পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগোতে চান তাঁরা

ঈদের পর শুটিং শুরু করেছেন টেলিভিশন তারকারা। তবে করোনার আতঙ্কে আগের মতো আনন্দ নেই শুটিং স্পটগুলোতে। ছবি: সংগৃহীত
ঈদের পর শুটিং শুরু করেছেন টেলিভিশন তারকারা। তবে করোনার আতঙ্কে আগের মতো আনন্দ নেই শুটিং স্পটগুলোতে। ছবি: সংগৃহীত

বাড়ি থেকে শুটিং স্পটের পথ এখন দীর্ঘ মনে হয় অভিনয়শিল্পীদের। আগের মতো উৎফুল্ল মন নিয়ে শুটিংয়ে যাওয়া হয় না। ধরা যাক শাহনাজ খুশির কথা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ের প্রস্তুতি বেড়ে গেছে তার। চায়ের কেতলি, টি–ব্যাগ, খাবার, পানির বোতল, হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক, থালাবাসন—কত কী নিয়ে যে বের হতে হয়, তা বলার নয়। স্পটেও আগের সেই আনন্দ নেই। করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আতঙ্ক কমেনি।

ঈদুল আজহার পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন অভিনয়শিল্পীরা। সেই ফেরায় ঈদের আমেজ নেই। কিছুটা অবসর কাটিয়ে ফিরলেও যেন ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন সবাই। কোরবানির ঈদের পর তারকাদের বাড়ি থেকে খাবার আসত শুটিং স্পটে। প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকেরা মিলে আনন্দ নিয়ে খাওয়া হতো সেসব। এখন আর সবার জন্য নয়, কেবল নিজের জন্যই খাবার নিয়ে স্পটে গেছেন সবাই। সেটা কেবল নিজের জন্যই? না, সহকর্মীদের নিরাপত্তার কথাও ভেবেছেন তাঁরা। ঈদের পরের শুটিংয়ে কোলাকুলি আর করমর্দনের ধুম পড়ে যায়। বড়দের কাছে ছোটদের বকশিশের আবদার, রূপসজ্জাকক্ষের হইহুল্লোড়, কিচ্ছু ছিল না এবার।

একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছবি: সংগৃহীত
একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের আগে টানা কাজের ধকল সইতে হয় নাটকের মানুষদের। তাই ঈদের পর ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত বিরতি নেন অনেকেই। তারপর শুরু করেন শুটিং। করোনায় সেই বিরতি আর নেওয়া হয়নি। বাড়িতে থাকা দীর্ঘ লকডাউনের বিভীষিকার মুখোমুখি আর হতে চাননি কেউ। ঈদের এক দিন পরই তাই কাজে ফিরেছেন ফারুক আহমেদ, ডাক্তার এজাজ; দুই দিন পর মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, প্রভা, শাহনাজ খুশি, তানজিন তিশা, নাবিলা ইসলামরা। উত্তরা ও পুবাইলের প্রায় ১০টি ইউনিটে কাজ শুরু করেছেন শতাধিক অভিনয়শিল্পী। বাফার জোন নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন মোশাররফ করিম। তিনি জানালেন, ঈদের পর কাজে ফেরার একটা তাড়না সব সময় অনুভব করেন তিনি। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা হয়, আড্ডা হয়। ঈদ নিয়ে নানা খুনসুঁটিসহ কত কথা হয়! তিনি বলেন, ঈদের পরের শুটিংয়ের আনন্দের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একটু আলাদা। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ব্যাপারে আগেই কথা দেওয়া ছিল। কথা রাখতেই এই সময়ে কাজে ফেরা।

মঙ্গলবার ভদ্রপাড়া ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছেন নির্মাতা সকাল আহমেদ। তিনি বললেন, ‘আগে ঈদের পর কাজে ফিরলে কাজের চেয়ে আড্ডাই বেশি হতো। ঈদে কে কী করেছি, কোথায় গেছি, কে কী নাটক দেখলাম, ঈদে কেমন কাজ হচ্ছে, সেসব নিয়ে কথা হতো। এখন চাইলেও আড্ডা দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ কাছে এলেই ভয় করছে। দরকার ছাড়া কারও সঙ্গে কথাও হচ্ছে না।’ প্রায় ৫ মাস পর এই নাটকে অংশ নিলেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, আরফান, জামিল প্রমুখ।

ঈদের এক দিন পরই কাজে ফিরেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশিসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
ঈদের এক দিন পরই কাজে ফিরেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশিসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ে ফিরে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ইউনিটগুলো। লোকবলের অভাব, খাবারের সংকটসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের। অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঈদটা আলাদা কিছু ছিল না। বাসাতেই ছিলাম। পরে চিন্তা করলাম শুটিং করি। আমার ক্যারিয়ারে কখনো ঈদের এক দিন পর শুটিং শুরু করিনি। এবার নতুন অভিজ্ঞতা হলো। শুটিংয়ে এসে পুরো পুবাইলে কোনো খাবার পাইনি। পরে টঙ্গি থেকে খাবার এনে খেয়েছি।’

উত্তরার আপনঘর শুটিংবাড়িতে চলছিল পরের মেয়ে ধারাবাহিক নাটকের শুটিং। শুটিংবাড়ির মালিক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঈদের আনন্দ নেই। তবু আমরা খুশি যে ঈদের এক দিন পর থেকে শুটিং শুরু হয়েছে।’ যথা নিয়মে আগামী সপ্তাহ থেকে কাজে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবিন চৌধুরী, আনিসুর রহমান মিলন, নাদিয়া আহমেদ, টয়া প্রমুখ।
করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে শুরু করেছেন সবাই। অন্যদের মতো নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়মিত কাজ করতে চান নির্মাতা ও তারকারাও। করোনার কারণে চ্যানেলগুলোতে স্থগিত থাকা প্রায় ২০টি ধারাবাহিকের শুটিং আগামী সপ্তাহ থেকে পূর্ণদমে শুরু হবে। প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির জানান, করোনায় সব সেক্টরের মতো তাঁদেরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগোতে চান তাঁরা।