বেশির ভাগ নারী চরিত্র উপস্থাপন হয় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে গতকাল ‘বাংলা সাহিত্যে নারী’ বিষয়ক একক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ষ প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে গতকাল ‘বাংলা সাহিত্যে নারী’ বিষয়ক একক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ষ প্রথম আলো

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশির ভাগ নারী চরিত্রগুলো উপস্থাপন করা হয়। নারী লেখক নারীর দৃষ্টিতে লিখলে সাহিত্যে নারীকে অন্যভাবে পাওয়া যাবে। এতে সাহিত্যের অসম্পূর্ণতা দূর হবে। নারী সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে।’
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ‘বাংলা সাহিত্যে নারী’বিষয়ক একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিভাগের ১০৭ নম্বর কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিভাগের শ্রেণীকক্ষে এই একক বক্তৃতার আয়োজন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘নারী লেখকদের লেখায় সমাজের নিয়ম ভাঙার ব্যাপার থাকে। এভাবে সমাজ সংশোধিত হয়। তবে নারী যদি পুরুষতান্ত্রিকতার আদর্শে লেখেন, তাহলে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।’ নারী লেখকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি পুরুষ লেখকদেরও নারীর দৃষ্টিতে নারী চরিত্র চিত্রণের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর লেখা বাঙালি নারী সাহিত্যে ও সমাজে শীর্ষক বইসহ বিভিন্ন গ্রন্থের উদ্ধৃতি টেনে শ্রোতাদের বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরিয়ে আনেন। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ বাংলা সাহিত্যে নারীর দেহ, রূপ, নারীকে পদ্মিনী, হস্তিনী, কুমারী, সধবা, বিধবা, বারবনিতাসহ নানা বর্গে ভাগ করা হলেও এর বাইরেও যে নারীর পরিচয় আছে, তা তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে নারীর চরিত্র চিত্রণে অন্যান্য দেশের অবস্থাও প্রায় একই।’
আনিসুজ্জামান বলেন, হিন্দুপ্রধান সমাজে স্মৃতিশাস্ত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বাংলা সাহিত্যে আদর্শ নারী হিসেবে সীতার পাশাপাশি সীতার বিপরীত রাধা চরিত্রও প্রাধান্য পেয়েছে। বিভিন্ন তত্ত্ব লোকমুখে প্রচলিত হওয়ার পর তা সাহিত্যে স্থান পায়। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের বিষয়গুলো সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। তেমনিভাবে নারীরা দধি বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারও প্রমাণ মেলে বাংলা সাহিত্যে। সমাজ সামনের দিকে এগিয়েছে, সাহিত্যেও নারী বিভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।’ তিনি পুরোনো কালের নারীর লেখা আত্মকাহিনিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেন।
একক বক্তৃতা শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আনিসুজ্জামান। উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার নাজমা চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী বলতেই নারীর প্রতি যে অত্যাচার তা প্রাধান্য পেয়েছে। কিছু লেখক শরণার্থী নারী, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী নারীর বাস্তব চরিত্র সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন।’
একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার নাজমা চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান তানিয়া হক আনিসুজ্জামানের জীবনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষক নাজমুন্নেসা মাহতাব, মালেকা বেগম, হেলাল হোসেন, সাবিহা ইয়াসমিন, অদিতি সবুর, মাইনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।