'দোস্ত, আই অ্যাম রেডি টু ফ্লাই'

এন্ড্রু কিশোর ও হানিফ সংকেত। ছবি: ফেসবুক থেকে
এন্ড্রু কিশোর ও হানিফ সংকেত। ছবি: ফেসবুক থেকে

এন্ড্রু কিশোর আমার বন্ধু ছিল। আত্মার আত্মীয় যাকে বলে। বিয়ে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলাম। তাঁর চলে যাওয়ায় আমি যেন অন্ধ হয়ে গেলাম। এ আমার অঙ্গহানির মতো ক্ষতি।

এন্ড্রুর সঙ্গে আমার হাজারো স্মৃতি। সারা দেশ ঘুরেছি আমরা। খাগড়াছড়ি, জয়পুরহাট, রাঙামাটি—কত জায়গাতেই না গিয়েছি একসঙ্গে। সে বলত, ‘গান না করলাম, চল যাই একসঙ্গে, আড্ডা দেব।’ খুব মিশুক একটা ছেলে ছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, কারও নামে গিবত করত না। আজ এই যে ফেসবুক কালচার শুরু হয়েছে, এসবের মধ্যে সে ছিল না। শেষের দিকে একটা পেজ কে যেন খুলে দিয়েছিল, সেটা বেশির ভাগ সময় নিজে চালাত না।

সে ছিল একজন অন্য রকম মানুষ। কোথাও অনুষ্ঠান করতে গেলে কখনোই একজন শিল্পীর মতো আচরণ করত না। মনে হতো ‘ইত্যাদি’র একজন কর্মী। আমি তার দেখভাল কী করব, সে আমার দেখভাল শুরু করে দিত। অস্থির হয়ে যেত, ‘দোস্ত বেশি দৌড়াদৌড়ি করিস না, টায়ার্ড হয়ে যাবি। এই ওরে বসতে দে, বাতাস কর।’ বন্ধুর জন্য এভাবে অস্থির হয়ে যেত। শেষের দিকে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। ফোনে যোগাযোগ ছিল আমাদের। রাজশাহীতে তাঁর আত্মীয়স্বজন, ভাগনের সঙ্গে কথা হতো। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও কথা হতো। তাঁর স্ত্রী শেষের দিকে এমনভাবে ভেঙে পড়েছিল যে আমার ফোনও ধরত না।

জুন মাসে দেশে ফিরে প্রথম ফোনটা এন্ড্রু আমাকেই করেছিল। করে বলল, ‘দোস্ত আমার জার্নি শেষ, আই অ্যাম রেডি টু ফ্লাই। আমার অবস্থা ভালো না। আসার দরকার নাই, তাতে কষ্ট কম পাবি।’ শুনে আমি হতভম্ব! কেমন যেন লাগছিল আমার। ভেবেছিলাম এ রকম পরিস্থিতিতে তো মানুষ ছয় মাস বা এক বছর বাঁচবে। খুব দ্রুত শরীর খারাপ হতে থাকে কিশোরের। আর আমারও যোগাযোগ বেড়ে যায় রাজশাহীতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে আজ সন্ধ্যায় এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় এন্ড্রু কিশোর—বাংলা গানের ঐশ্বর্য, যার খ্যাতির চাইতে কণ্ঠের দ্যুতিই ছিল বেশি। যার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অনেক কষ্ট পেয়েছি বন্ধু, এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি, ভাবিনি। কিশোরের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

সবাই চলে যাবে। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু এতটা কষ্ট দেয়, যা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। সেই যাতনা কেবল অন্তর দিয়ে অনুভব করা যায়।