এই সিক্স প্যাক আজীবন বয়ে বেড়াতে চান না শুভ

৯ মাসের হাড়ভাঙা খাটুনির পর এই সিক্স প্যাককে আজীবন বয়ে বেড়াতে চান না আরিফিন শুভ।ছবি: সংগৃহীত
৯ মাসের হাড়ভাঙা খাটুনির পর এই সিক্স প্যাককে আজীবন বয়ে বেড়াতে চান না আরিফিন শুভ।ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবে ঘুরছে আরিফিন শুভর একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন এই অভিনেতা, নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়ছেন, তৈরি করছেন ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। কিন্তু এই পরিশ্রমকে শুধু ঘাম ঝরানো বললে ভুল হবে। ভুল হবে যদি বলি, এই প্রস্তুতি শুধু একটি ছবির একটি চরিত্রের জন্যই নিচ্ছেন শুভ। তাহলে এই পরিশ্রমকে কী বলা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই কথা হলো শুভর সঙ্গে। তিনি জানালেন একজন অভিনেতার দায়িত্ব পালনের জন্য কতটা অমানবিক হতে হয়েছে তাঁকে। শুধু শরীরের গড়নটাই না, এই পরিশ্রম বদলে দিয়েছে শুভর জীবনটাকেও। তিনি হয়ে উঠেছেন অন্য মানুষ।

২০১৮ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বর হবে। ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি (কর্মশালা, স্ক্রিপ্ট রিডিং, লুক টেস্ট) প্রায় শেষ। এবার চরিত্রকে ধারণের পালা। শুভ নিজেই পড়াশোনা করে নিজেকে সেই চরিত্রের উপযোগী করার জন্য শুরু করলেন দেহগড়ন ভেঙে নতুন আকার তৈরির কাজ। শুরু হলো জিমে যাওয়া, শুরু হলো ট্রেনিং। টানা ৯ মাস ধরে চলে ট্রেনিং। শুভ তাঁর সেই ৯ মাসের ট্রেনিংয়ের গল্পকে গেঁথেছেন একটি তথ্যচিত্রে। ৯ মাসের এই যাত্রায় পাওয়া শিক্ষা, নিজেকে ভেঙে গড়ার অনুপ্রেরণা, নিজের জেদ, ব্যথা, পরিশ্রম, বাধা, অর্জন—সবই এই তথ্যচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে। ১৬ জুলাই এই নির্মাণের টিজার বেরিয়েছে আরিফিন শুভর ইউটিউব চ্যানেলে। ঈদের পরপরই একই জায়গায় আসবে পুরো তথ্যচিত্র।

শুধু শরীরের গড়নটাই না, এই পরিশ্রম বদলে দিয়েছে শুভর জীবনটাকেও। ছবি: সংগৃহীত
শুধু শরীরের গড়নটাই না, এই পরিশ্রম বদলে দিয়েছে শুভর জীবনটাকেও। ছবি: সংগৃহীত

যখন শুভ তাঁর এই ৯ মাসের যাত্রা শুরু করেন, তখন তাঁর ওজন ছিল ৯৪ কেজি। ‘আহারে’ ছবির জন্য ৮৫ কেজি থেকে ওজন বাড়িয়ে ৯৪ কেজি করতে হয়। এরপর শুরু হয় ৯৪ কেজি থেকে আবার ৮৪ কেজিতে ফেরার সফর। এই সফরে শুভর জন্য পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। সেই হাড়ভাঙা খাটুনির ফিরিস্তি দিতে শুভ বলেন, ‘অমানবিক পরিশ্রম করেছি।’ তাঁর কথার সত্যতা বুঝতে পারি, যখন শুভ শোনান তাঁর সেই সময়ের রোজনামচা। বলেন, ‌‘ট্রেনিংয়ের সময়টায় আমি অসামাজিক হয়ে গিয়েছিলাম। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে ওই সময় আমাকে কেউ পেত না।’ কারণ, রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হতো শুভকে। উঠতে হতো ভোর ৫টায়। সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করতে হতো আউটডোর কার্ডিও (খোলা জায়গায় হাঁটা/দৌড়ানো)। এরপর ফিরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে ঢুকে যেতেন জিমে। সেখানে সন্ধ্যা ৬-৭টা পর্যন্ত চলত ব্যায়াম। মাঝে ঘণ্টাখানেকের বিরতিতে ঘুমানোর সুযোগ পেতেন। জিমেই খেতে হতো। আর ধাপে ধাপে হতো কার্ডিও আর ওয়েট ট্রেনিং। প্রচণ্ড ভোজনরসিক শুভর ডায়েট সেই সময়ে থাকত মাছ, সবজি, ডিমের সাদা অংশ, বাদাম, পিনাট বাটার—ব্যস এইটুকুই।

জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন এই অভিনেতা, নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়ছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে
জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন এই অভিনেতা, নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়ছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে

আরিফিন শুভর জন্য সময়টা মোটেও সহজ ছিল না। একটা চরিত্রের জন্য এত কষ্ট তো না করলেও পারতেন! এই কথার প্রত্যুত্তরে শুভ বলেন, ‘হয়তো পারতাম। কিন্তু আমি যখন এ ধরনের চরিত্রে জন্য নিজেকে কেমন করে প্রস্তুত করব, তা খুঁজতে গেলাম, দেখলাম আমার সামনে অনুপ্রেরণা হিসেবে আমাদের দেশের শিল্পী নেই। বিদেশি শিল্পীদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হলো। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, আমার মতো যেন আর কেউ অনুপ্রেরণা খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ না হয়। আমি বডি বিল্ডার নই। একেকটা চরিত্রের জন্য নিজেকে ভেঙে আবার গড়ে নেওয়াটাই আমার কাজ। আমি শিখেছি ক্রিশ্চিয়ান বেইল, ড্যানিয়েল ডে লুইস, ম্যাথিউ ম্যাকনহে, আমির খানদের দেখে। আমি জানি, সামনে আমার চেয়েও ভালো অনেক অভিনেতা আসবে, নিজেকে এভাবে ভেঙেচুরে গড়ে নিতে পারবে। আমি চাই, তখন যেন আমার এই চেষ্টা একটু হলেও তাদের অনুপ্রাণিত করে।’

আরিফিন শুভ। ছবি: ফেসবুক থেকে
আরিফিন শুভ। ছবি: ফেসবুক থেকে

৯ মাসের হাড়ভাঙা খাটুনির পর এই সিক্স প্যাককে আজীবন বয়ে বেড়াতে চান না আরিফিন শুভ। তাঁর ভাষায়, এটা তো শুধু একটা সিনেমার একটা চরিত্রের জন্য তাঁর পরিশ্রম। কোনো ছবির জন্য হয়তো তাঁকে রোগা দেখাতে হবে, সেটার জন্যও ঠিক এমনই পরিশ্রম করতে প্রস্তুত এই অভিনেতা। ৯ মাসের এই ‘ট্রান্সফরমেশন’ যাত্রায় শুভর লিগামেন্ট স্থানচ্যুত হয়েছে, ছিঁড়েছে পায়ের টিস্যু। ট্রেনিংয়ের মাঝপথে এসে শারীরিক ভাঙচুরের যন্ত্রণায় মনে হয়েছে আর বুঝি পারবেন না। কিন্তু শুভ নিজেকে প্রবোধ দিতেন এভাবে, ‘ভিনদেশের অভিনেতারা যেহেতু পেরেছেন, তাঁদের সঙ্গে একই আকাশের নিচে থেকে আমি কেন পারব না?’ এরপর পরদিন ব্যথায় কাতর শরীর নিয়েই আবার ছুটে গেছেন জিমে। কারণ, চেতন আর অবচেতন, দুই অবস্থাতেই শুভর বিশ্বাস, ‘মন থেকে চাইলে, বদ্ধপরিকর হলে কোনো পথই কঠিন নয়।’