তারিনের দিনরাত্রি

তারিন। ছবি: কবির হোসেন
তারিন। ছবি: কবির হোসেন

তারিন। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। ছবির নাম কাজলের দিনরাত্রি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন সজল খালেদ। এবার ঈদে দর্শক ছবিটি দেখতে পাবেন চ্যানেল আইয়ে। সজল খালেদ নেই। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে গত ২১ মে তিনি অসীম শূন্যতায় পাড়ি জমান। তারিনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর ঈদের কাজ নিয়ে। রোববার সকালে, ধানমন্ডিতে তারিনের বাসায়, বসার ঘরে। শুরুতেই এল কাজলের দিনরাত্রি ছবির প্রসঙ্গ। তারিন থেমে গেলেন। তাঁর দৃষ্টি চলে গেছে দূরে কোথাও। আকাশের দিকে। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভাঙলেন। বললেন, ‘২১ মে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার ফোনে অসংখ্য এসএমএস এসেছে। অনেকেই ফোন করেছেন। সাধারণত এমনটা হয় না। দু-একটা এসএমএস পড়ে দুর্ঘটনার কথা জানতে পারি। সজল খালেদ একজন চমৎকার মেধাবী মানুষ ছিলেন। অনেক সম্ভাবনা ছিল তাঁর। নেপাল যাওয়ার আগে একদিন ফোন করলেন। তাঁর জন্য দোয়া করতে বললেন। কাজলের দিনরাত্রি ছবিটা আমার দেখা হয়নি। সজল খালেদ জানান, ফিরে এসে তিনি আমার জন্য ছবির একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন। সেই প্রদর্শনী আর হবে না।’ তারিন জানান, কাজলের দিনরাত্রি ছবিতে তিনি কাজ করতে রাজি হয়েছেন তিনটি কারণে—ছবিটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হবে, ছবিটির জন্য সরকার অনুদান দিয়েছে আর এই ছবির চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন। কাজলের দিনরাত্রি কি তারিনের প্রথম চলচ্চিত্র? না। ‘আমি প্রথম অভিনয় করেছিলাম ছোটবেলায়। ছবির নাম ছিল কাঁঠালবুড়ি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর অনুদান নিয়ে ছবিটি তৈরি করেন বাদল রহমান। এরপর আরেকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। নাম মনে নেই। ওই ছবিতে চম্পা আপার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম আমি।’ বললেন তারিন।

অভিনয় করা না হলেও এরপর চলচ্চিত্রে ডাবিং করেছেন তারিন। দুটি ছবিতে ভারতীয় শিল্পী প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদি আর প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জির হয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। একটি ছবিতে শাবনূরের কণ্ঠও দিয়েছেন।

এবার নাটক প্রসঙ্গ। তারিন জানান, বছর তিনেক হলো নিজেই একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। নাম এ নিউ ট্রি এন্টারটেইনমেন্ট প্রোডাকশন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এবার ঈদের জন্য দুটি টেলিছবি তৈরি হয়েছে। এটিএন বাংলার জন্য জুয়াড়ি। লিখেছেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম, পরিচালনা করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। আর এসএ টিভির জন্য সন্ধিক্ষণ। লিখেছেন পান্থ শাহরিয়ার, পরিচালনা করেছেন নিয়াজ মাহবুব।

সন্ধিক্ষণ টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন একই সময়ের তিনজন অভিনেত্রী—তারিন, অপি করিম ও রিচি সোলায়মান। আর তাঁদের সঙ্গে আছেন মাহফুজ আহমেদ।

আট বছর ধরে ঈদে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হচ্ছে তারিন ও তৌকীর আহমেদ অভিনীত নাটক। এবারও হবে। এবারের সিক্যুয়ালের নাম ডেথ অব এ বার্থডে। লিখেছেন মাসুম রেজা, পরিচালনা করেছেন আওলাদ হোসেন।

ঈদের আরও কয়েকটি কাজের কথা উল্লেখ করেন তারিন—বিপাশা হায়াতের লেখা ও তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় দুটি নাটকের কাজ করেছেন, জ্যোৎস্না ও তার জল টেলিছবিটি লিখেছেন তৌকীর আহমেদ ও পরিচালনা করছেন আরিফ খান, চয়নিকা চৌধুরীর বৃষ্টি এবং রং-তুলির আঁচড় লিখেছেন সাইফুল ইসলাম মান্নু।

তারিন এবার ‘মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার’ পেয়েছেন। টেলিছবির নাম সবুজ ভেলভেট। লিখেছেন আজাদ আবুল কালাম, পরিচালক রায়হান জুয়েল। তারিন বলেন, ‘এই টেলিছবির প্রায় পুরো শুটিং হয়েছে ট্রেনে। আলাদা একটা বগি নেওয়া হয়েছিল। আমরা শুটিং করতে করতে রংপুর গিয়েছি, আবার শুটিং করতে করতে ঢাকায় ফিরেছি। আমার বসার জায়গাটি ছিল জানালার পাশে। তাই কত যে ধুলা খেয়েছি, কত ধূলিকণা চোখে গেছে—তার কোনো হিসাব নেই।’

সবুজ ভেলভেট নিয়ে তারিন বলেন, ‘ট্রেনের ভেতরের বাস্তব চিত্রটা পাভেল ভাই চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন এই টেলিছবিতে। দেখে মনে হবে প্রতিটি চরিত্রই বাস্তব।’

এর আগে তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন আরও দুবার—২০০৬ সালে কথা ছিল অন্যরকম টেলিছবি আর ২০০৭ সালে তাঁর একক অভিনীত নাটক মায়ার জন্য। দুটি পুরস্কারই তিনি পেয়েছিলেন পাঠকদের ভোটে।

ছোট পর্দায় কাজ করছেন সেই ১৯৮৫ সাল থেকে। শুরুতেই পেয়েছেন ‘নতুন কুঁড়ি পুরস্কার’। নাচ, অভিনয় আর গল্প বলা বিভাগে সেরা হয়েছিলেন তিনি। নাচের কথা উঠতেই বলেন, ‘নাচের জন্য যে সময় দিতে হয়, তা আর হয়ে ওঠে না।’

কাল ২৬ জুলাই তারিনের জন্মদিন। গত বছর এই দিনে এসেছিল তাঁর গানের প্রথম অ্যালবাম আকাশ দেব কাকে। তারিন বলেন, ‘গান নিয়ে এখনই আরেকটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা নেই। তবে এর মধ্যে একটি ধারাবাহিক নাটকের শিরোনামসংগীত গেয়েছি। নাটকটির নাম স্বপ্নগুলো জোনাকপোকার মতো।

তারিন জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের একটি ঈদের নাটকের কাজ করবেন তিনি। কিছুক্ষণ পর পান্থপথে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের অফিসে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসতে হবে। তাই তারিনের সঙ্গে আড্ডা এখানেই শেষ করতে হলো।