শেষ হলো গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব

গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী দিনে গতকাল জাতীয় নাট্যশালার করিডরে ছিল পথ নাটক l ছবি: প্রথম আলো
গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী দিনে গতকাল জাতীয় নাট্যশালার করিডরে ছিল পথ নাটক l ছবি: প্রথম আলো

ঠিক সাত দিন আগে প্রদীপ জ্বালানো আর ঢোলের বাদ্যির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল যে উৎসব, গতকাল তার পর্দা নামে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে উৎসব আয়োজনের প্রত্যয় নিয়ে। মাঝের আট দিনে ছিল ১৫টি নাটক দেখার আনন্দ। শুধুই কি নাটক? বর্ণাঢ্য আয়োজনে ছিল নৃত্যনাট্য, গান, কবিতা আবৃত্তি; এমনকি যাত্রাপালাও। জাতীয়তার গণ্ডি পেরিয়ে এই উৎসব আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দেশের একাধিক নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে।
গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানটি ছিল নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। শেষ দিন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জাতীয় নাট্যশালা ও পরীক্ষণ থিয়েটারে দুটি নাটকের মঞ্চায়ন ছিল। দুটি নাটকেই উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি। এর আগে বিকেলে নাট্যশালার উৎসব প্রাঙ্গণের উন্মুক্ত মঞ্চে ছিল পথনাটক, গণসংগীত, দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা ও একক সংগীত পরিবেশনা।
নাটক শুরুর আগে জাতীয় নাট্যশালায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন অনীক নাট্যদলের (কলকাতা) সম্পাদক নাট্যজন অমলেশ চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাদের চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুল ইসলাম, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানজারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সমাপনী ধন্যবাদ জানান উৎসবের সদস্যসচিব আকতারুজ্জামান। উৎসবের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক মীর জাহিদ হাসানের সঞ্চালনে সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ।
উৎসবে জাতীয় নাট্যশালায় চারটি নাটক এবং পরীক্ষণ থিয়েটারে একটি নাটকে মিলনায়তন ছিল পূর্ণ। অন্য প্রদর্শনীগুলোতেও উল্লেখ করার মতো দর্শক হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় নাট্যশালায় তিনটি প্রদর্শনীর প্রতিটিতে ৬০ হাজার টাকার কাছাকাছি টিকিট বিক্রি হয়েছে। পরীক্ষণ থিয়েটারে একটি প্রদর্শনীতে ৩৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা এ মিলনায়তনে অতীতে খুব কম হয়েছে বলে দাবি করেন গোলাম কুদ্দুছ। টিকিট বিক্রির অন্য তথ্যগুলো প্রথম আলোকে তিনি দিয়েছেন। এ বিবেচনায় এবারের উৎসবকে সফল বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
উৎসবে আগত অতিথি পশ্চিমবঙ্গের অমলেশ চক্রবর্তী বলেন, একটি উৎসব মানে অনেক মানুষের মিলন, যেখানে মূল ভূমিকা রাখেন মঞ্চের কলাকুশলী ও দর্শক। গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে এই উভয় শ্রেণির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটেছে।
এবারের উৎসব সম্পর্কে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের কাছে। তিনি বলেন, ‘দুই বাংলার অভিন্ন সংস্কৃতি, অভিন্ন ভাষা। হয়তো রাজনৈতিক কারণে একটি বিভাজন রেখা তৈরি হয়েছে, কিন্তু সংস্কৃতি ও নাটক এ বিভাজন রেখাকে অতিক্রম করে। সেটি অতীতের মতো এই উৎসবেও ঘটে গেল। আগামী দিনেও ঘটবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে, সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে একটি মানবিক সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে।’
উৎসবের শিরোনাম নিয়ে ভিন্নমত জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নাট্য উৎসবের পাশাপাশি সংস্কৃতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নাটক তো আর সংস্কৃতির বাইরে নয়! গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব ঝুনা চৌধুরী উৎসবটিকে স্তিমিত হওয়া সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণের সঞ্চার হিসেবে মন্তব্য করলেন। বললেন, সংস্কৃতিকর্মীদের ঐক্যে এ ধরনের উৎসব ভূমিকা রাখে প্রবলভাবে।
সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল দুই বাংলার দুই নাটকের প্রদর্শনী। নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক প্রমিথিউস। আনন জামান রচিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন মোস্তাফিজুর নুর। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় কলকাতার অনীক থিয়েটারের প্রযোজনায় একুশের গল্প। অমলেশ চক্রবর্তীর লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মলয় বিশ্বাস।
এ ছাড়া বিকেলে ছিল গান-কবিতা ও পথনাটকে সাজানো উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এই আয়োজনে অবয়ব নাট্যদল উপস্থাপন করে তাদের নতুন প্রযোজনা গডফাদার। ‘ঝড়ের বার্তা শোনো’ শিরোনামে ছিল স্বরশ্রুতির আবৃত্তি প্রযোজনা। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনায় ছিল ‘কারার ওই লৌহ কপাট’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’সহ তিনটি গান। একক কণ্ঠে লালনের গান শোনান সুরাইয়া পারভীন।