'বাংলাদেশের কথা শুনেছি'

কান উৎসবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট l ছবি: এএফপি
কান উৎসবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট l ছবি: এএফপি

সোনালি চুল, সবুজাভ চোখে কেমন ভেজা ভেজা চাহনি। হলিউড মোহিনী কেট ব্ল্যানচেট তামাম দুনিয়ার সিনেমাপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছিলেন সেই কবে! সকালে প্রেস অফিসে ঢুকতেই বুঝি চারদিকে চাপা উত্তেজনা।
৬৭তম কান উৎসবে একাধিকবারের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট আসছেন!
শুনেই মনের চোখে কেট ব্ল্যানচেটের অভিনীত সবগুলো ছবির টুকরো টুকরো দৃশ্য ভেসে উঠল। এলিজাবেথ থেকে লর্ড অব দ্য রিংস । দি অ্যাভিয়েটর অথবা বাবেল থেকে দ্য গুড জার্মান কিংবা ইন্ডিয়ানা জোন্স। সিনেমা-টিভিতে কত রূপে, কত ঢঙেই না দেখেছি তাঁকে। এই তো কানে আসার দুই দিন আগেই দেখছিলাম উডি অ্যালেন পরিচালিত তাঁর ছবি ব্লু জেসমিন। সত্যি সত্যি ‘তারে আজ চোখে দেখা’র সুযোগ আসছে!
কিন্তু সেই সুযোগ পাওয়ার আগে ‘সাংবাদিকদের বিশ্বযুদ্ধে’ জেতা চাই। মানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে উড়ে আসা দুঁদে সাংবাদিকদের ডিঙিয়ে সম্মেলনকক্ষে জায়গা পাওয়া চাই। এখন বিলক্ষণ জানি, পেশাদারি এই প্রতিযোগিতায় কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। আপনি ক্যামেরা তুলেছেন, আরেকজন নির্বিকার এসে ঠেলা-গুঁতো দিয়ে সামনে চলে যাবে। বিশাল ক্যামেরা এমন উঁচু করে ধরবে, আপনি স্রেফ নাই হয়ে যাবেন। তবে এবারে আমিও আটঘাট বেঁধে তৈরি। এক ঘণ্টা আগে ‘কিউ’তে জায়গা নিয়ে ফেলেছি। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা করছে। কার্পেটটা বেশ সাফ-সুতরো, সেখানে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়েছি। যা থাকে কপালে!
তখনো জানি না শুধু চকিতে দেখা নয়, আলাপ করার দুর্লভ সুযোগও মিলে যাবে বিশ্ব চলচ্চিত্রের এই মহাতারকার সঙ্গে। প্রশ্নোত্তর পর্বে মাইক্রোফোন লুফে নিয়ে আর হাতছাড়া করলাম না। পেছন থেকে অন্য সাংবাদিকদের হই-হল্লার মধ্যেই কেট ব্ল্যানচেটের ত্বরিত সাক্ষাৎকার শুরু-
হ্যালো, আমি বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকা থেকে এসেছি। আপনি কি জানেন বাংলাদেশে প্রচুর লোক আপনার ছবি দেখে?
—থ্যাঙ্ক ইউ। বাংলাদেশের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু যাওয়া হয়নি।
কানে আসার দুই দিন আগে আপনার ব্লু জেসমিন (উডি অ্যালেন পরিচালিত) ছবিটা দেখছিলাম। এখানে দেখছি পুরোপুরি অন্য রকম একটা ছবিতে আপনি কণ্ঠ দিয়েছেন (হাউ টু ট্রেইন ইওর ড্রাগন-২)। আপনি কি আপনার বাচ্চাদের কথা ভেবে ছবিটা করেছেন?
—এই ছবিতে আমার চরিত্রটি একজন মায়ের। আমি বাস্তবেও একজন মা। পৃথিবীর সব মা-ই একই রকম বলে আমি মনে করি। হাউ টু ট্রেইন ইওর ড্রাগন খুব আবেগময় একিট ছবি। ছবিটি দেখে আমরা অনেকবার কেঁদেছি। আমার মনে হয়, সব বাচ্চা এটা খুব পছন্দ করবে।
এলিজাবেথ, এ গুড জার্মান বা বাবেল-এর মতো সাড়া জাগানো সিরিয়াস ঘরানার ছবি আপনি করেছেন। আবার লর্ড অব দ্য রিংস, রবিন হুড বা হবিট-এর মতো ছবিও। আপনার অভিনয়-বৈচিত্র্য দেখার মতো।
—আমি মনে করি, সব অভিনেত্রীরই এটা হওয়া উচিত। আমি প্রতিবারই নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। নিজেকে নানাভাবে দেখাটা আনন্দের ব্যাপার।
আপনার প্রিয় ঘরানার সিনেমা কোনগুলো?
—হাসি অথবা কান্নায় মেশানো ছবি আমার ভালো লাগে। আবেগপূর্ণ ছবি আমার পছন্দ। যে ছবি দর্শককে কাঁদায় বা হাসায় সে রকম ছবিই আমি করতে চাই।
সত্যি সত্যি ড্রাগনের পিঠে চড়াটা কেমন হবে বলে মনে হয়?
—আমার মনে হয় ছবির পরিচালক (পাশে পরিচালকের দিকে তাকিয়ে হেসে) সেটা ভালো বলতে পারবেন। আমি ছবিটা নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত এটা শুধু এটুকু বলতে পারি।
আরও কত প্রশ্ন উথলে উঠেছিল মনে। কিন্তু পেছন থেকে ততক্ষণে বাকি সাংবাদিকেরা ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করেছেন। একজন এত প্রশ্ন করলে চলবে না। অনুষ্ঠানের সঞ্চালকও বারবার ইশারা করছেন আমাকে মাইক্রোফোন ছাড়তে। যাক দিলাম ছেড়ে! মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। এর চেয়ে বেশি কী?