ক্যানভাসে সুরের প্রলেপ

জাপানের স্বনামধন্য শিল্পী সুমিয়ে কানোকোর (বাঁয়ে) বাদ্যযন্ত্রের তালে গতকাল ছবি আঁকেন কালিদাস কর্মকার l ছবি: প্রথম আলো
জাপানের স্বনামধন্য শিল্পী সুমিয়ে কানোকোর (বাঁয়ে) বাদ্যযন্ত্রের তালে গতকাল ছবি আঁকেন কালিদাস কর্মকার l ছবি: প্রথম আলো

আয়োজনটি অন্য রকম। গান কিংবা বাদ্যের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন হলেও এর সঙ্গে ছবি আঁকার বিষয়টি কি আগে কখনো মঞ্চে দেখা গেছে? গতকাল বুধবার শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও থিয়েটারে এমন ঘটনাই ঘটল। জাপানের স্বনামধন্য শিল্পী সুমিয়ে কানোকো বাজালেন, বাজনার তালে তালে আঁকলেন বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী কালিদাস কর্মকার। এক মঞ্চে দুই শিল্পের এ সম্মিলন দর্শকেরা রীতিমতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখলেন। শুনলেন। উপভোগ করলেন।
শুরুতে বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের প্রথম সচিব অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ইয়াসুহারু সিনথো শিল্পীর সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন। মঞ্চের মধ্যে জাপানের স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র কোতো আর সামসে রাখা, অন্য পাশে বিশাল একটি ক্যানভাস। শিল্পী সুমিয়ে কানোকো শুরু করলেন বাদন। বাদনের তালের সঙ্গে ক্যানভাস রং-রেখায় ভরিয়ে দেন শিল্পী কালিদাস কর্মকার। সুরে সুরে হারিয়ে যান তিনি। নিজের ভেতরে সুরটি নিয়ে সেই সুর নিজের মতো করে মেলে ধরেন ক্যানভাসে। চলতে থাকে সংগীত আর চিত্রশিল্পের অপূর্ব মিশেল। একসময় সুমিয়ে কানোকো মঞ্চে ডাকেন সহশিল্পী মাইয়া থাকাদকে। তিনিও মিশে যান এই আয়োজনে। এভাবে চলতে থাকে বেশ খানিকটা সময়। ভরে ওঠে ক্যানভাস।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল জাপানের শিল্পীর সঙ্গে বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্রীশিল্পীদের সেতার, সরোদ আর তবলার ফিউশন। দুই দেশের বাদ্যযন্ত্র আর শিল্পীর আঁকাআঁকিতে দারুণ জমে ওঠে আয়োজনটি।
বেতারের হীরকজয়ন্তীর জমজমাট আয়োজন
প্রতিষ্ঠার সাফল্যময় ৭৫ বছর অতিক্রম করল জাতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার। হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে চলছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে চার দিনের বর্ণাঢ্য নানা অনুষ্ঠান। সাধারণের জন্য উন্মুক্ত বৈচিত্র্যে ভরপুর এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বেতার ভবনে। নাচ-গান-কবিতা কিংবা নাটকে একাত্তরের স্মৃতিজাগানিয়া নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সাজানো চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিন ছিল বুধবার। আর এদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয় স্বাধীনতাসংগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে। সকালে সেমিনার শেষে বেলা তিনটায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে প্রেরণাদায়ী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। বিকেলে সুর তোলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বিখ্যাত সব গান গেয়ে বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করা সেই শিল্পীরা। পরিবেশিত হয় সেই জল্লাদের দরবার নাটকের অংশবিশেষ। পাঠ করা হয় এম আর আখতার মুকুলের ঐতিহাসিক ‘চরমপত্র’। গীতিনৃত্যনাট্যের মনভরানো আয়োজন থেকে শুরু করে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুরমাধুর্য কিংবা কবিতার কাব্যিক উচ্চারণে জমে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
সকালে অনুষ্ঠিত ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে আমাদের বেতার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিকেলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব শুরু হয় সমবেত যন্ত্রসংগীতের সুরের মূর্ছনায়। বাদ্যযন্ত্রের আশ্রয়ে ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’ গানে সুর তোলেন বেতারের ঢাকার শিল্পীরা। লোকজ বাংলার সুরাশ্রয়ী জারি গান পরিবেশন করেন কুদ্দুস বয়াতি ও তাঁর দল। বাজানো হয় ‘বজ্রকণ্ঠ’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্লেব্যাক। কবিগানের পরিবেশনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বেতারের কল্পতরু ভট্টাচার্য এবং কংসরাজ দত্ত ও তাঁদের দল। বাংলা কাওয়ালি গেয়ে আয়োজনে বৈচিত্র্য ছড়ান চট্টগ্রামের বেতারের আবদুল মান্নান ও তাঁর সঙ্গীরা। আঞ্চলিক গান শোনান চট্টগ্রাম বেতারের কল্যাণী ঘোষ ও সঞ্জিত আচার্য। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জারিগান পরিবেশন করেন বরিশাল বেতারের জলিল বয়াতি, রেখা বয়াতি ও তাঁদের সঙ্গীরা।
আজ শেষ হবে বাংলাদেশ বেতারের হীরকজয়ন্তীর চার দিনের অনুষ্ঠান। জাতীয় বেতার ভবন চত্বরে সকাল ১০টায় সমবেত অর্কেস্ট্রা পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হবে অনুষ্ঠানসূচি। নানা বর্ণিল পরিবেশনার মধ্যে থাকবে নাটিকা মানিক চাঁদের কেচ্ছা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জারিগান, ত্রিপুরা ও মারমা গান, দোতরার ফোক কম্পোজিশনসহ নানা আয়োজন। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আলোচনা শেষে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের গান পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হবে এই অনুষ্ঠান।