চলে গেলেন অভিমানী রবিন

রবিন উইলিয়ামস
রবিন উইলিয়ামস

শেষপর্যন্ত কি বিষণ্নতার কাছে হেরেই চলে গেলেন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস! বিষয়টি এখনো রহস্যে ঘেরা।

গতকাল সোমবার তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি থেকে অস্কারজয়ী এ অভিনেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, ৬৩ বছর বয়সী এই গুণী অভিনয়শিল্পী আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ বিভাগ।

‘গুড মর্নিং ভিয়েতনাম’ ও ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি পাওয়া রবিন উইলিয়ামস বেশ কিছুদিন ধরে মারাত্মক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মিডিয়া প্রতিনিধি মারা বাক্সবাম।

মারা বলেন, ‘এটা ট্রাজিক ও মারাত্মক ক্ষতি। এই কঠিন সময়ে রবিনের পরিবার প্রাইভেসি রক্ষার জন্য সবার কাছে আবেদন করছে।’


তদন্তকারী কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ‘মৃত্যুর কারণ হতে পারে অ্যাসফিক্সিয়া বা অক্সিজেনের ঘাটতিতে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু। তবে বিষয়টা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নাপা ভ্যালির গ্রাফিকস ডিজাইনার সুজান স্নেইডারকে ২০১১ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন রবিন। সিএনএনকে এক লিখিত বার্তায় সুজান জানিয়েছেন, ‘আজ সকালে আমি আমার স্বামী ও সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি। বিশ্ব হারিয়েছে প্রিয় একজন অভিনয়শিল্পী ও সেরা একজন মানুষকে। আমি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছি।’

উইলিয়ামের মৃত্যু সংবাদ পুরো হলিউডের বিনোদন জগেক নাড়া দিয়েছে। কমেডিয়ান স্টিভ মার্টিন এক টুইটে বলেন, ‘রবিনকে হারিয়ে আমি শোকাতুর। চমত্কার প্রতিভা, আমার সহকর্মী, প্রকৃত মানুষ ছিলেন তিনি।’

হোয়াইট হাউজ থেকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রবিন উইলিয়ামস বিশেষ একজন ছিলেন। আমাদের জীবনে ভিন গ্রহের প্রাণীর মতো তিনি এসেছিলেন এবং মানবীয় গুণাবলির সবকিছু দিয়ে তিনি আমাদের হূদয় ছুঁয়ে গেছেন। আমাদের হাসিয়েছেন তিনি। আমাদের কাঁদিয়েছেন তিনি।’

গত কয়েক বছরে অ্যালকোহল ও মাদক ছাড়ার চেষ্টা নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে রসিকতা করেছেন রবিন উইলিয়ামস। গত জুলাই মাসে তাঁকে পুনর্বাসন কেন্দ্রও ঘুরে আসতে হয়।

১৯৫১ সালের ২১ জুলাই শিকাগোয় জন্ম নেয়া রবিন উইলিয়ামসের অভিনয়ে হাতেখড়ি সেই স্কুল জীবনে, নাটকের ক্লাবে। পরে নিউইয়র্কের বিখ্যাত জুলিয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি। সত্তুরের দশকে টিভি শো ‘মর্ক অ্যান্ড মিন্ডি’তে এলিয়েন চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দর্শকদের কাছে রবিন উইলিয়ামস পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। মঞ্চে কমেডিয়ান হিসেবে দর্শকদের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রায় চার দশকের ক্যারিয়ারে অ্যাওয়াকেনিংস, দ্য ফিশার কিং, পপেই, হুক, আলাদিন, জুমানজি, দ্য বার্ডকেইজ, নাইট অ্যাট মিউজিয়ামের মতো বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। বহু ছবিতে দর্শকরা রবিন উইলিয়ামকে কমেডিয়ান হিসেবে দেখলেও গুড উইল হান্টিং ছবিতে তাঁকে দেখা যায় একজন মনোবিদের ভূমিকায়। ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৯৭ সালে তিনি অস্কার পান।

১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় ডেড পোয়েটস সোসাইটি। এই চলচ্চিত্রটি মন জয় করে সবার। এই ছবিতে রবিন উইলিয়ামসকে দেখা যায় একজন সাহিত্যের শিক্ষকের ভূমিকায়, যিনি শিক্ষকতার প্রথাগত ধারণা ভেঙে ফেলে ছাত্রদের নতুন চোখে জীবন দেখতে শেখান। অস্কার ছাড়াও দুইবার অ্যামি, চারবার গোল্ডেন গ্লোব, পাঁচবার গ্র্যামিসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন উইলিয়ামস।


রবিন উইলিয়ামসের সেরা ১০টি চলচ্চিত্র

তিন দশকের অভিনয় জীবনে জিন থেকে খুনি নানা ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন রবিন উইলিয়ামস। তবে তাঁর কয়েকটি ছবি দর্শকদের কাছে সব সময় মনে রাখার মতো। এই তালিকায় রয়েছে, গুড উইল হান্টিং (১৯৯৭), গুড মর্নিং ভিয়েতনাম (১৯৮৭), ডেড পোয়েটস সোসাইটি (১৯৮৯), আলাদিন (১৯৯২), মিসেস ডাউটফায়ার (১৯৯৩), ইনসমনিয়া (২০০২), হুক (১৯৯১), দ্য ফিশার কিং (১৯৯১), দ্য বার্ডকেজ (১৯৯৬) এবং জুমানজি (১৯৯৫)।


বিজ্ঞাপনের উইলিয়ামস

বহু আইকনিক ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে রবিনের কণ্ঠ। দ্য লিজেন্ড অব জেলডা, ইয়োর ভার্স, ইট অ্যা স্নিকার্স এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।