পিপীলিকার পাখা গজায়...

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: আনন্দ
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: আনন্দ

পিঁপড়াবিদ্যা দেখতে কী লাগে?
প্রশ্নটি শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন প্রথমে। নিকেতনে ছবিয়ালের কার্যালয়ের দেয়ালে সেঁটে থাকা পিঁপড়াবিদ্যা ছবির পোস্টারের দিকে তাকালেন একঝলক। বেশ সময় নিয়ে বললেন, ‘পিঁপড়াবিদ্যা দেখতে টিকিটের টাকা আর ইচ্ছা লাগে।’
একবাক্যে উত্তর শেষ। আমরা ভাবছি, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে আর কী কী প্রশ্ন করা যায়! তাঁর পঞ্চম ছবি পিঁপড়াবিদ্যা ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে কাল শুক্রবার। তাই ছবিটি নিয়ে এখন চলছে তাঁর শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর মধ্যেই ছবির নায়ক নূর ইমরান মিঠুকে নিয়ে ‘হিরো হতে কী লাগে’ শিরোনামে ফান ভিডিও এবং ছবির ট্রেলার ছেড়েছেন ফারুকী।
রোববার সন্ধ্যায় ছবিয়ালের কার্যালয়ে যখন ফারুকীর সঙ্গে দেখা হলো, তিনি তখন পুরোদস্তুর ‘গ্র্যান্ড মাস্টার’—ছবির নায়ক নূর ইমরান মিঠুর সঙ্গে খোশমেজাজে দাবা খেলছেন। আর আমরা দেখছি, দেয়ালে থাকা পিঁপড়াবিদ্যার পোস্টারে গোটা গোটা হরফে লেখা পিঁপড়াবিদ্যা আগাগোড়া মজায় ঠাসা এবং সম্ভবত বেদনায়ও।’
পিঁপড়াবিদ্যা আমাকে ডাকছে

কী এমন বেদনা আছে এ ছবিতে? প্রশ্নের সুরাহা মিলবে ছবিটি দেখার পর। আপাতত তাই অন্য প্রসঙ্গে ডালপালা মেলা যাক। বললাম, ছবি মুক্তির আগেই ফান ভিডিওটি ফেসবুকে ছাড়লেন কেন?
‘নায়ক সম্পর্কে আমাদের দেশে যে রকম ছক বা ধারণা প্রচলিত—নায়ককে হতে হবে সুদর্শন, সাহসী, বলবান। কিন্তু আমার ছবিগুলোর নায়কেরা এ ছকে পড়ে না। তারা পাঁচমিশালি—সাহসী, ভীরু, এমনকি কাপুরুষও।
এটি অবশ্য দার্শনিক কারণ। প্রধান কারণ হলো, এ ছবিতে নায়ক যেহেতু নতুন, তাই ভাবলাম নতুন এই ছেলের পায়ে নায়কের জুতা পরানোর উপায় কী; নায়ককে পরিচিত করানোর জন্যই ছেড়েছি এ ভিডিও।’ প্রসঙ্গটির ইতি হতে পারত এখানেই, কিন্তু সরস মন্তব্যের সুযোগ থাকলে ফারুকী তো সেটি আর ছাড়বেন না, ‘নিজে সুদর্শন নই তো তাই সুদর্শন নায়কদের প্রতি আমার পক্ষপাত কম...হা হা হা।’
কথা শেষে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে তাঁর হাসি।
পিঁপড়াবিদ্যায় এমন কী আছে, যা আপনার অন্য ছবিতে নেই?
‘কোনো সৃজনশীল মানুষই এক রাস্তায় দুবার গমন করে না, আমিও করিনি। এ ছবিতে দৃশ্যের ভাঁজে ভাঁজে অনেক কথা রেখে দিয়েছি আমি।’
‘সেটি কেমন?’ প্রশ্ন করে এরপর নিজেই দিলেন উত্তর, ‘এ ছবিতে যা আমি বলেছি এবং যে কথা বলিনি, এই দুই মিলিয়ে দর্শকের মাথায় তৈরি হতে পারে নতুন আরেকটি ছবি।’
দর্শকের ভেতর সেই ‘নতুন’ ছবি তৈরি হতে গেলে পিঁপড়াবিদ্যা দেখতে তো হবে। জানতে হবে মুক্তির আগেই কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা পেয়েছে ছবিটি। কিন্তু আচমকা কেউ যদি প্রশ্ন করেন, ছবির নাম কেন পিঁপড়াবিদ্যা?
প্রশ্নের উত্তরে ফারুকী যে কথা বলেছেন এবার সেই কথা বলি, ‘স্নাতকোত্তর পাসের পর একজন তরুণ আমাদের সমাজে যেভাবে সংগ্রাম করে, সমাজ তাকে যে ইঁদুর দৌড়ে ঠেলে দেয়, ছবিতে আমি দেখাতে চেয়েছি সেই কাহিনি। পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে...আমার এ ছবিতে এক পিপীলিকা পাখা গজিয়ে ইগল হতে চেয়েছিল। লোভে পড়েছিল সে।’
পিঁপড়াবিদ্যা র শুটিং হয়েছে ঢাকা ও কক্সবাজারে। শুটিং প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিচালকের মুখে আফসোস, ‘আহারে, মুকিত জাকারিয়ার সেঞ্চুরিটা আর হলো না, নার্ভাস নাইনটি নাইনেই আউট হলেন তিনি!’
ঘটনা কী? ঘটনা হলো, ছবিতে মুকিত জাকারিয়ার একটি দৃশ্য ৯৯ বারে গিয়ে ‘ওকে’ হয়েছে। ফলে মুকিত আর পাননি সেঞ্চুরির স্বাদ।
না, ছবির কাহিনি এখনই ফাঁস করবেন না ফারুকী। কেবল বললেন, ‘এ ছবিতে আছে এমএলএম কোম্পানিতে চাকরি করা এক তরুণের গল্প। আছে লিমা নামে এক চিত্রনায়িকার কথাও। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের শিনা চৌহান।’
পিঁপড়াবিদ্যা থেকে কোন বিদ্যা অর্জন করতে পারেন দর্শক? ফারুকীকে শেষ প্রশ্ন।
‘পিঁপড়াবিদ্যায় যে বিদ্যা দেখানো হয়েছে, সেই বিদ্যা পরিত্যাজ্য’!—ফারুকী বলছেন কথাটি, আর আমরা ভাবছি, কী বলছেন তিনি এসব! এরপর খোলাসা করলেন নিজেই, ‘পিঁপড়াবিদ্যায় মানুষের যে লোভের কথা আছে, সেই লোভ পরিত্যাজ্য। পিপীলিকার পাখা গজায়...।’