সামনে একটা বড় ক্রাইসিস দেখা দেবে

জাহিদ হাসান। ছবি: প্রথম আলো
জাহিদ হাসান। ছবি: প্রথম আলো
প্রথমবারের মতো ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জাহিদ হাসান। শিগগিরই শুরু করবেন শুটিং। ওয়েব সিরিজ, করোনাকালে স্বজনদের প্রয়াণসহ সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।


শেষ পর্যন্ত ওয়েব সিরিজে কাজ করতে যাচ্ছেন? ‘মাফিয়া’য় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে। পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেও আমি সন্তুষ্ট। যদিও ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে ভয়ে আছি।

ভয় কেন?
এটা ইতিবাচক ভয়। বাংলাদেশে কিছুদিন আগে ওয়েব সিরিজ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছিল। আমি মনে করি, সবকিছুর আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য থাকে। আমরা যখন সেটা থেকে সরে আসি, তখন সমালোচনার ঝড় ওঠে।

নতুন সিরিজে আপনিই কি মাফিয়া?
হ্যাঁ। আমি এমন এক মাফিয়া, যার পরিবার–পরিজন—সবাই দেশের বাইরে থাকে। তাই ডর-ভয় কম। নারায়ণগঞ্জে শুটিং হবে এটার।

জাহিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জাহিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশে ওয়েব সিরিজ বেড়েছে। কেমন হবে বলে মনে হচ্ছে?
বাইরের ওয়েব সিরিজ আমরা যেমন দেখছি, আমাদেরগুলোও বাইরের লোকের দেখার উপযোগী হবে না কেন? আমাদের এই সেক্টরে কাজ প্রচুর করতে হবে, তবেই আমরা বুঝতে পারব যে কেমন কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের চারপাশে অসাধারণ যেসব গল্প আছে, সেগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হলে সেসব বিশ্ববাসীর হৃদয়ও স্পর্শ করবে।

পুরোদমে শুটিং শুরু করেছেন?
এখনো না। মাঝে বুঝে–শুনে কয়েকটা নাটকের শুটিং করেছিলাম।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন?
তা না। গল্পটল্প মিলিয়ে অনেক কিছু ভালো লাগছে না। তাই কাজ করতেও আনন্দ পাচ্ছি না।

নাটকের কোন দিকটায় নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন?
আমাদের সিস্টেমগত অনেক বদল হয়েছে। আগে যেমন টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠানপ্রধান ছিলেন, যিনি অনুষ্ঠান দেখবেন। মার্কেটিংয়ের লোক মার্কেটিং দেখবেন। এখন তো চ্যানেলে মার্কেটিংয়ের লোকেরা নাটকের মান দেখেন। মান নিয়ন্ত্রণের কথাও তাঁরাই বলেন। চ্যানেলে কী নাটক চলবে, কী চলবে না, তা মার্কেটিংয়ের লোক সিদ্ধান্ত নেন। চরিত্রে দরকার একজন, অথচ চ্যানেল ও এজেন্সির কারণে তা বদলে যায়। কেউ পাহারাদার ভালো, তাই বলে যুদ্ধক্ষেত্রে তো ভালো না–ও হতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে সবারই গভীরভাবে ভাবা উচিত।

আপনি তো সিনেমায়ও কাজ করেছেন। সিনেমার সাম্প্রতিক অবস্থার খবর রাখেন?
বেশির ভাগই দেখি এখন সমিতি নিয়ে মাতামাতি করে। সিনেমা নিয়ে যতটা আলোচনা ও পরিকল্পনা দরকার, তা নেই। কাজ নেই বলে সবাই অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সমিতি নিয়ে এভাবে মেতে থাকত না। এসব নিয়ে আলোচনা করার সময়ই পেত কই! বেকার মানুষ, যাঁর কোনো কাজ নেই, তিনি পাশের বাড়ির লোককে বলবেন, তাঁর বাড়ির গাছ কেন আমার বাড়িতে এল? এসব নিয়েও ঝগড়া করবেন। আবার এ–ও বলবেন, ওই বাড়ির পানি কেন আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছে। সবাই যখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, এসব ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাববার সময়ই পাবেন না। কোনো কাজ নেই বলে এসব নিয়ে ব্যস্ত আছেন।

