'স্বপ্ন না দেখলে সভ্যতা বাঁচবে না'

মামুনুর রশীদ। অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক। আরণ্যক নাট্যদলের প্রধান সম্পাদক। মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ নানা আয়োজন করেছে আরণ্যক। কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

মামুনুর রশীদ
মামুনুর রশীদ

মামুন ভাই, প্রতিবছর ১ মে আপনাকে তো রাস্তায়ই দেখি, এবারও কি তাই?
হ্যাঁ, এবারও। সেই ১৯৮২ সাল থেকে এভাবে মে দিবস পালন করে আসছি।
এবার কী থাকছে?
সংগ্রাম তো চলছেই। এবার আদিবাসী সাঁওতালদের ভূমি অধিকার, জীবিকার জন্য সংগ্রাম এদিকটা থাকবে। এখন তো আর আদিবাসী বলা হয় না। বলা হয় নৃগোষ্ঠী। এখন তো নতুন ধরনের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এবার সকালে সাঁওতাল নেতা রবীন্দ্রনাথ সরেন আমাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সেমিনারের পর সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে রচিত রাঢ়াঙ নাটকটির প্রদর্শনী আছে।
অনুষ্ঠানটি তো দিনব্যাপী। সকালে কী থাকছে?
প্রতিবছর যেমন থাকে, এবারও সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে থাকছে মে দিবসের গান, আন্তর্জাতিক সংগীত, আবৃত্তি, কবিকণ্ঠে আবৃত্তি—এসব। আর কবর নাটকটাকে শহীদ মিনারের প্রেক্ষাপটে ডিজাইন করেছি।
কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, এখন মানুষ বদলে গেছে? সাংস্কৃতিক সংগ্রামের প্রতিও মানুষের অনীহা এসেছে?
অনেক বছর ধরেই তো মে দিবসের আয়োজন করছি। ক্ষুদ্র আকারে হলেও লোকজন বাড়ছে দিন দিন। এখন শ্রমিকদের মিছিল হয়, মেলা হয়। বাজার অর্থনীতির কালে প্রচলিত সংস্কৃতির সঙ্গে শ্রমিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন হচ্ছে না।
মামুন ভাই, সাহিত্যেও কিন্তু আগের মতো শ্রেণী-সংগ্রামের কথা উঠে আসছে না।
ঠিক বলেছ। গত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত সাহিত্যে কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীর কথা যতটা উঠে এসেছে, এখন ততটা আসে না। সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নাটকে উৎপল দত্ত, খাজা মোহাম্মদ আব্বাস, নাজিম হিকমত। তারও আগে গোর্কি, অস্ত্রোভিস্কর লেখায়ও শ্রমিক শ্রেণীর বিজয় প্রাধান্য পেত। সে প্রাধান্য কমে আসছে। আমাদের সাহিত্যে যত দিন কৃষক-শ্রমিকের জীবনভাবনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা জায়গা না পাবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতিরও মুক্তি নেই, সাহিত্যেরও মুক্তি নেই।
শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেন?
শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন না দেখলে সমাজ বাঁচবে না, সভ্যতাও বাঁচবে না। স্বপ্ন দেখা শেষ করে দিলে মানুষ কি আর বাঁচবে? মে দিবসের সঙ্গে একটা রাজনীতি জড়িত আছে, আমরা সেই রাজনীতিকে সামনে আনতে চাই।