তুষ্টির গল্প

তুষ্টি, ছবি: আনন্দ
তুষ্টি, ছবি: আনন্দ

‘আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি বাবা। আমি আহসানকে ডিভোর্স দেব। দিস ইজ মাই ফাইনাল ডিসিশন।’ এমন কঠিন সিদ্ধান্তের কথা বাবাকে বললেন নীলা। পরিচালক বলতে যাবেন, ‘ওকে ডান’—হঠাৎ পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে গেল, বিদ্যুৎ-বিভ্রাট! শুটিং বাড়ি মন্দিরায় এমন একটা দৃশ্যে বাবা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন মেয়ে নীলা।
আমরা এখন এই নীলা চরিত্রের অভিনেত্রী শামীমা ইসলামের সঙ্গে আড্ডা দেব। শামীমা ইসলামকে চেনা গেল না, না? এবার তাঁর ডাকনামটি তুষ্টি—এ নামেই তিনি পরিচিত। যখনকার কথা বলছি, তখন ঈদের ঠিক আগ মুহূর্ত—কাজের খুব চাপ। তাই ঠিক হলো, শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে তুষ্টির সঙ্গে চলবে আমাদের আড্ডা। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর জীবন্ত করে আবারও দৃশ্য ধারণ করা হবে—পরিচালকের মনোভাব এমনই। ফলে তুষ্টির জন্য আমাদের অপেক্ষা আর শেষ হয় না। কিন্তু না, এক ইউনিটের কর্মী এসে জানালেন, জেনারেটর কাজ করছে না।
বিদ্যুৎ না থাকায় এবার তুষ্টির সঙ্গে শুরু হলো আমাদের কথোপকথন।
‘সরি! অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম।’ বসতে বসতে বললেন তুষ্টি। তারপর বললেন, ‘এখন কাজের চাপ বেশি। কাল সকালে উঠে আবার দৌড়াতে হবে হোতাপাড়া।’
তাঁর কথার সূত্র ধরে চলে এল একটি সহজ প্রশ্ন—কোন কোন নাটক নিয়ে ব্যস্ততা এখন? ‘ঠিকানা কেউ জানে না, মায়া, হ্যালো ইন্সপেক্টর, জিরো পয়েন্ট, তিন তালা তিন চাবিসহ বেশ কটি নাটকে অভিনয় করছি।’
একসঙ্গে একাধিক নাটকে অভিনয়, একাধিক ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র—চরিত্রের ভিন্নতা আনতে অসুবিধা হয় না?
‘তেমন একটা সমস্য হয় না। মঞ্চে তো একাধিক চরিত্র করি। তাই এখানে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে। তা ছাড়া শুটিংয়ের আগে নিজের সংলাপগুলো রপ্ত করে চরিত্রটির জায়গাটা ধরার চেষ্টা করি।’
আড্ডার এ পর্যায়ে গল্প মোড় নেয় পেছনে।

শিকড়ের সন্ধানে
বয়স তখন পাঁচ বছর হবে। পিপলস লিটল থিয়েটারে (পিএলটি) যোগ দিলেন তুষ্টি। পিপলস লিটল থিয়েটারের হয়ে টানা ১২ বছর অভিনয় করেছেন। তারপর পিএলটির মূল সংগঠন লোকনাট্যদলে কাজ শুরু করেন তিনি। দলে কঞ্জুস, সিদ্ধিদাতা, তপস্বী ও তরঙ্গিনী এবং পদ্মা নদীর মাঝি নাটকে অভিনয় করেন। এখনো তিনি কঞ্জুস নাটকের নিয়মিত অভিনেত্রী।

তুষ্টির কথায় এবার কিছুটা গাম্ভীর্য, থিয়েটারের প্রতি প্রেম। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে থিয়েটারের সঙ্গে যে প্রেম তৈরি হয়েছে, তা ভাঙবে না। টেলিভিশনের কাজের ফাঁকে থিয়েটারের জন্য আলাদা সময় সব সময়ই থাকবে।’

স্বপ্ন দ্যাখো মন
যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। মঞ্চ থেকে তাঁর মিডিয়ার অন্য সব শাখায় ছড়িয়ে পড়ার গল্পও উঠে এল কথায় কথায়। প্রথমে লাক্সের একটা ছোট বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার মাধ্যমে মিডিয়ায় পা রাখা। এরপর করলেন ইস্পাহানি মির্জাপুর চা-এর বিজ্ঞাপন। সময়টা ২০০৮ সাল। ডাক এল সালাহউদ্দীন লাভলুর ধারাবাহিক ভবের হাট নাটকে অভিনয়ের জন্য। তুষ্টি বললেন, ‘প্রথম নাটকে অভিনয় করি। কাজটি অনেক ভালো হয়েছিল। নাটকটি প্রচারের পর অভিনয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা সহজ হয়েছে।’

এই আমির আবরণ
তবে মিডিয়ায় তাঁর টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তুষ্টি—হরলিকেসর বিজ্ঞাপন। ‘হরলিক্স!!’—বিস্মিত হওয়ার অভিব্যক্তিতে তাঁর এই সংলাপ টেলিভিশন পর্দায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। এ নিয়ে তুষ্টির কথা হলো, ‘সত্যিই হরলিকেসর বিজ্ঞাপনটিতে খুব সাড়া পেয়েছি আমি। অনেকেই প্রশংসা করেছেন।’
সেই প্রশংসা মাথায় নিয়ে এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বিজ্ঞাপনের মডেল থেকে অভিনেত্রী হিসেবে টিভি নাটকে তাঁর অবস্থান এখন বেশ ভালো।
মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক, বিজ্ঞাপন—সবই তো হলো। এখন আর কী বাকি থাকে?
‘কেন, চলচ্চিত্র?’ এক লহমায় উত্তরটি দিলেন তুষ্টি। এরপর জানালেন, লাল সবুজ, স্বপ্নডানায় ও নন্দিত নরকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর কাছে প্রশ্ন, শেষমেশ অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমে হাঁটবেন তবে?
‘মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন—সব জায়গায়ই তো অভিনয় করতে হয়। সুতরাং আমি একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চাই।’ তুষ্টির ঝটপট জবাব।
ওদিকে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। আগের দৃশ্যটি ধারণের তাগিদ দিতে তখন তুষ্টির কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন সহকারী পরিচালক। আবারও অ্যাকশন... কাট...। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে তাঁকে।