'জিরো ডিগ্রী'র খেল

মাহফুজ আহমেদ ও জয়া আহসান ছবি: খালেদ সরকার
মাহফুজ আহমেদ ও জয়া আহসান ছবি: খালেদ সরকার

শুরুতেই একটা ফ্লাশব্যাক। চলুন আমরা এক পলকের জন্য পেছনে যাই। ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় ভরসন্ধ্যা। একটি রিকশা ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। তাদের আগ্রহের বিষয় রিকশার নারী আরোহী। তাঁর মুখের নেকাব টানা। আলো-আঁধারির রাস্তায় তাঁর চেহারা পুরোপুরি দেখা যায় না। রহস্যের জট খুলল অচিরেই। নেকাবের আড়ালে অভিনেত্রী জয়া আহসান! সেদিন কারওয়ান বাজারের পথ চলতি মানুষের জন্য আরও বড় চমক অপেক্ষা করছিল। খানিক বাদেই জয়া আহসানকে তাঁরা দেখেছেন প্রাণসংহারিণী রূপে। হাতে উন্মুক্ত খঞ্জর। দুরন্ত গতিতে শিকারের পিছু ধাওয়া করছেন জয়া। 
জিরো ডিগ্রীর আড্ডায় বসেছি জয়া আর মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে। শুরুতেই জয়াকে মাস চারেক আগের সেই দৃশ্যটি মনে করিয়ে দিই। জয়া জানালেন, ছবির অন্যতম একটি ‘ক্লাইমেক্স সিন’ ধারণ হচ্ছিল সেদিন। তবে এর চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য জয়া করেছেন জিরো ডিগ্রীর জন্য। যে দৃশ্যটি করতে গিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তাঁকে। জয়া বলছিলেন, ‘ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ার একটা দৃশ্য ছিল। ট্রেনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাফ দিয়েছিলাম। কিন্তু টাইমিংয়ে গন্ডগোল হয়ে যায়।’
এই ভুল টাইমিংয়ের মাশুল তাঁকে গুণতে হয়েছে কড়ায়-গন্ডায়। পেশিতে টান পড়ায় মাসখানেক আর শুটিংই করতে পারেননি।
টেলিভিশনে দ্যুতি ছড়িয়ে জয়া আহসান পা রেখেছেন বড় পর্দাতেও। এখন দুই বাংলাতেই সমান ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। গেরিলা দিয়ে করেছিলেন দুর্দান্ত এক শুরু। কলকাতার ছবি আবর্ত ছিল সমালোচক মহলে উচ্চ প্রশংসিত। জিরো ডিগ্রী দিয়ে জয়ার এখন আরও একবার বড় পর্দায় ঝড় তোলার পালা। সেই ঝড়ের পূর্বাভাস হয়তো আমরা পাচ্ছি। চূড়ান্ত ফয়সালা মিলবে কাল শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে।

জিেরা ডিগ্রী ছবিতে জয়া আহসান
জিেরা ডিগ্রী ছবিতে জয়া আহসান

২.
তার বাবা মানুষটা আসলে দেখতে কেমন? গত বছরখানেক এ নিয়ে বিরাট ধাঁধায় পড়ে গেছে আরাধ্য। লম্বা-চুল দাড়ি আর পোড় খাওয়া চেহারা? নাকি ন্যাড়া মাথা, বিপজ্জনক চেহারার লোকটা? অথবা ঝকমকে ক্লিন শেভড তরুণ। বাবার কোন রূপটা আসল? কেবল অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের আড়াই বছর বয়সী কন্যা আরাধ্য নয়। জিরো ডিগ্রী ছবিতে মাহফুজের লুক বা চেহারা চমক হয়ে আসবে দর্শকদের জন্যও।
‘অনেকগুলো ডাইমেনশন বা মাত্রা থাকছে আমার চরিত্রটার। এটা এমন চরিত্র যার জন্য একজন অভিনেতাকে সারা জীবন অপেক্ষা করতে হয়। আমার মনে হয় সে রকম অসাধারণ একটি চরিত্র অনিমেষ (আইচ) আমাকে দিয়েছে।’
কী সেই চরিত্র?
জবাবে মাহফুজ থামলেন। তারপর মুখ খুললেন ভেবেচিন্তে,
‘ছবিতে আমার চরিত্রের নাম অমিত। অমিত একজন অসম্ভব ভালো বাবা। দারুণ দায়িত্বশীল একজন স্বামী।’
তারপর?
‘তারপর, ভয়ংকর এক ঘটনা পুরোপুরি পাল্টে দেয় মানুষটাকে।’
তারপর? 

এবারে মাহফুজ আহমেদ রহস্যের হাসি হাসলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে উন্মোচিত হতে চলেছে জিরো ডিগ্রী। পরের সপ্তাহে যাবে ষাটের বেশি হলে। ছবির মর্মবাণী ‘অপ্রত্যাশিত মোচড়’। জিরো ডিগ্রী ছবির সমস্ত রহস্য, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার জট খুলবে কেবল কাল থেকে দেশের সিনেমা হলগুলোতে। মাহফুজ আগেভাগে গল্পের উত্তেজনা মাটি করতে চাইবেন না, এই তো স্বাভাবিক।
তার চেয়ে বরং আবার জয়ার কাছে যাই। অনিমেষ আইচ সেই নির্মাতা, যিনি টেলিভিশনে জয়া আহসানের জয়যাত্রার অন্যতম রূপকার। গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প কিংবা ফেরার পথ নেই-এর মতো সাড়া জাগানো নাটক আছে এ দুজনের ঝুলিতে। সেই জুটি থেকে প্রত্যাশা তো থাকবেই। জয়া কী বলেন?
‘অনিমেষ অবশ্যই বড় নির্মাতা। সঙ্গে আমি এটাও মনে করি নাটক আর সিনেমার চ্যালেঞ্জটা কিন্তু আলাদা।’
টানটান ট্রেলার, সঙ্গে জেমসের জমজমাট গান। জয়া-মাহফুজের সঙ্গে এই ছবির আরেক তুরুপের তাস রুহি। ছবিতে তাঁর চরিত্রটির নাম নিরা। মাহফুজের মতোই সেই চরিত্রটির নানা মাত্রা।
সব মিলিয়ে এরই মধ্যে শুরুর খেলাটা জমিয়ে ফেলেছে জিরো ডিগ্রী। আর ছবির অন্যতম প্রযোজক ও অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ তো চ্যালেঞ্জটা দিয়েই রেখেছেন, ‘ভালোবাসা, ঘৃণা আর প্রতিশোধের গল্প নিয়ে জিরো ডিগ্রী। এই ছবি প্রমাণ করবে সুপারহিট তারকা নয়। গল্প আর অভিনব নির্মাণই ছবির আসল সম্পদ। এই ছবি একবার যে দেখতে বসবে, তাকে পুরোটা দেখতে হবে।’