অভিমান করে দূরে সরে মীম

অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত।
অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত।

শৈশবে গানের অনুষ্ঠান দিয়েই মিডিয়ায় পা রাখেন। পরের বছর ১৯৯২ সালে থেকে বিটিভির নাটকে অভিনয় শুরু করেন। শিশু চরিত্রের এই অভিনেত্রী পরিণত বয়সে নাটকের প্রধান নারী চরিত্রে প্রস্তাব পাওয়া শুরু করেন। অভিনয়ের প্রতিভা দিয়ে অল্প সময়েই নাট্য অঙ্গনে নিজের জায়গা করে নেন অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। প্রায় টানা ১৮ বছর মিডিয়ায় কাজ করে ব্যক্তিগত এবং অভিমান থেকে ‘নতুন কুঁড়ি’র এই চ্যাম্পিয়ন অভিনয় থেকে বিদায় নেন।

সর্বশেষ ২০১১ সালে নাটকে অভিনয় করেন মীম। তারপর থেকেই আড়ালে চলে যান এই অভিনেত্রী। সংবাদ পাঠ করলেও নাটকে আর ফেরেননি তিনি। এই অভিনেত্রী সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাটক তাঁর খুবই ভালোবাসার জায়গা। নাটক না করলেও নাটকের প্রতি সেই ভালোবাসা এখনো আছে। কেন ক্যারিয়ারের দুই দশক পর নাটক থেকে আড়ালে যান, এমন প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘নাটক থেকে সরে আসার কারণ কিছুটা ব্যক্তিগত, বাকিটা অভিমান ছিল। যেখানেই কাজ করি না কেন, সেখানে ভালো–মন্দ অনেক কিছুই হয়। সেটা কখনো কারও ভালো লাগে, কখনো ভালো লাগে না। নাটক আমার ভালোবাসার একটা জায়গা। কোনো কিছুকে অনেক ভালোবাসলে অনেক সময় ভালোবাসার জায়গা থেকেই সরে আসতে হয়। যেমন বলে না মানুষ, প্রেম শুধু কাছেই টানে না দূরেও সরিয়ে দেয়।’

কী এমন অভিমান—এ প্রসঙ্গে মীম বলেন, ‘সে সময় কিছু কারণে আমার মন খারাপ হয়েছিল। আবার পড়াশোনার বেশ চাপ ছিল। গ্র্যাজুয়েশন শেষের দিকে ক্লাস–পরীক্ষা শেষে দেরিতে শুটিংয়ে যেতে হতো। তখন আমার জন্য সেটে কো-আর্টিস্ট অপেক্ষা করতেন। আমি কাজ করব, আমার জন্য অনেকে বসে থাকবে, এগুলো নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। তখন কাজ এমনিতেই কমিয়ে দিয়েছিলাম। তা ছাড়া আমার ব্যক্তিগত অভিমানের একটা জায়গা ছিল। সেসব মান-অভিমান থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিই।’

অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত
অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত

এই অভিনেত্রী জন্মদিন ছিল সম্প্রতি। এবার দিনটি অন্য বছরের চেয়ে একদমই আলাদা। দিনের শুরুতে বাসায় ছোট বোনের বানানো কেক কেটেছেন তিনি। প্রতিবছর কাছের বন্ধুদের নিয়ে আনন্দেই দিনটি কাটত। অনেকেই বাসায় চলে আসতেন। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রতিবছর জন্মদিন পালন করি আর না করি কাছের অনেকেই বাসায় আসে। অনেকেই সারপ্রাইজ দিত। সবার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটত। গত বছর আরটিভি অফিস এবং বাসা মিলিয়েই দিনটি কেটেছে। এবার তো করোনায় কেউ কাছে আসতে পারছে না। অনেক বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, ভক্তরা উইশ করছেন, ভালো লাগছে। পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটছে। তবে করোনা নিয়েই দুশ্চিন্তা, হতাশা ভয়, সবার মতো আমারও আছে। কী হবে সারাক্ষণ একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। পরিবারে আমার বাবা মা ভালো নেই। তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে।’ জন্মদিনে সবচেয়ে বড় উপহার কী, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় উপহার আমার পরিবার। আমার ভক্ত।’

এ অভিনেত্রীর মা–বাবা দুজনই অসুস্থ। তাদের হার্টের সমস্যা। সে জন্য বাসায় থেকে মা–বাবাকে দেখাশোনার জন্য নিজেই নিয়মিত সময় দিচ্ছেন। গত প্রায় তিন মাসে এক দিনের জন্য মা–বাবাকে রেখে বাইরে বের হননি তিনি। যে কারণে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করলেও বাধ্য হয়ে তাকে ছুটি নিতে হয়েছে। বাসা থেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর এনজিওর অফিস। বাসায় তাঁর বোন থাকলেও ডাক্তারি করার কারণে তাকে মাঝেমধ্যেই কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার ছোট বোন হাসপাতালে গেলে একজনকে বাসায় থাকতেই হয়। তা ছাড়া আমার বোন নিয়মিত হাসপাতালে যাওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই তাকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়। এই সময় বাসায় বাইরে মানুষ আসাও নিরাপদ নয়। মা–বাবার হার্টের সমস্যা। দুজনই বাইরে গেলে তারা চিন্তা করবেন। এ জন্য একজনকে সব সময় বাসায় থাকতেই হয়। মা–বাবার সঙ্গে সব সময় বাসায় থাকার জন্যই আমি এখন সংবাদ পাঠ থেকে আপাতত ছুটি নিয়েছি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, সেটার অফিস বাসা থেকেই করছি।’

অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত
অভিনেত্রী সাবরিন সাকা মীম। ছবি সংগৃহীত

আগের মতো টিভির সামনে খুব বেশি বসেন অভিনেত্রী মীম। নাটকও ঈদ ছাড়া খুব কমই দেখেন তিনি। তবে খবর রাখেন নাটকের মান আগের চেয়ে কমে গেলেও এখনো কিছু কিছু ভালো নাটক হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বল্প বাজেট, বর্তমান চাহিদা, গল্প মিলিয়ে কিছু ভালো নাটক হচ্ছে, কিন্তু খারাপের ভিড়ে ভালো নাটকগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদে নাটক দেখার চেষ্টা করি, কিন্তু এত নাটক আর বিজ্ঞাপনের ভিড়ে কোন চ্যানেলে নাটক দেখছি, সেটাই ভুলে যাই।’

১৯৯১ সালে শিশুদের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ক্যারিয়ারে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। পরের বছর থেকে টানা অভিনয় করেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকেই তাঁর পর্দায় উপস্থিতি কমতে থাকে। মান–অভিমানের কারণেই তিনি ২০১১ সালের পর টিভি নাটকে অভিনয় করেননি। ২০১৩ সাল থেকে সংবাদ পাঠ শুরু করেন। সেটাই নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রিয় এই অঙ্গন আপনাকে এখন কতটা টানে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নাটককে আমি খুবই ভালোবাসি। জায়গাটার প্রতিও আমার ভালোবাসা আছে। নাটক দিয়েই আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন ২০২০ সালে এসে আমার অন্যান্য ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। যে কারণে কখনো মনে হয় না আবার অভিনয়ে ফিরি। অভিনয় করতেই হবে, না করলে বাঁচব না, এমনটা এখন আর মনে হয় না। আমার মনে হয়, বড় একটা গ্যাপের কারণে এখন অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাটাও কমে গেছে। আবার আমাকে কেউ অভিনয় করতে বললেও মনে হয় অভিনয় করতে পারব না। আমার কাছে মনে হয়, অভিনয়টাই ভুলে গেছি।’