্ছেন। আবার বাইরে সরকারি আদেশ পালন করতে গিয়ে অনেক মন্ত্রী ও সরকারি আমলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বলা যায়, কর্মক্ষেত্র থেকে সচেতন হয়ে কাজ শেষে বেরিয়ে আসাটাও চ্যালেঞ্জিং। আর করোনায় এফেক্টেড ভাগ্যে লেখা থাকলে যেকোনোভাবেই হতে পারে। তবে এটা সত্য কথা, আমাদের নাটকের শিল্পীরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।

সোশ্যাল ডিসট্যান্স কতটা মানছেন?
কথাটা বলা হয়, সোশ্যাল ডিসট্যান্স। কিন্তু আমি সোশ্যাল ডিসট্যান্স না বলে বলব সোশ্যালি আমরা অনেক বেশি কাছে থাকব। একে অপরের বিপদে কাছে থাকব। অমানবিক আচরণ করব না। মানসিকভাবে ধীর, স্থির ও শান্ত থাকবে হবে। আমরা সোশ্যালি কাছে থাকব। কিন্ত করোনা ছোঁয়াচে হওয়ায় আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখব, কিন্তু মানবিক হব আচরণে। এই সময়ে আমাদের মানবিক আচরণ খুব জরুরি।

কলকাতার ছবির ডাবিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল? ছবিটির কী খবর?
ছবিটির আমার অংশের কাজ শেষ। কলকাতার কিছু শিল্পীর দু–তিন দিনের কাজ বাদ রয়েছে। যতদূর শুনেছি, বাকি অংশের শুটিং আগস্টে শুরু হওয়ার কথা। তারপরই ডাবিং শুরু হলে যেতে হবে। পরিস্থিতি একটু বেটার হলেই ডাবিং করে আসব।

‘বনে ভোজন’ নাটকে তারিনের সহশিল্পী জাহিদ হাসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
‘বনে ভোজন’ নাটকে তারিনের সহশিল্পী জাহিদ হাসান। ছবি: ফেসবুক থেকে

নিয়মিত অভিনয় নিয়ে কী ভাবছেন?
আমি কখনো বলিনি অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি। এ ভাবনা যাদেরই আছে তাদের বলতে চাই, আমি কি অভিনয় ছাড়ার ডিক্লিয়ারেশন দিয়েছি? তা বলিনি। আমি সব সময় নিয়মিত অভিনয় করতে চেয়েছি, করতে চাই। নিয়মিত অভিনয় করার জন্য সে রকম যথাযথ গল্প, চরিত্রের অফার আমার কাছে আসতে হবে। গল্প, চরিত্র পছন্দ হলেই কাজ করব।

করোনায় নিয়মিত কাজ করতে চান?
প্রথমে গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলে কাজ করব। তারপর যে ইউনিট পরিষ্কার–পরিচ্ছনতা, স্বাস্থ্যবিধি একদম প্রপারলি মেনে, সব প্রটেকশন নিয়ে কাজ করবে; সেই ইউনিটের সঙ্গে আমি অবশ্যই কাজ করতে চাই। আমাদের সব শিল্পীর এভাবেই কাজ করা উচিত।