প্রথম আলোয় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পৃথিবীর সুস্থতার জন্য নিয়ম করে বছরে ১০ দিন লকডাউন রাখা উচিত।
আমি এখনো তা–ই বলছি, বছরে ১০ দিন লকডাউন করা উচিত। এতে পৃথিবীর অনেক কিছুই হেল্প হবে। যেকোনো ধর্মে উপোসের একটা বিষয় দেখি। কেউ বলে রোজা, কেউ বলে উপোস—শরীরটাকে একটা ব্যালেন্সও করে। একটা গাড়িরও কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পর সার্ভিসিং করতে হয়। পৃথিবীর সার্ভিসিংয়ের জন্য ১০ দিন লকডাউন দরকার।

করোনার শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন, নাট্যাঙ্গনের মানুষদের উপলব্ধি বদলাবে। আবার কেউ বলেছিলেন, বদলাবে না। এখন কী মনে হচ্ছে? বদলেছে? বদলালে কতটা?
উপলব্ধিতে কিছুটা চেঞ্জ এসেছে, এটা সত্য। আমি মনে করি, এই অবস্থার দরকারও ছিল, তাই মানুষ ভাবতে পারছে, নিজের সঙ্গে নিজে কথাও বলতে পারছে। এই হাসাহাসি, প্রেমপ্রীতির নাটক দিয়ে আর কত দিন! নাটক কি শুধু এসব নিয়েই হবে? আমাদের বোধগুলোও তো জীবনের অংশ। নাটকে আমাদের চারপাশের অনেক কিছুর প্রাধান্য থাকা উচিত।

চরিত্রে জাহিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত
চরিত্রে জাহিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত

আপনি ও আপনার স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ—দুজনেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। আপনাদের সন্তানেরাও কি এই অঙ্গনে থাকবে?
সন্তানদের ভবিষ্যৎ সন্তানেরাই ঠিক করবে। আমরা শুধু চাই, তারা সুস্থ ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমার মা–বাবাও কিন্তু চাননি আমি অভিনয় করি। আমি এমন অনেককে চিনি, তাঁদের মা–বাবাও চাননি সন্তানেরা ক্রিকেটার বা ফুটবলার হোক, কিন্তু হয়েছে। তাই বলছি, সন্তানেরা যেটা করার, সেটা করবেই।

তাদের আগ্রহ কোন দিকে? তারা কি আপনার নাটক, মায়ের নাচের পারফরম্যান্স দেখে?
টেলিভিশনে নাটক হলে তারা দেখে। কিন্তু অভিনয় করবে, সে রকম আগ্রহ তাদের মধ্যে দেখিনি। তবে মেয়ের নাচের দিকে একটু ঝোঁক আছে। তবে শিক্ষকও হতে চায় মনে হলো। ছেলে পূর্ণর খেলার প্রতি আগ্রহ বেশি। ফুটবল তার ভীষণ পছন্দ।

ফুটবল আপনার কেমন লাগে?
ছোটবেলায় আমি ফুটবল খেলতাম। সিরাজগঞ্জে থাকতে আমি তো হায়ারে খেলতেও যেতাম। ফুটবল খেলে প্রতি ম্যাচে ১০ টাকা পেতাম।

শেষ প্রশ্ন, করোনাকালে এমন কোন ভাবনা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে?
কিছুদিন আগে শাশুড়ি রাশা ইসলাম মারা গেলেন। করোনায় পরিচিত–অপরিচিত অনেক মুরব্বি মারা গেছেন। ইদানীং মনে হয়, আমরা মুরব্বিশূন্য হয়ে যাচ্ছি। যে মুরব্বিরা আমাদের মাথার ওপর ছাতার মতো ছিলেন, প্রতিটি সেক্টর থেকে তাঁরা চলে যাচ্ছেন। এটা খুব ভাবাচ্ছে। আমার ধারণা, সামনে একটা বড় ক্রাইসিস দেখা দেবে। মুরব্বিরা চলে যাওয়ায় একটা অস্থিরতাও শুরু হবে। অভিজ্ঞ মানুষ কমে যাচ্ছে। তরুণেরা যত মেধাবী হোক, অভিজ্ঞ মানুষের বড়ই দরকার।