দিলরুবা খানের জিডি, শাকিব খানের পাল্টা অভিযোগ

শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় জিডি করেছেন গায়িকা দিলরুবা খান। ছবি: ফেসবুক থেকে
শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় জিডি করেছেন গায়িকা দিলরুবা খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

গানের অধিকার ইস্যুতে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন গায়িকা দিলরুবা খান। গত সোমবার রাজধানীর গুলশান থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দিলরুবা খান। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শাকিব খান। তিনি বলছেন, দিলরুবা খান মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।


সাধারণ ডায়েরিতে দিলরুবা খান লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দশকে “পাগল মন মন রে মন কেন এত কথা বলে” গানে কণ্ঠ দিই। এই গানটি সর্বপ্রথম প্রচারিত হয় বাংলাদেশ বেতারে। কপিরাইট আইন ২০০০–এর ধারা ১৫(১)(ক) অনুযায়ী গানটি একটি সংগীতকর্ম এবং কপিরাইটের আওতাভুক্ত। আমার গাওয়া এই “পাগল মন” গানটি জনপ্রিয়তা পায়। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাসেট বিক্রি হয়।

তারপর আইনগতভাবে আমি গানটির কপিরাইট সনদ সংগ্রহ করি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস হতে, যাহার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৬৩৪৪ সিওপিআর।’

গানের অধিকার ইস্যুতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন দিলরুবা খান। ছবি: ফেসবুক থেকে
গানের অধিকার ইস্যুতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন দিলরুবা খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

সাধারণ ডায়েরিতে দিলরুবা খান আরও উল্লেখ করেন, এ বছরের ১০ জানুয়ারি বিভিন্ন মারফতে তিনি জানতে পারেন, চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খান এসকে ফিল্মসের ব্যানারে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে গানটি রিমেক করিয়েছেন। তারপর শাকিব খান তাঁর ইউটিউবে আপলোড করেছেন। বর্তমানে গানটির ভিউ ১ কোটি ৮০ লাখ অতিক্রম করেছে, যা কপিরাইট আইন ২০০০–এর ধারা ৭১ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ধারা ২৩–এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।


দিলরুবা জানান, শাকিব খান ও তাঁর প্রতিষ্ঠান তাঁদের কাছ থেকে গানটি করার অনুমতি নেয়নি এবং তাঁরা এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাইলেও অগ্রাহ্য করে। দিলরুবা খান সাধারণ ডায়েরিতে বলেন, ‘এ বিষয়ে আগে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাই এবং কোনো সুরাহা না হওয়ার কারণে আমি গীতিকার ও সুরকারের পক্ষে সাধারণ ডায়েরি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি।’


সাধারণ ডায়েরি করার আগে দিলরুবা খান ও তাঁর আইনজীবী ওলোরা আফরিন অনুমতি ছাড়া ‘পাগল মন’ গানের দুই লাইন পাসওয়ার্ড ছবিতে ব্যবহার করার কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটে হাজির হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (সাইবার ক্রাইম তদন্ত বিভাগ) মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘দিলরুবা খান তাঁর আইনজীবীসহ আমাদের দপ্তরে অভিযোগ করতে এসেছিলেন। আমরা তাঁর অভিযোগ দেখেছি। তাঁকে থানায় গিয়ে বা আদালতে হাজির হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’


‘পাগল মন’ গানটির প্রথম দুই লাইন গত বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়। গানের দুই লাইন নিয়ে নতুনভাবে সাজানো গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন ভারতীয় সংগীত পরিচালক লিংকন। গানটিতে কণ্ঠ দেন অশোক সিং। মালেক আফসারি পরিচালিত ছবিটি গত বছর মুক্তি পায়।

‘পাগল মন’ গানটির প্রথম দুই লাইন গত বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
‘পাগল মন’ গানটির প্রথম দুই লাইন গত বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় শাকিব খানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘“পাসওয়ার্ড” ছবির শুটিংয়ের সময় ফোনে কথা হয় দিলরুবা খানের সঙ্গে। ছবিটির আরেকজন প্রযোজক ইকবাল, পরিচালক মালেক আফসারী এবং চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সাক্ষী আছেন, আমি দিলরুবা খানের কাছ থেকে “পাগল মন” গান ফিউশনের জন্য অনুমতি নিয়েছি। তিনি খুশিও হয়েছিলেন। আমাকে দোয়া করেন। এত মাস পর এসে কেন অস্বীকার করছেন, কীই–বা তাঁর উদ্দেশ্য, কিছুই বুঝতে পারছি না! দেশের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী হয়ে এখন এসে মিথ্যা বলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করছেন।’


শাকিব খান আরও বলেন, ‘দিলরুবা খান অনুমতি না দিলে আমি কেনই–বা ওই গানের মাত্র দুই লাইন নেব? আমি গানটি দুই লাইন ব্যবহার করছি জেনে তিনি খুশিও হয়েছিলেন, বলেছিলেন, শ্রোতাদের আবার নতুন করে গানটির ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হবে। আরও বেশি শ্রোতার কাছে গানটি পৌঁছাবে। এখন তাঁর মতো বড়মাপের একজন শিল্পী মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করছেন।’


কথায় কথায় শাকিব খান বললেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান থেকে “পাসওয়ার্ড” ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গেল বছরের ঈদে। মুক্তির আগেই ইউটিউবে গান প্রকাশ হয়েছিল। যখন গান মুক্তি পেয়েছিল, তখন তিনি কেন চুপ ছিলেন? আমাকে যদি বলতেন, তাহলে তো ওই দুই লাইন ফেলে দিতাম, এমনকি গানও রাখতাম না। কোটি টাকায় সিনেমা বানাব, একটা গান নিয়ে কেন ঝুঁকি নেব! আর বিষয়টা এমন না যে, “পাগল মন”-এর ওই দুই লাইন না রাখলে ছবির বিরাট ক্ষতি হয়ে যেত!’